তাইজুল-নাইমের দৃঢ়তায় তিনশ ছাড়িয়ে স্বস্তিতে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ৪:৪৫ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২২, ২০১৮

তাইজুল-নাইমের দৃঢ়তায় তিনশ ছাড়িয়ে স্বস্তিতে বাংলাদেশ

ক্রীড়াকণ্ঠ ডেস্ক
তাইজুল ইসলাম আর নাইম হাসানের দৃঢ়তায় খেলায় ফিরল বাংলাদেশ। মুমিনুলের বিদায়ের পর হঠাৎ যে ছন্দপতন হয়েছিল বাংলাদেশ ইনিংসে সেখান থেকে বাংলাদেশকে স্বস্তিদায়ক অবস্থায় এনে দেন ৯ম উইকেটে এই জুটি। প্রথম দিনের খেলা শেষে বাংলাদেশের স্কোর ৮ উইকেটে ৩১৫ রান। তাইজুল ৩২ আর নাইম ২৪ রান নিয়ে ক্রিজে রয়েছেন। এই জুটি এখন পর্যন্ত মূল্যবান ৫৬ রান যোগ করেছে।
মুমিনুল ১২০ রানে আউটের পরই শুরু হয় বিপর্যয়। একের পর এক ব্যাটসম্যান সাজঘরে ফিরে যেতে থাকলে চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ।

এর আগে চা-বিরতি পর্যন্ত ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি ছিল বাংলাদেশের হাতে। চা-বিরতি পর্যন্ত বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান মুমিনুল হকের সেঞ্চুরিতে ৩ উইকেটে ২১৬ রান সংগ্রহ করে টাইগাররা।
টেস্ট ক্যারিয়ারের অষ্টম সেঞ্চুরি তুলে ১১৬ রানে অপরাজিত আছেন মমিনুল। ১৬২ বল মোকাবেলা করে ১০টি চার ও ১টি ছক্কায় নিজের ইনিংসটি সাজান মমিনুল। এছাড়া অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ২৭ রানে অপরাজিত আছেন।
এর আগে ওপেনার সৌম্য সরকার শূন্য, ইমরুল কায়েস ৪৪ ও মোহাম্মদ মিথুন ২০ রান করে আউট হন।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং-এর সিদ্বান্ত নেয় বাংলাদেশ।

তিনশ ছাড়িয়ে স্বস্তিতে বাংলাদেশ :

ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক ব্রেথওয়েটের শর্ট বল অ্যাঙ্গেল ব্যাটে খেলে পয়েন্টে এক রান তাইজুল ইসলামের। দিনের শেষ বল।

দিনের ৯০ ওভারের কোটা পূরণে তখন ২ ওভার বাকি। কিন্তু আলোক স্বল্পতায় খেলা এগিয়ে নেননি দুই আম্পায়ার। হাসিমুখে তাইজুল ফিরলেন সাজঘরে। সঙ্গী বাংলাদেশের ৯৩তম টেস্ট ক্যাপ পাওয়া নাঈম হাসান। নবম উইকেটে দুজনের অবিচ্ছিন্ন ৫৬ রানের জুটিতে বাংলাদেশ শিবিরে ফিরল স্বাচ্ছন্দ। চট্টগ্রাম টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপে প্রথম দিন শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৮ উইকেটে ৩১৫ রান।

দিনের শুরুটা ছিল অস্বস্তিকর। মাঝে একক আধিপত্য। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা মুমিনুলের ব্যাট থেকে আরেকটি সেঞ্চুরি। রানের পাহাড় গড়ার পথে এক-পা দু-পা করে এগিয়ে যাচ্ছিল বাংলাদেশ। হঠাৎ এক পশলা উইকেট বৃষ্টি। গ্যাব্রিয়েল তোপে এলোমেলো বাংলাদেশ। কিন্তু টেল এন্ডাররা হাল ছাড়লেন না। তাইজুলের ৩২ ও নাঈম হাসানের ২৪ রানে বাংলাদেশ স্বপ্ন দেখছে বড় পুঁজির।

দ্বিতীয় দফায় অধিনায়কত্ব পাওয়ার পর দেশের মাটিতে সাকিবের প্রথম ম্যাচ। টস জিতে অধিনায়ক কিছুটা হলেও দলকে এগিয়ে নেন। কিন্তু শুরুটাতো ভয়ংকর। প্রথম ওভারেই কেমার রোচের হাল্কা সুইং করা ডেলিভারিতে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন সৌম্য। একই বোলারকে ৩ রানে দ্বিতীয় স্লিপে ক্যাচ ইমরুলের। কিন্তু রোস্টন চেজ বাঁচিয়ে দেন বাংলাদেশকে। নয়তো পঞ্চম ওভারেই স্কোরবোর্ডে ২০ রানে উদ্বোধনী দুই ব্যাটসম্যান সাজঘরে ফিরতে পারত।

ইনিংসের শুরুতে জীবন পেয়ে কোথায় একটু দায়িত্বশীল হবেন ইমরুল, মনোযোগ বাড়াবেন, সেখানে খেললেন এলোপাথাড়ি সব শট। উইকেটে হাঁসফাঁস করতে করতে ১৬ রানে আবার জীবন পান। বাঁহাতি স্পিনার ওয়ারিক্যানকে তুলে মারতে গিয়ে ডিপ স্কয়ারে গ্যাব্রিয়েলকে ক্যাচ দেন। সফরকারীরা যখন আনন্দে আত্মহারা তখন আম্পায়ার জানালেন নো বল।

দ্বিতীয় জীবন পাওয়ার পর ইমরুল যেন আরও বেপরোয়া! ‘যেমন খুশি তেমন সাজো’র মতো ‘যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে রান কর’ পরিকল্পনাতে এগুলেন। বারবার বলের লাইন মিস করছিলেন, টাইমিংয়ে ছিল গড়বড় আর আত্মবিশ্বাস ছিল তলানিতে। রান এলো ঠিকই কিন্তু ব্যাটিংয়ের সৌন্দর্য ছিল না একটুও। হাফ সেঞ্চুরি থেকে ৬ রান দূরে থাকতে আউট হন আরও দৃষ্টিকটু শটে। ওয়ারিক্যানের ঘূর্ণিতে শর্ট লেগে ক্যাচ দেন সুনিলের হাতে। ওখানে শেষ হয় তার ৮৭ বলে ৪৪ রানের ইনিংস। তার আউটে বাংলাদেশ যায় মধ্যাহ্ন বিরতিতে। প্রথম সেশনে ২ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের রান ১০৫।

ইমরুলের ইনিংস যতটা হতশ্রী ছিল মুমিনুলের ইনিংস ছিল ঠিক ততোইটাই সুন্দর, ধ্রুপদী। অফস্ট্যাম্পের বাইরে দুই পেসারকে শাসন করেছেন কড়া হাতে। দারুণ ড্রাইভ আর স্কয়ার কাটে দিব্যি রান তুলেছিলেন। পুল আর হুক শটগুলোও লাগছিল মাঝ ব্যাটে। তাইতো মধ্যাহ্ন বিরতির আগেই ৬৯ বলে ৭ বাউন্ডারিতে তুলে নেন হাফ সেঞ্চুরি।

বিরতির পর মিথুনকে নিয়ে নতুন মিশন মুমিনুলের। কিন্তু বেশিণ টিকে থাকতে পারেননি মিথুন। বিশুর বলে স্লগ খেলতে গিয়ে ক্যাচ দেন ডরউইচের হাতে ২০ রানে। সাকিব ফেরায় মুশফিক আবার ছয়ে। সাকিব নামলেন পাঁচে। চা-বিরতি পর্যন্ত দুই বাঁহাতি ব্যাট রান করলেন সহজে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলাররা কোনো প্রভাবই বিস্তার করতে পারেননি মুমিনুল, সাকিবের উপর।

একটু একটু করে মুমিনুল এগিয়ে যান সেঞ্চুরিতে। নার্ভাস নাইন্টিতে ছিলেন আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে। ৯২ থেকে ছক্কা মেরে পৌঁছান ৯৮ এ। সেখান থেকে বাউন্ডারিতে ১০২। চলতি বছরের চতুর্থ সেঞ্চুরি তুলে নাম তুলেছেন বিরাট কোহলির পাশে। আর অষ্টম সেঞ্চুরি তুলে তামিমকে ছুঁয়েছেন। তামিম অষ্টম সেঞ্চুরি পেয়েছেন ৮৩তম ইনিংসে। সেখানে মুমিনুল ২৪ ইনিংস কম খেলে ৫৯তম ইনিংসেই পেলেন অষ্টম সেঞ্চুরি, বাংলাদেশের হয়ে যৌথ সর্বোচ্চ।

৩ উইকেটে ২১৬ রান নিয়ে চা-বিরতিতে গিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ২০ মিনিটের বিরতিতে সব এলোমেলো হয়ে যায় বাংলাদেশের। বিরতির পর ২০ মিনিটে ১৫ বলের ব্যবধানে চার উইকেট তুলে নেন গ্যাব্রিয়েল। শুরুটা মুমিনুলকে দিয়ে। অফস্ট্যাম্পের অনেক বাইরের বল খেলতে গিয়ে ক্যাচ দেন উইকেটের পিছনে ১২০ রানে। তিন বল পর মুশফিকুর রহিমকে রিভিউ নিয়ে আউট করেন ডানহাতি পেসার। জিম্বাবুয়ের বিপে আগের ইনিংসে সেঞ্চুরির স্বাদ পাওয়া মাহমুদউল্লাহ বোল্ড হন গ্যাব্রিয়েলের রিভার্স সুইংয়ে। আর সবশেষ সাকিবকেও বোল্ড করেন এ পেসার। ২২২ থেকে ২৩৫ রানে যেতেই ৪ ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে ব্যাকফুটে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ শিবিরে দিনের শেষ ধাক্কাটি দেন ওয়ারিক্যান। দারুণ ফাইটেট ডেলিভারিতের বোল্ড হন ২২ রান করা মিরাজ।

২৫৯ রানে অষ্টম উইকেট হারানোর পর জুটি বাঁধেন তাইজুল ও নাঈম। দিনের শুরু সৌম্য ও ইমরুলের আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি ছিল, তা পুরোপুরি পাওয়া গেল তাইজুল ও নাঈমের শরীরি ভাষায়। ডাউন দ্য উইকেটে এসে নিয়ন্ত্রিত শট, পুল-হুক-কাট শটে ছিল নান্দনিকতা। সিঙ্গেল ও ডাবলসগুলোও নিচ্ছিলেন দারুণ শটে। ২২ গজে দুজন পাড় করে দেন ১৫.৫ ওভার। তাদের ব্যাট থেকে আসা ৫৬ রান কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা দিন শেষের স্কোরবোর্ডই বলে দেয়।

প্রথম ইনিংসে দলের রান অন্তত তিন’শ চেয়েছিলেন সাকিব। মুমিনুলের সেঞ্চুরি আর শেষ দিকে নাঈম-তাইজুলের মহাগুরুত্বপূর্ণ ইনিংসে অধিনায়কের চাওয়া পূরণ হয়েছে। এবার স্কোরবোর্ড সমৃদ্ধ করার পালা।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বশেষ ২৪ খবর