ঢাকা ১০ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৩:৫৩ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১, ২০১৮
ডেস্ক প্রতিবেদন
ক্ষমতায় গেলে জনমত নিয়ে সংবিধানের সংশোধনী আনা হবে বলে জানিয়েছেন গণফোরাম সভাপতি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন।
১ ডিসেম্বর, শনিবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সংবাদ সম্মেলনে কামাল হোসেন এ কথা বলেন।
কামাল হোসেন বলেন, ‘আমরা চাই প্রতিনিধিত্বশীল গণতন্ত্র, যে অধিকার সংবিধান আমাদের দিয়েছে। সেটা প্রতিষ্ঠায় অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিকল্প নেই। নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ করতে আমরা যাদের সঙ্গে কথা বলেছি, তারা সবাই চায় নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার। সুষ্ঠু নির্বাচন এটা দয়া-মায়ার ব্যাপার না। এটা জনগণের মালিকানার বিষয়।’
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ক্ষমতায় গেলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা হবে কি না, এ প্রশ্নের জবাবে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা কোন পরিস্থিতিতে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল, তা সকলেই জানেন। এটা বিতর্কিত বিষয় নয়, কোর্ট রায় দিয়েছে। সেখানেও অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপে নির্বাচন সংবিধানের বিধান। এটা খেয়ালিপনার বিষয় নয়। ৯৬-এ আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি তুলেছিল, বিএনপি তখন যে নির্বাচন করেছিল, তা বাতিল করেছিল। ধারাবাহিকতায় দীর্ঘ ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছিল।’
‘আমরা আশাবাদী জনসমর্থন পাব। তখন সংবিধানে যা আছে, সেই আলোকে পথচলা অব্যাহত থাকবে। তবে যদি দেখি বা মনে করি, জনমতের আলোকে সংবিধানের ঘাটতি পূরণ করতে প্রয়োজনীতা দেখা দেয়, তখন জনগণ যে মতামত দেবেন, সেই অনুযায়ী সংবিধানে সংশোধনী এনে ঘাটতি দূর করা হবে। সংবিধানে রয়েছে মৌলিক গণতন্ত্র, কাজেই এ ব্যাপারে দ্বিমত করার কি সুযোগ আছে?’
অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন ও ভোটাধিকার রায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রবীণ এই আইনজীবী বলেন, ‘সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে, সংঘবদ্ধ থাকতে হবে। ভোট কেন্দ্রে সকাল সকাল উপস্থিত থেকে ভোট প্রয়োগ করতে হবে, অন্যকে ভোটদানে উৎসাহিত করতে হবে। মোটকথা সবাইকে সক্রিয়ভাবে যার যার অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখতে হবে। কেউ যদি কোনো প্রকার প্রতিবদ্ধকতা বা বাধা সৃষ্টি করে তা সংঘবদ্ধভাবে মোকাবেলা করতে হবে, পদপেক্ষ নেবেন। আপনারা (সাংবাদিকরা) সঠিক তথ্য প্রচার করবেন।’
নির্বাচন কমিশনের কঠোর সমালোচনা করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন তো নিজেই সংবিধান অমান্য করছে। সংবিধান তাদেরকে যে দায়িত্ব দিয়েছে, তা অগ্রাহ্য করা হচ্ছে। ফলে আপনাদের আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে যে বা যিনি আইন অমান্য করবে, তাকে ধরিয়ে দেওয়া।’
ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করতে প্রিজাইডিং অফিসারের অনুমতি নিতে হবে, তবে কোনো ছবি কিংবা ভিডিও করা যাবে না বলে নির্বাচন কমিশন যে নির্দেশনা দিয়েছেন, এই ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ড. কামাল বলেন, ‘এই ব্যাপারে আমরা কোর্টে যেতে পারি।’
নিজে নির্বাচন করছেন না, নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র করছেন, আদৌ নির্বাচন হয় কি না, ড. কামালের প্রতি ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় কামাল হোসেন বলেন, ‘এটাতে কোনো রহস্যের ব্যাপার নেই। আমার বয়স ৮০ বছর। বঙ্গবন্ধুর সময় আমার সাথে কেবিনেটে যারা ছিলেন, তাদের কেউ নেই। একজন আছেন, কিন্তু তার অবস্থা বেঁচে না থাকার মতোই। শুধু আমি একটু কাজ করতে পারছি। এই অবস্থায় আমার নির্বাচন করা সম্ভব নয়। এতগুলো যোগ্য ব্যক্তি রাজনীতি করছেন। তাতে আমার ভালো লাগছে। আর নির্বাচন করছি না ঠিকই। কিন্তু আমি কাজ থেকে সরে যাচ্ছি না। আমার নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত আজকের না। এতে ষড়যন্ত্রের গন্ধ খোঁজা উচিত না।’
বিএনপি কিংবা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট যৌথভাবে নির্বাচনি ইশতেহার দেবে কি না, এমন প্রশ্নে কামাল হোসেন বলেন, ‘ইশতেহার লেখা হচ্ছে, দুই-তিন দিনের মধ্যে তা প্রকাশ করা হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে ঐক্যফ্রন্টের নেতাকর্মীর গ্রেফতারের তালিকা দেখিয়ে কামাল হোসেন বলেন, ‘নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরও ৬৮১ জনের উপরে গ্রেফতার করেছে। এর মধ্যে ৩ জন প্রার্থীও আছেন। এটা করা যাবে না। প্রধানমন্ত্রী যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা যেন পালন করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের মুক্ত করা হোক।’
এ সময় বিএনপির মহাসচিব ও ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘গণতন্ত্র রার জন্য আমরা ঐক্যবদ্ধ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। কিন্তু তফসিলের পরও আটক করা হচ্ছে। এভাবে চললে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে না। গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি না দিলে জনগণের কাছে এই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। আশা করব, ড. কামাল হোসেনের এই সংবাদ সম্মেলনের পর গ্রেফতার বন্ধ হবে। অন্যথায় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করার জন্য, আমরা বৃহত্তর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে।’
এ সময় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের জন্য নেওয়া নতুন অফিসের ঠিকানা দেন ফখরুল ইসলাম। তিনি জানান, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নতুন অফিসের ঠিকানা হচ্ছে ৩৭/২ পুরনো পল্টন, জামান টাওয়ারের চতুর্থ তলায়।
সংবাদ সম্মেলনে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতা ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মো. মুনসুর, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান (বীরপ্রতিক) প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সম্পাদক : জে.এ কাজল খান
স্বত্ত্ব: দৈনিক বিজয়ের কণ্ঠ (প্রিন্ট ভার্সন)
০১৭১৮৩২৩২৩৯
Design and developed by syltech