পিতা-পুত্র সিন্ডিকেটের কাছে অসহায় সওজ কর্তৃপক্ষ
ছাতকে লিজের নামে চলছে মাটি-পাথর-গাছ হরিলুট

প্রকাশিত: ১০:১২ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৩, ২০২৫

<span style='color:#077D05;font-size:19px;'>পিতা-পুত্র সিন্ডিকেটের কাছে অসহায় সওজ কর্তৃপক্ষ</span> <br/> ছাতকে লিজের নামে চলছে মাটি-পাথর-গাছ হরিলুট

ছাতক প্রতিনিধি
সুনামগঞ্জের ছাতকে দীর্ঘদিন ধরেই চলছে সড়ক ও জনপথের জমিতে লুটপাটের মহোৎসব। এলাকাবাসীর চোখের সামনে হরহামেশাই ঘটছে সরকারি ভূমিতে নানা কৌশলে মাটি-পাথর ও গাছ বিক্রি। সওজের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে এ লুটপাট চলছে বলে অভিযোগ স্থানীদের। সামাজিক বনায়ন বৃক্ষরোপণের জন্য সওজের জমি সম্প্রতি লিজ দেওয়া হলেও এর শর্ত ভঙ্গ করেই অবৈধ কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন সওজের অবসরপ্রাপ্ত ফেরি চালক ও তার ছেলে। ইতিমধ্যেই সওজ বিভাগের জমি থেকে অবৈধভাবে মাটি বিক্রির সময় দুই ব্যক্তিকে আটক করেছে যৌথবাহিনী। আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে মাটি খেকো চক্রের মুল হোতা ফেরি চালকের ছেলে সাজ্জাদ মাহমুদ মনিরের নাম উঠে আসে। সে টাকার বিনিময়ে সরকারি জমি থেকে দীর্ঘদিন ধরে বিক্রি করছে মাটি। এ ঘটনায় সাজ্জাদ মাহমুদ মনির ওরফে ইয়াবা মনিরসহ ৬ জনকে আসামি করে ছাতক থানায় মাটি ব্যবস্থাপনা আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ মামলায় মনির কয়েকদিন গ্রেফতারের ভয়ে পালিয়ে বেড়ালেও জামিনে এসে আবারও অপকর্ম শুরু করেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শহরের দক্ষিণ বাগবাড়ি সুরমা নদীর তীর এলাকায় সওজের জমি থেকে দেদারছে মাটি কেটে বিক্রি হচ্ছে। মাটি বিক্রির কারণে উপড়ে পড়ছে গাছ। ২০২৩ সাল থেকেই অসংখ্য গাছ কর্তন করা হয়েছে এ ভূমি থেকে। আর এসব অপকর্ম করছেন সওজ বিভাগের সাবেক ফেরি চালক আবুল বাশার ও তার ছেলে সাজ্জাদ মাহমুদ মনির। আবুল বাশার ফেরিঘাট সংলগ্ন সওজের কোয়ার্টারে বসবাস করেন। তিনি নোয়াখালী জেলার চাটখালী উপজেলার বাসনা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি অবসর নিলেও চুক্তির ভিত্তিতে বর্তমানে কাজ করছেন দোয়ারাবাজার ফেরি চালক হিসেবে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ছাতকের লাফার্জ-হোলসিম কোম্পানীর ফেরিঘাট সংলগ্ন এলাকায় ২.৩০ একর জমি রয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগের। সামাজিক বনায়ন বৃক্ষরোপণের জন্য ২০০৬ সালে জমিটি লিজ দেওয়া হয় সওজ বিভাগের কর্মচারিদের ১৪ জন স্ত্রী সন্তানের নামে। এদের মধ্যে বেশির ভাগই আবুল বাশরের আত্মীয়-স্বজন। লিজের অংশিদার আছেন ছাতক উপজেলায় মাত্র তিনজন। লিজ নেওয়া ভূমিতে ৫০ভাগ শেয়ার রয়েছে সওজ কর্তৃপক্ষের। বেশ কিছুদিন ধরে লিজের শর্ত ভঙ্গ করে ছেলে ও তার পিতা চালাচ্ছেন মাটি, পাথর, গাছ বিক্রির মতো অবৈধ কর্মকান্ড।
লিজ গ্রহিতা অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক উপজেলার দিঘলী গ্রামের বাসিন্দা নুর উদ্দিন ও পৌর শহরের মন্ডলিভোগ এলাকার বাসিন্দা জাহিদ হোসেন জানিয়েছেন, ফেরি চালক আবুল বাশার ও তার ছেলে মনিরের নেতৃত্বে মাটি-পাথর, গাছ বিক্রি হচ্ছে। এসবের সাথে তাদের কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। বরং সওজ কর্তৃপক্ষ লিজ বাতিল করলে তারা খুশি হবেন। একই কথা বলছেন উপজেলার জাতুয়া গ্রামের আছাব আলী নামের আরেক অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক ও তার স্ত্রী আফিয়া বেগম।
বৃক্ষরোপণ ছাড়া সরকারি জমি হস্তান্তর যোগ্য না হলেও দেখাশুনার নামে একটি ক্ষমতাপত্র হাতিয়ে নিয়েছেন আবুল বাশারের ছেলে মতিউর রহমান নামে এক ব্যক্তি। কিন্তু সেটিও ভুয়া বলেও দাবি করেছেন নুর উদ্দিন, আফিয়া বেগম ও জাহিদ হোসেন। তারা জানান, জমি রক্ষার জন্য লিজ নেওয়া হয়েছিল। এতে সরিষা ক্ষেতে ঢুকেছে ভূত, আর একক ভাবেই লুটপাট করছেন আবুল বাশার ও তার ছেলে সাজ্জাদ মাহমুদ মনির ওরফে মতিউর রহমান। লিজকৃত জমিতে সওজ বিভাগের ৫০ ভাগ শেয়ার থাকলেও দেখাশুনার ক্ষমতাপত্রে কোন সাক্ষর নেই সড়ক ও জনপথ বিভাগের। যে কারনে বাকী ১৩ জন কর্তৃক ক্ষমতাপত্র দিলেও বিষয়টির ব্যাপারে অবগত নয় সওজ বিভাগ। তাহলে বলাই যায় ক্ষমতাপত্রটিও বৈধ নয়। আর দেখাশুনার দায়িত্ব নিলেও মাটি পাথর গাছ ও সরকারি যন্ত্রপাতি চুরি বা বিক্রি করার প্রশ্নই উঠে না। বরং চুরি হলে তারাই নিবেন আইনি ব্যবস্থা। কিন্তু গেল ২০ বছর ধরে তাদের পক্ষ থেকে এমন কোন আইনি প্রক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়নি।
এদিকে, বহুরুপী সাজ্জাদ মাহমুদ মনির ওরফে মতিউর কখনও গায়ক, কখনও টিকটকার, কখনও মানব পাচারকারি, কখনও রাজনৈতিবিদ এর পাশাপাশি সাংবাদিক হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করার তথ্য মিলেছে তার ফেইসবুক আইডিতে। এমন পরিস্থিতিতে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন এখানের মুল ধারার স্থানীয় সাংবাদিকরা। এছাড়াও অভিযোগ উঠেছে, সম্প্রতি নদীতে চোরাচালান আটক করে ১৬বস্তা ভারতীয় শাড়ি ও শাল গায়েব করে ইয়াবা মনির। পৌর শহরস্থ তাদের অফিস সংলগ্ন একটি ঘর থেকে সেনাবাহিনী অভিযান করে ভারতীয় ফুঁসকা জব্দ করে। স্থানীয়দের ধারণা ওই বহুরুপী মনির এর সাথে সম্পৃক্ততা থাকতে পারে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে সাজ্জাদ মাহমুদ মনিরের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে খোজে পাওয়া যায়নি। তবে তার পিতা আবুল বাশার সওজের জমি থেকে পাথর উত্তোলন, মাটি বিক্রির অভিযোগ অস্বীকার করলেও গাছ বিক্রির বিষয়টি আপনাকে বলব কেন, যাকে বলার তাকে বলেছি।
এ বিষয়ে ছাতক সড়ক ও জনপথ বিভাগ এর নবাগত উপ-বিভাগীয় উপ-প্রকৌশলী শাহাদাৎ হোসেন বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই, আমি মাত্র কয়েকদিন আগে এখানে যোগদান করেছি। খোঁজ নিয়ে বিষয়টি দেখে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করব।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বশেষ ২৪ খবর