লোকবল সঙ্কটে লক্ষীপ্রসাদ পূর্ব ও পশ্চিম ইউপি স্বাস্থ্যকেন্দ্র

প্রকাশিত: ৫:০৬ অপরাহ্ণ, মে ৩, ২০১৯

লোকবল সঙ্কটে লক্ষীপ্রসাদ পূর্ব ও পশ্চিম ইউপি স্বাস্থ্যকেন্দ্র

মাসব্যাপী বন্ধ রাখাসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ


কানাইঘাট সংবাদদাতা
কানাইঘাটের লক্ষীপ্রসাদ পূর্ব ও পশ্চিম ইউপি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র দু’টি সারা মাস বন্ধ রাখার অভিযোগ করছেন স্থানীয়রা। তালাবদ্ধ কেন্দ্রগুলো মাসের কত তারিখে খোলা হয় তাও ভুলে গেছেন তারা। এতে চিকিৎসা বঞ্চিত হচ্ছেন দুই ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ। মাসব্যাপী কেন্দ্রগুলো বন্ধ রাখাতে দুই ইউনিয়নের বাসিন্দাদের চিকিৎসা সংক্রান্ত দুর্ভোগ যেনো নিত্য সঙ্গী হয়ে পড়েছে।

স্থানীয়রা জানান, এ স্বাস্থ্য কেন্দ্র দুটিতে ডাক্তার ও স্টাফ স্বল্পতা রয়েছে। যেখানে একটি ইউপি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে একজন উপসহকারী মেডিকেল অফিসার, একজন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শক, একজন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা, একজন ফার্মাসিস্ট, একজন আয়া, একজন এমএলএসএস, একজন নিরাপত্তা প্রহরী, একজন পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক (ননক্লিনিকেল) সব মিলে সাত জনের স্টাফ থাকার কথা। সেখানে উপজেলার লক্ষীপ্রসাদ পূর্ব ইউপি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র চলছে মাত্র একজন ডাক্তার দিয়ে। তাও তিনি নিজে বিভিন্ন রোগে অসুস্থতার মধ্যে দিনযাপন করছেন। তাই উক্ত স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলি কারণে-অকারণে প্রায়ই বন্ধ থাকার অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী। আর এসব অভিযোগের সত্যতা শিকার করে লক্ষীপ্রসাদ পুর্ব ইউপি স্বাস্থ্য কেন্দ্রের উপসহকারী মেডিকেল অফিসার ডাঃ আব্দুর রব বলেন, আমি চেষ্টা করি মাসে অন্তত ১৫ দিন হাসপাতালটি খুলে চিকিৎসা সেবা প্রদান করার। কিন্তু উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের সাপ্তাহিক ও মাসিক মিটিং, জররী কাজ কর্ম ও শারিরিক অসুস্থতা, সবমিলে আমাকে মাসে অন্তত ১৫ দিন স্বাস্থ্য কেন্দ্র বন্ধ রাখতে হয়। কারণ এখানে পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা, পরিবার কল্যাণ পরিদর্শক, আয়া, পিয়ন, নাইট গার্ড সহ মোট ৭টি পদের মধ্যে ৬টি পদ শূন্য রয়েছে। এছাড়া উক্ত স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ভবন আছে কিন্তু আসবাবপত্র, দরজা-জানালা কিছুই নেই। এমনকি দুতলা বিশিষ্ট একটি ভবনের ৬টি টয়লেট থাকলেও একটিরও দরজা নেই।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লক্ষীপ্রসাদ পূর্ব ইউপি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের পরিদর্শিকার অতিরিক্ত দায়িত্বে রয়েছেন পার্শ্ববর্তী দিঘীরপার পূর্ব ইউপি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের পরিদর্শিকা চন্দনা রানী চন্দ্র ও পরিবার কল্যাণ পরিদর্শকের (ননক্লিনিকেলি) দায়িত্বে রয়েছেন দিঘীরপার পূর্ব ইউপি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের পরিদর্শক তানভির আহমদ চৌধুরী। তারা উক্ত স্বাস্থ্য কেন্দ্রে মাসেও একদিন উপস্থিত থাকার প্রয়োজন মনে করেন না বলে অভিযোগ করেছেন ডাঃ আব্দুর রব। তাই উক্ত স্বাস্থ্য কেন্দ্র বন্ধ রেখে তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের সভায় যোগদান করেন। উল্লিখিত চন্দনা রাণী ও তানভীর আহমদ চৌধুরী উক্ত স্বাস্থ্য কেন্দ্রের পরিদর্শক ও পরিদশিকার অতিরিক্ত দায়িত্বে খাতায় আছেন কিন্তু বাস্তবে নেই। এছাড়া স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ভাউন্ডারী, খাবার পানী সঙ্কট, আসবাবপত্র, বৈদ্যুতিক মালামাল, ভবনে ফাটলের রিপিয়ারিং সহ বহু সমস্যা রয়েছে এ স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রে।

অপরদিকে, উপজেলার লক্ষীপ্রসাদ পশ্চিম ইউপি স্বাস্থ্য ও পরিবার কেন্দ্র একইভাবে পরিচালিত হচ্ছে বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন। উক্ত স্বাস্থ্য কেন্দ্র মাসে কোনদিন খোলা থাকে, তা জানেন না স্থানীয় এলাকাবাসী। এ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ৭ জন স্টাফ থাকার কথা থাকলেও আছেন মাত্র ৩জন। এদের মধ্যে ইউপি স্বাস্থ্য ও পরিবার কেন্দ্র পরিদর্শিকা সেলিনা আক্তার এবং ফার্মাসিষ্ট নিশিত রঞ্জন দাস এবং আয়া ভিতি রানী।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, উক্ত ৩জনই এ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে মাসে ১৫দিনও উপস্থিত থেকে দায়িত্ব পালন করেন না। এতে স্থানীয় এলাকাবাসীর চিকিৎসা সেবায় দুর্ভোগের শেষ নেই বলে জানা গেছে। এলাকাবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টায় উক্ত স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় এই কেন্দ্রটি বন্ধ রয়েছে। এতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উক্ত স্বাস্থ্য কেন্দ্রের পরিদর্শিকা সেলিনা আক্তার, ফার্মাসিস্ট নিশিত রঞ্জন দাস ও আয়া ভিতি রানী দাস ব্যাক্তিগত কাজে বাহিরে রয়েছেন।

মুটো ফোনে আলাপকালে পরিদর্শিকা সেলিনা আক্তার বলেন, আমি সরকারি কাজে উপজেলা পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে রয়েছি।

ফার্মাসিস্ট নিশিত রঞ্জন দাস বলেন, আমি উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এসেছি। আয়া ভিতি রানীর মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

এদিকে এলাকার বিশিষ্ট মুরব্বী আম্বিয়া মিয়া বলেন, শুনেছি ২৭টি রোগের ঔষধ সরকারিভাবে উপজেলা হাসপাতাল থেকে ইউপি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে প্রদান করা হয়। কিন্তু উক্ত স্বাস্থ্য কেন্দ্রের এসব ঔষধপত্র তারা বাজারে বিক্রয় করে দেন। তাই উক্ত স্বাস্থ্য কেন্দ্র খুলে রোগীদের সেবা প্রদানের প্রয়োজন মনে করেন না তারা। এবিষয়ে আলাপকালে উক্ত স্বাস্থ্য কেন্দ্রের পরিদর্শিকা সেলিনা আক্তার বলেন, আমি সব সময় আমার দায়িত্ব ও কর্তব্য সঠিকভাবে পালন করে যাচ্ছি। আমি যে এখানে দায়িত্ব পালন করি না এ অভিযোগটি একেবারেই মিথ্যা বলে দাবি করেন তিনি।

এবিষয়ে লক্ষীপ্রসাদ পূর্ব ইউপি চেয়ারম্যান ডাঃ ফয়েজ উদ্দিন বলেন, লক্ষীপ্রসাদ পূর্ব ইউপি স্বাস্থ্য কেন্দ্র যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন এলাকায় হওয়ার কারণে এখানে কেউ দায়িত্ব নিতে আসে না। আর এখানে কাউকে পোস্টিং দেয়া হলেও সে সটিকভাবে দায়িত্ব পালন করে না। বর্তমানে যিনি ডাক্তার আছেন তিনিও নিজে রোগী। তাই উক্ত স্বাস্থ্য কেন্দ্রটির হাল একেবারেই বেহাল। তিনি এবিষয়ে কর্তৃপক্ষকের সুদৃুষ্টি কামনা করেন।

লক্ষীপ্রসাদ পশ্চিম ইউপি চেয়ারম্যান জেমস লিউ ফারগুশন নানকা বলেন, লক্ষীপ্রসাদ পশ্চিম ইউপি স্বাস্থ্য কেন্দ্র প্রায়ই বন্ধ থাকে এটি দুঃখজনক। আমি নিজে আমার সহকারী ইমনকে দিয়ে খোঁজখবর নিয়ে নিশ্চিত হয়েছি। তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে ইউপি স্বাস্থ্য ও সেবা কেন্দ্র সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত খোলা রাখা সহ রোগীদের সেবা প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করার প্রয়োজনিয় ব্যবস্থা গ্রহন করবো।

এ প্রসংঙ্গে কানাইঘাট উপজেলা মেডিকেল অফিসার (এমসিএইচএফপি) ডাঃ ইসরাত জাহান খানমের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, উক্ত স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলোসহ আরো ২/৩টি ইউপি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগের তদন্ত চলছে। উক্ত স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলোতে সেবার মান বাড়াতে আমরা সকল ধরনের চেষ্টা করে যাচ্ছি। তারপরেও কেউ যদি কোন ভাবে কাজের ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করে তাহলে তা কোন ভাবেই মেনে নেবোনা বলে জানান তিনি।

এবিষয়ে জানতে চাইলে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর সিলেটের বিভাগীয় উপপরিচালক ডাক্তার লুৎফুন নাহার জেসমিন বলেন, আমি খোঁজ নিয়ে দেখবো যদি এ দুইটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে কেউ দায়িত্ব পালনে অবহেলা করে কিংবা সটিক ভাবে দায়িত্ব পালন না করে ফাঁকি দেওয়ার আশ্রয় গ্রহন করেন। তাহলে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষ প্রয়োজনিয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বশেষ ২৪ খবর