সিলেটে ধর্মঘটের নামে ব্যাপক নৈরাজ্য

প্রকাশিত: ৫:০৪ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৯, ২০১৮

সিলেটে ধর্মঘটের নামে ব্যাপক নৈরাজ্য

⇒বিয়ের গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স, বিদেশযাত্রীদের কাছে থেকে চাঁদাবাজি
⇒‘যেখানে সরকারের বেইল নেই, সেখানে সাংবাদিক দিয়ে কী হবে?’
⇒যা কিছু ঘটেছে সবকিছুর দায়ভার কেন্দ্রের : ফলিক

খলিলুর রহমান
পরিবহন শ্রমিকদের নৈরাজ্যে অচল হয়ে পড়ে সিলেট। তাদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে সাধারণ যাত্রী থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজের শিক্ষক শিার্থীরাও। চরম শ্রমিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন সর্বশ্রেণির মানুষ।
মঙ্গলবার টানা দ্বিতীয় দিনের মতো চলে পরিবহন শ্রমিকদের কর্মবিরতি নামের তা-ব। তারা রিকশা, প্রাইভেট গাড়ি মোটরবাইক এমকি অ্যাম্বুলেন্স পর্যন্ত চলতে দেয়নি। সোমবার বড়লেখায় অ্যাম্বুলেন্স আটকে রাখার কারণে ৭ দিনের এক শিশুর প্রাণ গেলেও তারা গতকালও একইভাবে অ্যাম্বুলেন্স আটকে দিলেও ব্যবস্থা নেয়নি সরকার ও প্রশাসন।
সরেজমিনে দেখা যায়, দণি সুরমার পাঁচমাইল এলাকায় সিরাজ উদ্দিন আহমদ চত্তর (বাইপাস), কদমতলী, হুমায়ুন রশিদ চত্বর, চন্ডিপুল, পয়েন্টসহ বিভিন্ন জায়গায় গাড়ি চলাচলে বাঁধা দিচ্ছে পরিবহন শ্রমিকরা। তারা সাধারণ যাত্রীদের গাড়ি থেকে নামিয়ে দেয়। একজন সাংবাদিক মোটরবাইকে করে কর্মস্থলে আসতে চাইলে পাঁচমাইল (বাইপাস) এলাকায় প্রায় দু’ঘন্টা তাকে আটকে রাখে পরিবহণ শ্রমিক নামের সন্ত্রাসীরা। বাইপাস এলাকায় একটি টিভি চ্যানেলের গাড়ি আটকে রাখে আড়াই ঘন্টা। এতে করে বিভিন্ন পেশার মানুষ বাধ্য হয়ে মাইলকে মাইল পায়ে হেঁটে গন্তব্যস্থলে পৌঁছাতে থাকেন।
দক্ষিণ সুরমার হুমায়ুন রশিদ চত্বর ও কদমতলীতে দেখা য়ায়, রিকশা থেকে যাত্রীদের নামিয়ে চাকার বাতাস ছেড়ে দেয়া হয়। অনেক জায়গায় অ্যাম্বুলেন্স আটকে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এদিকে নগরের উত্তর সুরমার এয়ারপোর্ট সড়কে গাড়ি আটকানোর পাশপাশি ব্যাপক চাঁদাবাজির অভিযোগও পাওয়া গেছে। বিদেশযাত্রীদের কাছ থেকে মোটা অংকের চাঁদা আদায় করে তাদের গন্তব্যে যেতে দেয়া হয়।
সিলেট তামাবিল সড়কে জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট স্কুল, ক্যান্টেনমেন্ট বোর্ড স্কুল, মেট্রোপলিটন ভার্সিটির শিক্ষার্থীরা গত দু’দিন ধরে স্কুল কলেজ ও ভার্সিটিতে যেতে পারে নি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর পরিবহন বন্ধ করে দেয় পরিবহণ শ্রমিক নামধারীরা।
লিডিং ইউনিভার্সিটি, মদনমোহন কলেজ, সিলেট সরকারি কলেজ ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহনগুলোকেও বন্ধ করে দেয়া হয় ।
সরেজমিনে সিলেট সুনামগঞ্জ রোডর আম্বরখানা, সুবিদবাজার, পাঠানটুলা, মদিনা মার্কেট, তেমুখী প্রভৃতি এলাকায় সমান তা-ব চালায় পরিবহণ শ্রমিক পরিচয়ধারীরা। রিকশা, মোটরবাইক পর্যন্ত চলতে দেয়নি ওরা। নগরের পাঠানটুলায় ব্যারিকেড দিয়ে রিকশারোহী, মোটরবাইক চালকসহ প্রাইভেট কারে যাত্রী এবং রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স থেকেও চাঁদা আদায় করে পরিবহণ শ্রমিক নামের সন্ত্রাসীরা।
পাঠানটুলায় পুলিশের বসানো অবৈধ অটোরিকশা স্ট্যান্ডে বসে ও দাঁড়িয়ে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি করে এদল শ্রমিক নামধারী। তাদের হামলা ও লাঞ্চনার শিকার হয়েছেন রিকশারোহী ও মোটরবাইক যাত্রীরা। চাঁদা না দেয়ায় একজন মোটরবাইক আরোহীর চাবি কেড়ে নেয় স্ট্যান্ডের ম্যানেজার। একজন সাংবাদিকের রিকশা আটকে স্ট্যান্ড ম্যানেজাররের কাছে তাকে নিয়ে যায় পিকেটাররা। ম্যানেজার তার কাছে চাঁদা চাইলে তিনি নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিলে ম্যানেজার বলে, ‘যেখানে সরকারের বেইল নেই, সেখানে সাংবাদিক হলে কী হবে?’। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে রিকশার চাকার বাতাস ছেড়ে দিয়ে ওই সাংবাদিককে দু’ঘন্টা আটকে রাখে ওরা। পরে স্থানীয় লোকজনের অনুরোধে তাকে ছেড়ে দিরে পায়ে হেঁটে তিনি কর্মস্থলে পৌঁছান।
এর আগেরদিন সোমবারও সিলেটে ব্যাপক নৈরাজ্য চালায় পরিবহন শ্রমিকরা। সন্ধ্যায় ওসমানী নগরের তাজুপর এলাকায় পরিবহণ শ্রমিকদের মারধরে ৫ বরযাত্রী আহত হন। তাদেরকে সিলেট ওসমানী হাসপাতারে ভর্তি করা হয়।
এর আগে বড়লেখায় অ্যাম্বুলেন্স আটকে রাখার কারণে প্রাণ যায় এক শিশুর। বিয়ানীবাজারে বরযাত্রীদের সাথে সংঘর্ষ হয়েছে পরিবহন শ্রমিকদের। হবিগঞ্জে আহত হয়েছেন এক সংবাদকর্মী। সিলেট নগরে প্রাইভেট কার চালককে মারধর ছাড়াও অনেক জায়গায় পিকেটিংসহ বিদেশ ফেরত যাত্রীদের কাছ থেকে করেছে চাঁদাবাজি।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, সাধারণ শ্রমিকদের বদলে পরিবহণ নেতারা টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন স্থানে পিকেটিংয়ে দেন বখাটে ও সন্ত্রাসীদের। তারা নির্বিচারে যানবাহন আটকানোসহ চাঁদাবাজিতে ব্যস্ত থাকে।
শনিবার ফেডারেশনটির সভাপতি সংসদ সদস্য ওয়াজিউদ্দিন খান ও সাধারণ সম্পাদক উছমান আলী স্বারিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত শুক্রবার জাতীয় সংসদে ‘সড়ক পরিবহন আইন -২০১৮’ পাস হয়েছে। এ আইনে শ্রমিক স্বার্থ রা ও পরিপন্থী উভয় ধারা রয়েছে। এছাড়া, সড়ক দুর্ঘটনাকে দুর্ঘটনা হিসেবে গণ্য না করে, অপরাধ হিসেবে গণ্য করে আইন পাস করা হয়েছে। আইনে সড়ক দুর্ঘটনা মামলায় অপরাধী হয়ে ফাঁসির ঝুঁকি রয়েছে। এমনই অনিশ্চিত ও আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে পেশায় দায়িত্ব পালন করা শ্রমিকদের পে সম্ভব হচ্ছে না। এর কারণে আন্দোলন ছাড়া বিকল্প কোনো তাদের সামনে খোলা নেই। এ আইনের সংশোধন ও পরিস্থিতিতে সমস্যা নিরসনের ল্েয রোববার সকাল ৬টা থেকে দেশজুড়ে ৪৮ ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করার ঘোষা দেন তারা।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সিলেটের সমন্বয়ক সেলিম আহমদ ফলিক জানান, সংগঠনের কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী সিলেটের সর্বাত্মক কর্মবিরতি এবং অবরোধ পালনসহ সবকিছু করা হয়েছে। এতে যা কিছু ঘটেছে সবকিছুর দায়ভার কেন্দ্রের বলে জানান তিনি।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বশেষ ২৪ খবর