ঢাকা ১৫ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১লা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৮:৩২ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২১, ২০১৯
মিসবাহ উদ্দিন,বিয়ানীবাজার : বিয়ানীবাজার উপজেলার সুপাতলা গ্রামের মনোরঞ্জন ঘোষ পরিবার স্বাধীনতার ৪৯ বছর পরও পায়নি শহীদ পরিবার হিসেবে স্বীকৃতি। অনুসন্ধানে জানা যায় যে গত ৪৫ বছরে বঙ্গবন্ধু দেয়া চিঠিটি অনেকটাই বিবর্ণ হয়ে গেছে। তবু জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পাঠানো এই সান্তনাপত্র সযত্নে আগলে রেখেছে শহীদ মনোরঞ্জন ঘোষের পরিবার। মুক্তিযুদ্ধে একদিনে, এক নিমিষে তাদের পরিবার ও আত্মীয়কুলের ১৪ জনের মধ্যে ১৩ জনই উৎসর্গ করেছেন তাদের জীবন। বিনিময়ে বঙ্গবন্ধুর পাঠানো এই চিঠিটিই একমাত্র সান্তনা তাদের। এমনকি শহীদ পরিবারের স্বীকৃতিও পাননি তারা। পরিবারের সবার শহীদানের এ ঘটনা ঘটে ১৯৭১ সালের ২১ জুলাই বিকেল ৪টার দিকে। সিলেটের বিয়ানীবাজার এলাকার শান্তি কমিটির সভাপতি ছিলেন তৎকালীন মুসলিম লীগ নেতা আবদুর রহিম (বচন আজি)। রাজাকার কুটুমনার প্ররোচনা ও সহযোগিতায় পাকিস্তানি বাহিনী সেদিন সুপাতলা গ্রামে সুধীর রঞ্জন ঘোষের ভাই মনোরঞ্জন ঘোষ ও উমানন্দ ঘোষের বাড়িতে হামলা চালায়। দুই পরিবারের ১৪ জন সদস্যকে ধরে নিয়ে যায় তারা। তার পর তাদের রাধা টিলা বধ্যভূমিতে দাঁড় করিয়ে নির্বিচারে গুলি চালায়। পাকিস্তানি সেনাদের গুলিতে সেদিন ১৩ জনই শহীদ হন। তবে মুহুর্মুহু গুলির মধ্যে মৃত্যুকে বরণ করে নিতে নিতেও হিরণ বালা ঘোষ তার কোলের মধ্যে আগলে রাখেন দুই বছরের শিশু মলয় ঘোষকে। সন্ধ্যার পর বধ্যভূমিতে কান্নার শব্দ শুনে তৎকালীন পুলিশ কর্মকর্তা, গোলাপগঞ্জ থানার রায়গড় এলাকার বাসিন্দা আবদুল মতিন মলয়কে নিজ জিম্মায় নিয়ে যান। তবে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর নিউমোনিয়ায় মলয়েরও মৃত্যু ঘটে। ঘোষ পরিবারের জীবিত একমাত্র সদস্য মনোরঞ্জন ঘোষের ছেলে মহেশ রঞ্জন ঘোষ বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে বাবা, মা, ঠাকুরমা, কাকা, ভাইবোনসহ সাতজনকে হারিয়েছি। কাকার পরিবারের সঙ্গে আমি ও বড় দুই বোন ভারতে খালার বাড়ি চলে যাওয়ায় বেঁচে যাই। আমি তখন সাত বছরের শিশু।’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলিতে সেদিন নিহত হন মহেশের বাবা মনোরঞ্জন ঘোষ (৫৩), মা হিরণ বালা ঘোষ (৩৭), ঠাকুরমা ক্ষেত্রময়ী ঘোষ (৬৮), কাকা নরেশ চন্দ্র ঘোষ (৫৮) এবং ভাই মুকুল রঞ্জন ঘোষ (১৬), বোন অমিতা ঘোষ (৯) ও সীতা (৫)। মহেশদের আপনজন ও প্রতিবেশী নন্দ ঘোষের পিতা বীরেন্দ্র ঘোষকেও গুলি করে হত্যা করা হয় ওইদিন। অন্য পাঁচজনও তাদের প্রতিবেশী উমানন্দ ঘোষ (৬৫), তার স্ত্রী চারুবালা ঘোষ (৫০), ভাই মহানন্দ ঘোষ (৫০) ও বীরেন্দ্র চন্দ্র ঘোষ (৪২), বীরেন্দ্র চন্দ্রের দুই শিশুসন্তান নিখিল চন্দ্র ঘোষ (১২) ও কৃষষ্ণ চন্দ্র ঘোষ (১০)।
১৯৭২ সালের ৬ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শহীদ মনোরঞ্জন ঘোষের ছোট ভাই সুধীর রঞ্জন ঘোষের কাছে সান্তনাপত্র পাঠান। তার পরিবারকে তখন দুই হাজার টাকা অনুদানও দেওয়া হয়। ২০০২ সালে বিয়ানীবাজার পৌরসভার রাধা টিলা বধ্যভূমিতে স্থাপিত হয় স্মৃতি ফলক। এ স্মৃতি ফলকে উৎকীর্ণ হয় ১৩ শহীদের নাম। মহেশ রঞ্জন বলেন, ২০০২ সালে শহীদ পরিবারের নাম তালিকাভুক্ত করতে সরকারের নির্ধারিত ফরম পূরণ করলেও অজানা কারণে আমাদের পরিবারের নাম তালিকাভুক্ত হয়নি।’ তিনি বলেন, ‘স্বজন হারানোর বেদনা নিয়ে বেঁচে আছি। এ যন্ত্রণা সবার পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়।’ তিনি প্রশ্ন করেন, রাষ্ট্র কি তাদের শহীদ পরিবারের স্বীকৃতি দেবে না? এ প্রসঙ্গে বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মৌসুমি মাহবুব বলেন, ‘বিষয়টি আমার পুরো জানা নেই , খোঁজ নিয়ে দেখব।
সম্পাদক : জে.এ কাজল খান
স্বত্ত্ব: দৈনিক বিজয়ের কণ্ঠ (প্রিন্ট ভার্সন)
০১৭১৮৩২৩২৩৯
Design and developed by syltech