ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিশ্ব এইডস দিবস পালন

প্রকাশিত: ২:৩৪ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১, ২০১৮

ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিশ্ব এইডস দিবস পালন

ডেস্ক প্রতিবেদন
“এইচআইভি পরীক্ষা করুন, নিজেকে জানুন” এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে নানা আয়োজনের মধ্যে দিয়ে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিশ্ব এইডস দিবস পালন করা হয়েছে।

শনিবার দিনের শুরুতে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একে মাহবুবুল হকের নেতৃত্বে এক বর্ণাঢ্য র‌্যালি বের হয়ে বিভিন্ন সড়ক পদক্ষিণ করে হাসপাতালের আউটডোর কমপ্লেক্সের সামনে এসে র‌্যালিটি সমাপ্ত হয়। তারপর আউটডোর কমপ্লেক্সের তৃতীয় তলাস্থ মিলনায়তনে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

এইচআইভি আক্রান্তদের সংগঠন পিএলএইচআইভি নেটওয়ার্ক সিলেট বিভাগের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন সংস্থা ও সংগঠনের প্রতিনিধি বৃন্দ, আইনজীবি, সাংবাদিক সহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষের সাথে মতবিনিময় সভায় ওসমানী হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান, অধ্যাপক ও বিভিন্ন পর্যায়ের চিকিৎসকগন অংশগ্রহণ করেন।

ইউনিসেফ এর সহয়তায় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বাস্তবায়িত এইচআইভি সেবা জোরদার করণ কার্যক্রমের ব্যবস্থাপক মোঃ মোতাহের হোসেনের সঞ্চালনায় সভার শুরুতে এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনা করেন হাসপাতালের এআরটি সেন্টারের সমন্বয়ক ডাঃ আবু নঈম মোহাম্মদ এরপর বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারগণ তাদের বক্তব্য উপস্থপন করেন।

অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মজির উদ্দিন, ফাতেমা বেগম, আব্দুল মোতলেব, জসিম উদ্দিন প্রমূখ।

হাসপাতালের বিভিন্ন পর্যায়ের স্টাফদের মধ্য থেকে বক্তব্য রাখেন আব্দুল হাকিম সুমন, খায়ের আহমেদ চৌধুরী, পরিমল বনিক প্রমুখ।

সভায় বক্তাগণ বলেন, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এইচআইভি আক্রান্তদের বিনামূল্যে সব ধরনের চিকিৎসা দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে এর সাথে সাথে বিভিন্ন পর্যায়ের সেবাদানকারীরাও বৈষম্যহীন ভাবে আন্তরিক সেবা দিতে প্রস্তুত রয়েছেন। কাজেই যেকেউ নির্দি¦ধায় হাসপতলে সেবা নিতে আসতে পারেন।

হাসপাতালের পরিচালক এ কে মাহবুবুল হক তার বক্তব্যে বলেন, এইচআইভি এখন আর ভয় পেয়ে বসে থাকার মতো কোন বিষয় নয়। একটু সচেতন থাকলে সহজেই এইরোগ নিয়েও ভাল থাকা যায়। তাছাড়া সরকার এইচআইভি আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে আর এর সুফলও এইচআইভি আক্রান্তরা পেতে শুরু করেছে। এখন আমাদের উচিত এইচআইভি পরীক্ষা করে নিজের অবস্থা জেনে নেয়া এবং পরিচিত জনকেও পরীক্ষা করতে উদ্বুদ্ধ করা। সঠিক সময়ে এইচআইভি সনাক্ত করা গেলে চিকিৎসার মাধ্যমে এইরোগ অনেকাংশেই নিয়ন্ত্রনের মধ্যে রাখা সম্ভব বলে তিনি মন্তব্য করেন।

হাসপাতালের সহকারী পরিচালক প্রশাসন ও প্রশিক্ষণ ডাঃ আবুল কালাম আজাদ তার বক্তৃতায় উল্লেখ করেন, সিলেটে প্রতি বছর যেভাবে এইচআইভি আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে করে এখনই এব্যাপারে যথাযথ উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। আর এ জন্য সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা সমুহকেও কার্যকরভাবে এগিয়ে আসা প্রয়োজন। এতে করে জন সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে এবং এইচআইভি আক্রান্তদের চিহ্নিত করে যথাযথ চিকিৎসার আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হবে।

সভায় বক্তাগণ সিলেটের এইচআইভি সংক্রমণ প্রতিরোধে নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালনসহ অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ আচরণের ব্যাপারে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির উপর গুরুত্বারোপ করেন।

এবছর সারা দেশে মোট ৮৬৯ জন লোক নতুন ভাবে এইচআইভি আক্রান্ত হয়েছেন এর মধ্যে সিলেট বিভাগের ৬৬জন রয়েছেন। এনিয়ে সিলেট বিভাগে মোট ৯০২ জন এইচআইভি আক্রান্ত হিসেবে চিহ্নিত হলেন। তার মধ্যে ৩৬৬ জন মারা গেছেন এবং ৫৩৬ জন জীবিত আছেন।

উল্লেখ্য যে, ইতিপূর্বে বেসরকারি সংস্থা সমূহের মাধ্যমে এইচআইভি আক্রান্তদের সেবা প্রদান করা হলেও ২০১৩ সালে জাতীয় এইডস/এসটিডি প্রোগ্রাম এর তত্ত্বাবধানে এবং ইউনিসেফ এর সহয়তায় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মা হতে শিশুর শরীরে এইচআইভি সংক্রমণ প্রতিরোধ কার্যক্রমের আওতায় প্রথমবারের মতো সব গর্ভবতী মহিলাদের বিনামূল্যে এইচআইভি পরীক্ষাসহ অন্যান্য সেবা প্রদান শুরু হয়। যার মাধ্যমে এপর্যন্ত ৪২জন মা পূর্ণ চিকিৎসা নিয়ে স্স্থু সন্তান জন্মদান করেছেন আরোবেশ কিছু মা সন্তান জন্মদানের অপেক্ষায় আছেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সালের অক্টোবরে ওসমানী হাসপাতালে শুরু হয় এরআরটিসেন্টারের কার্যক্রম। এর মাধ্যমে বর্তমানে সরকারি ব্যবস্থাপনায় স্বেছায় আগত যে কোন ব্যক্তির বিনামূল্যে এইচআইভি পরীক্ষা করা হয়। পাশা পাশি এইচআইভি আক্রান্তদের ঔষধ সহ সবধরনের স্বাস্থ্যসেবা বিনামূল্যে প্রদান করা হয়ে থাকে। বর্তমানে ৪৭৮ জন এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তি নিয়মিত এআরভি ঔষধ ও অন্যান্য স্বাস্থসেবা গ্রহণ করেছেন।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বশেষ ২৪ খবর