ঢাকা ৫ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২১শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৩:২১ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১৮, ২০১৮
ওসমানীনগর প্রতিনিধি
সিলেটের ওসমানীনগর আ.লীগে দলীয় কোন্দল আর হানাহানীর কারণে সম্মেলনের মাধ্যমে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করার প্রায় ৪ বছর হয়ে গেলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারেনি স্থানীয় আ.লীগ। যার ফলে উপজেলা আ.লীগের দুই সদস্য কমিটি দিয়ে খুড়িয়ে খুড়িয়ে প্রায় ৪ বছর অতিবাহিত করছে। দীর্ঘ দিন ধরে উপজেলা আ.লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি না থাকায় এক দিকে যেমন দলীয় কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে অপর দিকে নির্বাচিত সভাপতি সম্পাদকের কর্মদক্ষতা ও দলীয় কোন্দলকে দায়ী করছেন সাধারণ নেতা কর্মীরা।
২০১৫ সালের ২৫ জানুয়ারী ওসমানীনগর উপজেলা আ.লীগ সম্মেলন অনুষ্টিত হয়। সম্মেলনে জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিলেট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুর রহমানের আর্শিবাদপুষ্ট তাজপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আতাউর রহমান সভাপতি পদে ও আফজালুর রহমান চৌধুরী নাজলু সাধারণ সম্পাদক পদে প্যানেল ঘোষণা করে নির্বাচন করেন। অন্য দিকে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী প্যানেল যুক্তরাজ্য আ.লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামের আর্শিবাদপুষ্ট তৎকালিন কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক চেয়ারম্যান কবির উদ্দিন সভাপতি পদে ও তৎকালিন সাধারণ সম্পাদক সাবেক ছাত্রনেতা আবদাল মিয়া সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।
সম্মেলনে দলীয় ১৮৩ জন কাউন্সিলারদের মধ্যে ১৮০জন কাউন্সিলার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। ৯১ ভোট পেয়ে শফিকুর রহমান গ্রুপের প্যানেলের আতাউর রহমান সভাপতি ও একই গ্রুপের আফজালুর রহমান চৌধুরী নাজলু ৯৪ ভোট পেয়ে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তাদের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী গ্রুপের উপজেলা আ.লীগের সাবেক কমিটির সভাপতি কবির উদ্দিন আহমদ পান ৮৯ ভোট ও সাধারণ সম্পাদক আবদাল মিয়া পান ৮৬ ভোট।
সম্মেলনের মাধ্যমে সভাপতি সম্পাদক নির্বাচিত করার পর থেকে উপজেলা আ.লীগের কোন্দল চরম পর্যায়ে চরে যায়। উপজেলা আ.লীগ থেকে শুরু করে ৮ ইউপির ও ওয়ার্ড আ.লীগ সহ একে বারে গ্রাম পর্যায়ে আ.লীগের নেতা কর্মী এবং সমর্থকরা শফিকুর রহমান চৌধুরী ও আনোয়ারুজ্জামান চৌধূরীর দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পরে।
নব নির্বাচিত সভাপতি ও সম্পাদক দলীয় কর্মসূচী পালন ও যেকোনো সভা আহ্বান করলে অপর প্রতিদ্বন্দ্বী প্যানেলের সদস্যরা তাতে যোগদান থেকে বিতরত থাকে। আনোয়ারুজ্জামানের নেতৃত্বে পরাজিতরা পৃথক ভাবে দলীয় কমুসূচী সহ সভা সমাবেশ করতে থাকে।
দলীয় কোন্দলের কারণে বিগত প্রায় ৪ বছর ধরে শুধুমাত্র সভাপতি সম্পাদক এই দুই সদস্য বিশিষ্ট কমিটি দিয়ে চলে আসছে ওসমানীনগর উপজেলা আ.লীগ। শুধু তাই নয় শফিকুর রহামন গ্রুপের বর্তমান সভাপতি আতাউর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহামন চৌধুরী নাজলুর নেতৃত্ব তাদের নিজ গ্রুপের নেতা কর্মীদের মধ্যে বিতর্ক ও মতানৈক্য দেখা দিয়েছে। সভাপতি আতাউর রহামন চলেন গুটি কয়েক নেতা কর্মী নিয়ে ঠিক তেমনি আফজালুর রহামন চৌধুরী নাজলুও আরেকটি উপগ্রুপ নিয়ে চলছেন। সভাপতি সম্পাদক দুজনেরই কর্মকান্ডে শফিক গ্রুপের বড় একটি অংশ নাখোশ। অনেকেই এখন সভাপতি সম্পাদকের ডাকে সাড়া না দিয়ে দলীয় কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকছেন। যদিও বর্তমান সভাপতি আতাউর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহামন চৌধুরী নাজলু এ বিষয়টি মানতে নারাজ। তারা বলছেন ওসমানীনগর আ.লীগ তথা শফিকুর রহমান গ্রুপের সবাই ঐক্যবদ্ধ আছেন এবং ভবিষতেও থাকবনে।
এর আগে ২০০৪ সালে অনুষ্ঠিত কাউন্সিলে কবির উদ্দিন আহমদ ও আবদাল মিয়াকে সাধারণ সম্পাদক করে ওসমানীনগর আ’লীগের কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর নিস্ক্রীয় হয়ে পড়েন দলের অনেক নেতাকর্মী। দেখা দেয় আভ্যন্তরিন কোন্দল। যার কারণে বিগত দিন গুলোতে আ’লীগ দলীয় কোন কর্মসূচী পালন করতে খুব বেশী দেখা যায়নি। সেই কমিটির ১২ বছর থাকার পর ২০১৫ সালে সম্মেলনের মাধ্যমে সভাপতি সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করার পর প্রায় ৪ বছর অতিবাহিতলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি এখন পর্যন্ত।
ওসমানীনগর উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহামন চৌধুরী নাজলু বলেন, আমরা অনেকবার চেষ্ঠা করেছি পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করার জেলাতেও কমিটি পাঠিয়েছি অনেকবার কিন্তু কোন অদৃশ্য কারণে কমিটি অনুমোদ হচ্ছেনা বুঝতে পারছিনা। দুই সদস্যের কমিটি প্রায় ৪ বছর পার এ বিষয়ে তিনি বলেন, এটা আমাদের কিছু করার নেই জেলায় যদি পূর্ণাঙ্গ কমিটি না দেয় তাহলে আমরা কি করব।
ওসমানীনগর উপজেলা আ.লীগের সভাপতি আতাউর রহমান প্রায় ৪ বছর ধরে কমিটি গঠনে নিজেদের ব্যর্থতার বিষয়টি প্রত্যক্ষাণ করে বলেন, আমরা উপজেলা আ.লীগের পক্ষ থেকে অনেকবার চেষ্টা করেছি পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করার জন্য। জেলা আ.লীগের নিকট ৫ বার পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমা দিয়েছি কিন্তু জেলা আ.লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এডভোকেট লুৎফুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরীর মধ্যে কোন্দলের কারণে কমিটি অনুমোদন হয়নি। লুৎফুর রহমানকে উপজেলা আ.লীগের বিভিন অনুষ্ঠানে দাওয়াত দেয়া হলে তিনি আসবেন বলেন কিন্তু পরে আসেন না।
সিলেট জেলা আ.লীগের সদস্য ও উপজেলা আ.লীগের সাবেক সদস্য আবদাল মিয়া বলেন, উপজেলা আ.লীগের ব্যর্থতার কারণে প্রায় ৪ বছর ধরে পূর্ণাঙ্গ কমিটি হচ্ছে না। জেলা ও উপজেলা আ.লীগের কোন্দলে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, দলীয় কোন্দল আছে বলে আমি জানি না।
সিলেট জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, কোন্দল কোনো বিষয় নয় সুন্দর ভাবে একটি কমিটি দিতে গেলে কিছু সময় লাগবে। জেলা আ.লীগের সভাপতির সাথে কথা বলে পারলে জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে আমরা চেষ্টা করব ওসমানীনগরের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের।
সিলেট জেলা আ.লীগের ভারপাপ্ত সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডভোকেট লুৎফুর রহমান বলেন, শফিক চৌধুরী আমার মধ্যে কোনো দলীয় কোন্দল নেই। ওসমানীনগরের বর্তমান ও সাবেক কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কে আমরা বলেছিলাম দুই পক্ষ ৭৩জন বিশিষ্ট দুটি কমিটি আমাদের নিকট জমা দেয়ার জন্য সেটা থেকে আমরা পূর্ণাঙ্গ কমিটি করে দিব। কিন্তু তারা সময় মতো রিস্ট না দেয়ায় কমিটি করা সম্বব হয়নি। আমাদের তৃণমূল আ.লীগ ঠিক রয়েছে জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে কমিটি দেয়া হবে না। নির্বাচন পরে যে এমপি হবেন তিনিই কমিটি করে দিবেন না হলে নির্বাচনে সমস্যা হবে।
সম্পাদক : জে.এ কাজল খান
স্বত্ত্ব: দৈনিক বিজয়ের কণ্ঠ (প্রিন্ট ভার্সন)
০১৭১৮৩২৩২৩৯
Design and developed by syltech