এক ইনিংসে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ার বাঁচল মুশফিকের!

প্রকাশিত: ৮:৫২ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৪, ২০১৯

এক ইনিংসে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ার বাঁচল মুশফিকের!

ক্রীড়া ডেস্ক : ভারত সফরের আগে জাতীয় দল শেরে বাংলায় প্র্যাকটিস ম্যাচ খেললো দুটি। যার একটিতেও রান পাননি মুশফিকুর রহীম। প্রথম ম্যাচে মাত্র ৩ রানে আউট। তাও কোনো ভাল বা দুর্দান্ত ডেলিভারিতে নয়। সোজা ব্যাটে না, রিভার্স সুইপ ধরনের শট খেলে ক্যাচ দিয়ে আসা শর্ট থার্ডম্যান আর ওয়াইড গালির মাঝখানে।
আউট হবার ধরণটা একটু বেশীই দৃষ্টিকটু ছিল। নির্বাচক ও টিম ম্যানেজমেন্টের মন খারাপ। মুশফিকের এমন পরিপাটি ব্যাটিং শৈলি, উইকেটের সামনে, দুদিকে আর পিছনেও বাহারি শটস খেলার সামর্থ্য আছে পর্যাপ্ত। অথচ টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে উইকেটের সামনে শটস কম খেলে বারবার রিভার্স সুইপ আর স্কুপ খেলাটা তার অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে। এই রিভার্স সুইপ, স্কুপ আর স্লগ সুইপে যে কতবার আউট হয়েছেন, গুনে বের করা কঠিন।

.
মুশফিকের এমন অনুজ্জ্বলতায় একই ম্যাচে প্রতিপক্ষ দলের হয়ে খেলতে নেমে ২১ বলে ৩৯ রানের সাহসী ইনিংস খেলে ফেললেন তরুন ইয়াসির রাব্বি।
কথা উঠলো চট্টগ্রামের এই মিডল অর্ডারকে কেন এখনো একবারের জন্যও বিবেচনায় আনা হলো না? গতবছর বিশেষ করে, বিশ্বকাপের আগে অনেক ভাল খেলা, সব ফরম্যাটে এবং জাতীয় লিগ, বিসিএল, বিপিএল আর প্রিমিয়ার লিগে সমানে রান করেও জাতীয় দলে জায়গা পাননি ইয়াসির রাব্বি। অথচ তার চেয়ে কম ভাল খেলে আর কম রান করা একাধিক ব্যাটসম্যানের জাতীয় দলে অভিষেক হয়ে গেছে। তাহলে ইয়াসির রাব্বির কি হবে?
এ প্রশ্নের জবাবে প্রধান নির্বাচক বলেছিলেন, ‘ইয়াসির রাব্বির জায়গা হবে কি করে? তাকে নিতে হলে মিডল অর্ডারে একটি জায়গা খুঁজে বের করতে হয়। আমরা চিন্তা করছি রাব্বিকে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে সুযোগ দেয়ার। কিন্তু কার জায়গায়, কোথায় খেলবে? সেটাও ভেবে দেখার আছে।

.
মুশফিকের অবস্থা বিশেষ ভাল না। টেস্ট আর ওয়ানডেতে দলের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। বড় নির্ভরতা। আর সেই ব্যাটসম্যানেরই ২০ ওভারের ফরম্যাটে ফর্ম খুব খারাপ। কেন খারাপ? সে ব্যাখ্যায় গেলেন না প্রধান নির্বচক। শুধু বললেন, ‘ইয়াসির রাব্বিকে সুযোগ দিতে হলে মুশফিকের জায়গাটাই নিতে হবে।’ পরিসংখ্যানও জানান দিচ্ছে টেস্ট আর ওয়ানডেতে ধারাবাহিকভাবে আস্থা, আত্মবিশ্বাস ও দায়িত্ব নিয়ে ধারাবাহিকভাবে ভাল খেলা মুশফিক টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে কেমন যেন অন্যরকম। খাপছাড়া! নিজের সাজানো গোছানো ব্যাটিং শৈলি আর ক্রিকেট ব্যাকরণের প্রায় সব শট খেলার সামর্থ যার আছে, সেই তিনি কিনা ২০ ওভারের ম্যাচে উইকেটে গিয়েই বাড়তি কিছু করতে চান।
সোজা ব্যাটে মিড অফ, মিড অন, কভার, এক্সট্রা কভার আর মিড উইকেট ও ওয়াইড মিড উইকেটে ক্রিকেটীয় শট খেলা বাদ দিয়ে অযথা দিনকে দিন রিভার্স, স্কুপ আর স্লগ সুইপ খেলার চেষ্টা করছেন। এতে করে নিজের মেধা, প্রজ্ঞার সুবিচার করাও সম্ভব হচ্ছে না। ইনিংসগুলো অকালে ঝরে যাচ্ছে। খুব বেশি দুর যেতে হবে না। রোববারের ৪৩ বলে ৬০ রানের ইনিংসটির ঠিক আগের এক বছরের বেশি সময়ে শেষ ১০ ম্যাচে মুশফিকের ব্যাট একদমই কথা বলেনি। মোটেই রান (২৬, ৩২, ৫, ০, ১, ১, ৫, ১২, ৪, ১৫) = ১১৩।
এমন অনুজ্জ্বল ফর্ম নিয়ে মুশফিকের পক্ষে কতদিন আর টি-টোয়েন্টি খেলা সম্ভব হবে? এমন সন্দেহর বীজও অঙ্কুরিত হয়েছিল নির্বাচকদের মনে। সে ক্ষেত্রে মুশফিকের জায়গায় টি-টোয়েন্টি দলে বিকল্প কারোর খোঁজেও ছিলেন তারা।
এই যখন অবস্থা, ঠিক তখন জ্বলে উঠলেন মুশফিক। বেশ কটি রিভার্স সুইপ আর স্কুপ খেলেছেন কালও (রোববার)। তারপরও দল জিতিয়ে মাঠ ছেড়েছেন বীরের বেশে।

তাই খালি চোখে রোববার দিল্লির ম্যাচে ‘খলনায়ক’ থেকে আবার নায়ক বনে গেলেন তিনি। সবার ভাবনা, তিন বছর আগে ব্যাঙ্গালুরুর এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে যে ভুল করেছিলেন মুশফিকুর রহীম, ৩ নভেম্বর রোববার রাতে সেই ভারতের বিপক্ষে ভারতের মাটিতে আর ভুল করেনি মুশফিক।

.
অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে জয়ের খুব কাছে গিয়েও দায়িত্ব-কর্তব্যে ছিলেন অবিচল। জানতেন ভাল খেলা, সাহসী স্ট্রোক প্লে’ই শেষ কথা নয়। পঞ্চাশের ঘরে পা রাখাতেই সব দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। আসল কাজ হলো, ম্যাচ জিতিয়ে খেলা শেষ করে ফেরা।
ক্ষনিকের ভুলে জয় হাতছাড়া হতে পারে। যেমন হয়েছিল ২০১৬ সালের ২৩ নভেম্বর। শেষ তিন বলে ৪ উইকেট হাতে থাকা অবস্থায় ২ রান করা হয়নি। তাইতো এবার আর আত্মতুষ্টিতে না ভুগে দল জিতিয়ে বীরের বেশেই মাঠ ছাড়লেন।
৪৩ বলে ৬০ রানের হার না মানা ইনিংস খেলে মুশফিকুর রহীম এখন জাতীয় বীর। প্রশংসার বন্যায় ভাসছেন এ পরিশ্রমি অধ্যাবসয়ী উইকেটকিপার কাম মিডল অর্ডার। তাকে নিয়েই রাজ্যের কথা-বার্তা। গোটা দেশে এখন মুশফিক বন্দনা।
সবার কথা একটাই, মুশফিক শুধু সাহসী বীর, দক্ষ উইলোবাজই নন। একটু দায়িত্ব সচেতন হয়ে খেললে আর শেষ পর্যন্ত উইকেটে থাকার ধৈর্য্য ও মনোসংযোগটা থাকলে ‘বেস্ট পসিবল’ ম্যাচ উইনারও।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বশেষ ২৪ খবর