ঢাকা ১০ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১:০৫ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৪, ২০১৯
ক্রীড়া ডেস্ক:: কাঠমান্ডুর এসএ গেমস কী দুঃসহ স্মৃতি হয়ে থাকবে বাংলাদেশের ফুটবলের জন্য? বাস্তবতা তো তাই বলছে। প্রথম ম্যাচে ভুটানের কাছে ১-০ গোলে হারের পর এবার জামাল ভূঁইয়ারা ড্র করে পয়েন্ট খুইয়েছেন। মঙ্গলবার দশরথ স্টেডিয়ামে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে মালদ্বীপের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করেছে বাংলাদেশ। ৩০ মিনিটে রিয়াদুল হাসান রাফি হেড করলে মালদ্বীপের গোলকিপার ফিস্ট করার পর আকরাম আবদুল ঘানির গায়ে লেগে নিজেদের জালে বল জড়িয়ে যায়। এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। ৭০ মিনিটে মাহুদে হোসাইন সেই গোল ফিরিয়ে দিয়ে মালদ্বীপকে সমতায় ফেরান।
উশুতে ফারুকের রুপা বাংলাদেশ যে ক’টি ইভেন্ট থেকে স্বর্ণ জেতার প্রত্যাশা করছে, তার একটি উশু। মঙ্গলবার উশুর প্রথমদিনে রুপালি হাসি হেসেছেন বাংলাদেশের ওমর ফারুক। ছেলেদের চ্যাং চুয়ান ইভেন্টে রুপা জেতেন তিনি। এই ইভেন্টে ফারুকের স্কোর ৯.৩৪। স্বর্ণ জেতা নেপালের বিজয় সানজিলের স্কোর ৯.৪৮। চ্যাং চুয়ান ইভেন্টে ব্রোঞ্জ জিতেছেন শ্রীলংকার সামৌ প্রভাখারা। এছাড়া সানদা -৫২ কেজিতে ফাহমিদা তাবাসসুম, সানদা -৭০ কেজিতে লিটন আলী এবং চ্যাং কুয়ান থাউলুতে নুর বাহের বেগম একটি করে ব্রোঞ্জপদক জেতেন।
শুটিংয়ে দুটি রুপা
সাতদোবাদোর শুটিং কমপ্লেক্সে পুরুষদের ব্যক্তিগত ৫০ মিটার এয়ার রাইফেল থ্রি পজিশনে হতাশ করেছেন আবদুল্লাহ হেল বাকি। তিনি হয়েছেন সপ্তম আর ইউসুফ ষষ্ঠ। এই ইভেন্টে ফাইনালে উঠতেই পারেননি শোভন চৌধুরী। তবে ব্যক্তিগত ইভেন্টে না পারলেও ছেলেদের ৫০ মিটার এয়ার রাইফেল থ্রি পজিশন দলগত ইভেন্টে রুপা জিতেছে বাংলাদেশ। এই ইভেন্টে খেলেন বাকি, ইউসুফ এবং শোভন। মেয়েদের ১০ মিটার এয়ার রাইফেল দলগত ইভেন্টেও কাল রুপা জিতেছে বাংলাদেশ।
রেকর্ড গড়ে মাহফুজের রুপা ইতিহাস তো বটেই। ভারতীয় হাইজাম্পার চেতন বালাসাব ও বাংলাদেশের মাহফুজুর রহমানের ক্রস এক। সমান পয়েন্ট। জাজরা এই দু’জনের আর কোনো দোষ খুঁজে পেলেন না। অগত্যা দু’জনকেই রুপা দিলেন। কাঠমান্ডুতে এসএ গেমসে প্রথম এমন ঘটনা ঘটল। অ্যাথলেটিক্সে দু’জনের রুপা জেতার রেকর্ড কারও জানা নেই। মঙ্গলবার বাংলাদেশের হাইজাম্পারদের মধ্যে সেরা রেকর্ড গড়ে গেমসে রুপা জিতলেন মাহফুজ। ২.১৬ মিটার উচ্চতায় লাফিয়ে ভারতের চেতনের সঙ্গে যুগ্মভাবে জিতলেন রুপা। ঘরের ট্র্যাকে জাতীয় মিটে তার আগের রেকর্ড ছিল ২.১৫ মিটারের।
কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার পাইকপাড়ার মাহফুজকে ক্রিকেট, ফুটবল কোনো কিছুই টানেনি। দীর্ঘদেহী এই অ্যাথলেট শখের বসে খেলতেন ভলিবল। স্কুল-কলেজের ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় চেনা মুখ ছিলেন। তাকে হটিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় সাধ্য কার। অবশেষে থিতু হলেন অ্যাথলেটিক্সে। নৌবাহিনীর কোচ রফিকুল ইসলাম মানিক চিনতে ভুল করেননি। অল্প সময়েই আন্তর্জাতিক সাফল্য পেয়ে যান মাহফুজ। গত এসএ গেমসে হয়েছিলেন চতুর্থ। এবার রুপা।
মাহফুজুর রহমানের কথায়, ‘খুব খুশি আমি। আত্মবিশ্বাস ছিল ভালো করব। ভারতে জুনিয়র অ্যাথলেটিক্সে পদক জিতেছি। গেমসে ভালো কিছু করার প্রেরণা তখন থেকেই ছিল। ভারতের সারভেশ অনিলের ২.২৬ মিটারের রেকর্ড ছিল। আমি যখন ২.১৫ মিটারে খেলেছি, তখন বুঝতে পারছি কিছু একটা হবে। টেকনিক্যাল দিকগুলো ক্লিয়ার করলে ভবিষ্যতে আরও ভালো হবে।’
তার প্রতিপক্ষ ভারতের দুই অ্যাথলেট সারভেশ অনিল ও চেতন বালাসাব। একজনের জাতীয় রেকর্ড ২.২৬, অন্যজনের ২.২৫। তাদের সঙ্গে সমানতালে লড়লেন মাহফুজুর। ২ মিটারের পরই ঝরে গেলেন শ্রীলংকা, নেপাল ও পাকিস্তানের অ্যাথলেটরা। ঘরের রেকর্ড ২.১৫ থাকায় আত্মবিশ্বাসের জ্বালানি পেয়েছিলেন আগেই। শেষ পর্যন্ত ২.১৬-তেই আটকে গেলেন মাহফুজ ও চেতন। প্রায় ১৫ মিনিট চুলচেরা বিশ্লেষণ করে টেকনিক্যাল ও জাজ প্যানেল দু’জনকেই রুপার জন্য মনোনীত করেন। আর ২.২১ মিটার উচ্চতায় লাফিয়ে স্বর্ণ জিতলেন সারভেশ। পরে তিনি রেকর্ডের জন্য ২.৩০ মিটার ট্রাই করলেও পারেননি।
সারভেশের কাছে মাহফুজের বিষয় জানতে চাইলে বলেন, ‘অনেক উন্নতি করেছে বাংলাদেশ। প্রথমে তাকে পাত্তা দিইনি। কিন্তু তার প্রথম জাম্প দেখার পরই ধারণা পাল্টে যায়। দুই মিটারের পর যখন পাল্লা দিয়ে সে লাফাচ্ছিল, তখন বুঝতে পেরেছি একটা পদক সে পাবে। কিন্তু তার কাছে হেরে যাব সেটি এক মুহূর্তের জন্যও মনে হয়নি। কারণ আমার ঘরের রেকর্ড ২.২৬ মিটারের। পরিচর্যা করলে সে আরও ভালো করবে। টেকনিক্যাল উন্নতি দরকার।’
মাহফুজ জানান, ‘ব্যক্তিগত সেরাটা দিতে পেরেছি। ভারত থেকে অনুশীলনে অনেক পিছিয়ে আছি আমরা। তারা বাইরে অনুশীলন করে। প্র্যাকটিস ভালো করতে পারলে আমারও উন্নতি হবে। খেলাধুলায় পুরোটা অবদান নৌবাহিনীর কোচ রফিকুল ইসলাম স্যারের।’
একজোড়া গ্লাভসে দুই স্বর্ণ কাঠমান্ডুর সাতদোবাদোতে পুরুষদের ব্যক্তিগত কুমি অনূর্ধ্ব-৬০ কেজি ওজন শ্রেণিতে পাকিস্তানের জাফরকে ৭-৩ পয়েন্টে হারিয়ে কারাতেতে প্রথম সোনা জেতেন সেনাবাহিনীর মো. আল-আমিন। তার সেই গ্লাভস নিয়ে দেশের হয়ে দ্বিতীয় স্বর্ণপদক জেতেন হুমায়রা আক্তার অন্তরা। তিনি স্বাগতিক নেপালের অনু গুরংকে ৫-২ পয়েন্টের ব্যবধানে হারিয়ে সোনা জেতেন। ফলে একজোড়া গ্লাভসে দুই সোনার পদক জিতল বাংলাদেশ।
পুরুষ টিটি দলের জয় টেবিল টেনিসের পুরুষ দলগত বিভাগে জিতেছে বাংলাদেশ। মঙ্গলবার লাইক্ষনছড়াতে অনুষ্ঠিত খেলায় বাংলাদেশ ৩-২ সেটে হারায় পাকিস্তানকে। এতে ব্রোঞ্জপদক নিশ্চিত হয়েছে বাংলাদেশের। আজ রুপার জন্য স্বাগতিক নেপালের সঙ্গে লড়বে বাংলাদেশ।
সম্পাদক : জে.এ কাজল খান
স্বত্ত্ব: দৈনিক বিজয়ের কণ্ঠ (প্রিন্ট ভার্সন)
০১৭১৮৩২৩২৩৯
Design and developed by syltech