ঢাকাদক্ষিণে বাণিজ্যিকভাবে জলঢুপি আনারস চাষ শুরু

প্রকাশিত: ৫:৩৬ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৫, ২০১৮

ঢাকাদক্ষিণে বাণিজ্যিকভাবে জলঢুপি আনারস চাষ শুরু

গোলাপগঞ্জ সংবাদদাতা
জলঢুপি আনারস দেখতে আকারে ছোট ও গোলাকার। টকটকে হলদে বর্ণের এই ফলটি খেতে ভারী মিষ্টি। দেখে যে কারোই জিভে জল আসবে। বিয়ানীবাজারের নাম করা এ আনারস ছাড়িয়ে গেছে সিলেট ও শ্রীমঙ্গলের খ্যাতি। প্রকৃতির টানে সিলেট ও মৌলভীবাজারে বেড়াতে যাওয়া লোকজনের কাছে সমাধিত জলঢুপি মিষ্টি আনারস। সিলেট-বিয়ানীবাজার রোড হয়ে সিলেট শহরে আসা লোকজনও ফেরার পথে এই ফলটিকে সঙ্গী হিসেবে বেছে নেন। টিলা ও বালি মাটিতে ভরপুর থাকায় আনারসের রাজ্য খ্যাত শ্রীমঙ্গল হলেও বিয়ানীবাজারও এর থেকে কোন অংশে পিছিয়ে নেই। যেহেতু, আনারস চাষের আদর্শ ভূফমি হচ্ছে টিলা। সেহেতু, গোলাপগঞ্জের বেশ কয়েকটি এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে এই ফসল চাষের বেশ সম্ভাবনা রয়েছে।

এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে গোলাপগঞ্জের বিভিন্ন টিলায় শ্রীমঙ্গল থেকে চারা সংগ্রহ করে বাণ্যিজিকভাবে চাষাবাদ শুরু করেছেন অনেক উদ্যোগি কৃষক ও প্রবাসী। বিশেষ করে ঢাকাদক্ষিণ ইউনিয়নের ৬নং দত্তরাইল এলাকায় প্রায় ২ হাজার শতক টিলা জুড়ে জলঢুপি আনারসের চাষাবাদ করা হয়েছে। সংখ্যার দিক দিয়ে প্রায় ২ লক্ষ চারা রোপন করা হয়েছে মর্মে চাষিরা জানিয়েছেন।

তারা জানান, শ্রীমঙ্গল ও বিয়ানীবাজারের কৃষকদের সফলতা দেখে তারাও এই ফল চাষে উদ্যোগি হয়েছেন। তবে, সরকারি সহায়তা পেলে ওই দুই উপজেলার ন্যায় গোলাপগঞ্জেও এই ফল চাষে ব্যাপক সফলতা আসবে। তারা বলেন, গোলাপগঞ্জের ঢাকাদক্ষিণ, ভাদেশ্বর ও লক্ষণাবন্দ এলাকায় প্রচুর টিলা জমি রয়েছে। জলঢুপি আনরসের আদর্শ মাটি হিসেবে এসব জায়গায় এর বাম্পার ফলন হবে। এজন্য সরকারিভাবে কৃষকদের সহায়তা প্রদান করলে অনেক কৃষক স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হবে। এতে করে যেমন, তারা আর্থিকভাবে স্বাবলম্বি হবেন, তেমনিভাবে বেকারত্বও দূর হবে।

সরেজমিনে ঢাকাদক্ষিণের দত্তরাইল এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ঢাকাদক্ষিণ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মৃত আব্দুল মতিন চান মিয়ার পুত্র বর্তমান লন্ডন প্রবাসী আব্দুল আজিজ রাসেল নিজ মালিকানাধীন ৪টি টিলায় প্রায় ২ হাজার শতক ভূমিতে শ্রীমঙ্গল থেকে জলঢুপি মিষ্টি আনারসের চারা এনে রোপণ করেছেন। পরিত্যাক্ত ৪টি টিলার ঝোঁপঝাড় কেটে চাষাবাদের উপযোগী করে কমপক্ষে ২ লাখ আনারসের চারা রোপণের পরিকল্পনা করেছেন। ইতিমধ্যে প্রায় ১ লাখ আনারস চারা রোপণের করা হয়েছে। তিনি বলেন, জলঢুপ আনারস চাষ শুধু লাভজনক নয়, এটা প্রাকৃতিক পরিবেশের সৌন্দর্য্য অনেক গুণ বাড়িয়েও দেয়। দূর দেখলে এসব টিলাকে একেকটি পর্যটন স্পট বলে হবে। সারিবদ্ধভাবে লাগানো হলুদ বর্ণের আনারসগুলো যেকারো নজর কাড়বে। তিনি আনারস চাষের সাথে সাথে কাগজি লেবু, কমলা, মালট্রা, কলা চাষের পরিকল্পনাও হাতে নিয়েছেন বলে জানান।

শ্রীমঙ্গল থেকে আনরস চারা ক্রয় ও তা গোলাপগঞ্জ নিয়ে এসে রোপন পর্যন্ত কী পরিমাণ খরচ পড়তে পারে বা তা পরবর্তীতে বেচার ক্ষেত্রে ক্রেতারা কতটা দাম দিয়ে কিনতে পারবেন এসব জানতে চাইলে বাগান তদারকি কাজে নিয়োজিত ইউনুস মিয়া (আরমান) জানান, আমরা মূলত ২০ লক্ষ টাকার বাজেট নিয়ে চাষাবাদ শুরু করেছি। প্রতি পিস আনারস চারা শ্রীমঙ্গল থেকে ৩-৫ টাকায় কেনা হয়। এছাড়া পরিবহন খরচ বাবদ প্রতি পিছে ১টাকা ও প্রতি পিছ আনারস রোপনে শ্রমিক খরচ বাবদ ২টাকা দিতে হয়। তিনি বলেন, ফলন ভালো হলে বিক্রি করে দ্বিগুণ আয় সম্ভব। তবে আনারস আগাম বিক্রি করা সম্ভব হলে লাভের অংশ আরো বৃদ্ধি পাবে। মৌসুমে আনারস যে দরে বিক্রি করতে হয়, তার চেয়ে আরো ভালো দামে বিক্রি করা যাবে। যেখানে প্রতি জোড়া আনারস আমাদের ২০-৩০ টাকা বিক্রি করতে হবে, সেখানে আমরা ৩০-৪০ টাকার বেশী বিক্রি করতে পারবো। এছাড়া ২-৩ মাস বয়সী আনারস ১৩-১৪ মাস পর বিক্রয়ের উপযোগী হবে।

এব্যাপারে গোলাপগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার মো. খায়রুল আমিন বিজয়ের কণ্ঠকে জানান, গোলাপগঞ্জ উপজেলায় শত শত ছোট বড় টিলা থাকায় আনারস চাষের জন্য উপযুক্ত ভূমি। আনারস চাষে দোঁ-আশ ও বেলে মাটির জমি প্রয়োজন, যা রয়েছে গোলাপগঞ্জ জুড়ে। এছাড়া কানিশাইলের একটি টিলায় উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে আনারস চাষ শুরু হয়েছে। সরকারিভাবে আনারস চাষে যতার্থ পরামর্শ ও সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বশেষ ২৪ খবর