দেশ ও দেশের মানুষকে বেশি ভালোবাসে জামায়াত কর্মীরা

প্রকাশিত: ১০:৪০ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১৫, ২০২৪

দেশ ও দেশের মানুষকে বেশি ভালোবাসে জামায়াত কর্মীরা

 

 

নিজস্ব প্রতিবেদক
আব্দুল আলীম ইমতিয়াজ

 

কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সিলেট মহানগর জামায়াতের আমীর মোঃ ফখরুল ইসলাম বলেছেন- আল্লাহ আমাদেরকে উন্মুক্ত একটি পরিবেশে দীর্ঘদিন পর একত্রিতভাবে, নিঃসংকোচে, নির্ভয়ে রুকন সম্মেলন করার তৌফিক দিয়েছেন। জামায়াতের দায়িত্বশীল ও কর্মীরা নিজ জীবনের চেয়ে সংগঠনকে বেশি ভালোবাসে। নিজের জীবনের চেয়ে দেশমাতৃকার মানুষকে বেশি ভালোবাসে।
.
তিনি সোমবার সকাল ১০ টায় সুনামগঞ্জ জেলা জামায়াতের রুকন সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। জেলা জামায়াতের আমীর উপাধ্যক্ষ মাওলানা তোফায়েল আহমদ খানের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি মোমতাজুল হাসান আবেদের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য মাওলানা মোঃ হাবিবুর রহমান।

.
প্রধান অতিথি বলেন- আপনারা সবাই সংগঠনের শপথের কর্মী যে শপথ গ্রহণ করেছিলেন শহীদ আমীরে জামায়াত মতিউর রহমান নিজামী, দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীসহ অসংখ্য অগণিত শহীদগণ। আমরা সেই শপথকে ধারণ করেই পথ চলছি। আজকের এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য অনেকগুণ বেড়ে গিয়েছে। হাজারো লোক শহীদ হয়েছেন। হাজার হাজার লোক পঙ্গুত্ববরণ করেছেন। লক্ষ লক্ষ লোক আহত হয়েছেন। আজকে আমরা যদি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করি তাহলে আল্লাহ হয়তো আমাদের উপর কঠিন পরিস্থিতি দিয়ে দিতে পারেন। আমরা যখন নিষ্পেষিত, নির্যাতিত ছিলাম তখন আমরা অনেক নমনীয়, ভদ্র ছিলাম। এখন আমাদের সামনে অনেক সুযোগ এসেছে। এখন যেন কারও সাথে আমাদের আচরণ, ব্যবহার বদলে না যায়। অন্যথায় আল্লাহ আমাদের উপর অসন্তুষ্ট হয়ে যাবেন। আগে আমরা যতটুকু আল্লাহর অনুগ্রহ চেয়েছি, চোখের অশ্রুতে জায়নামাজ ভিজিয়েছি এখন আমাদেরকে আরও বেশি চোখের পানি ফেলে, আহাজারি করে মঞ্জিলে পৌঁছার পথকে সুগম করতে হবে।
.
তিনি বলেন-আমাদেরকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল কিন্তু আল্লাহ তাঁর একান্ত অনুগ্রহে মাত্র চারদিনের ব্যবধানে আমাদেরকে সগৌরবে সসম্মানে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। আল্লাহ কুরআনে তাঁর নূরকে প্রজ্জ্বলিত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন যা বিগত ৫ আগস্ট আমরা আবার প্রত্যক্ষ করেছি। আল্লাহর কৌশলের চেয়ে বড় কৌশল যে আর কারও নেই তা আবার প্রমাণিত হলো।
.
তিনি বলেন -স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার সরকারকে সরাবার জন্য রাজনৈতিক দল অনেক কর্মসূচি পসলন করেছে। হরতাল-অবরোধ করেছে, বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশ করেছে কিন্তু রাজনৈতিক দল সেটা করতে পারে নি। এই কাজটি সম্ভব করেছে দেশের শিশু-কিশোর এবং তরুণেরা। তারা তাদের বুকের রক্ত রাজপথে ঢেলে দিয়েছে। বুককে সম্মুখে দিয়ে দুই হাত মেলে দাঁড়িয়ে বন্দুকের গুলিকে আলিঙ্গন করেছে। সন্তানের পাশে পিতা-মাতা নেমে আসলেন। বড় সন্তান না থাকায় মায়েরা ফ্যাসিবাদের পতনের জন্য কোলের শিশুকে নিয়ে রাস্তায় নেমে এসেছিলেন। ভাইয়ের মৃত্যুতে ৭ বছরের শিশু রাস্তায় নেমে এসেছিল। আসার সময় মাকে বলে এসেছিল মরে গেলে যেন না কাঁদে। ফলে এই আন্দোলনকে কেউ দমিয়ে রাখতে পারে নি।
.
ফখরুল ইসলাম বলেন- যদি ৫ আগস্টের পট পরিবর্তন না হতো। গণবিপ্লব, গণঅভ্যুত্থান না হতো তাহলে আমাদের অবস্থান কোথায় থাকতো। যারা আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিল তারা নিজেরাই তাদের ফাঁদে পড়ে পরণতি ভোগ করছে।
.
প্রিয় ভাইয়েরা -৫ আগস্টের পর অনেকই বলেন বিপ্লব হয়েছে। আমরা বলবো বিপ্লব নয়, ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে। আমাদের বিপ্লব আরও অনেক দূর। সেখানে পৌঁছতে হলে আমাদেরকে আরও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। অনেক চড়াই উৎরাই পাড় হয়ে গন্তব্যে পৌঁছতে হবে। এর জন্য আমাদেরকে তৈরি হতে হবে। আমাদের ঈমান, আমাদের দক্ষতা, যোগ্যতা, জ্ঞান-গরিমা বাড়াতে হবে। আচার-ব্যবহার, দায়িত্বের প্রতি আন্তরিকতা, আনুগত্যের পরাকাষ্ঠা একটা স্ট্যান্ডার্ড মানে নিয়ে যেতে পারি তাহলেই কেবল আমাদের আহত, পঙ্গুত্ববরণকারী ও শহীদদের ত্যাগ সফল হবে এবং আমরা আমাদের মঞ্জিলে পৌঁছতে পারবো, ইনশাআল্লাহ।
.
ফখরুল ইসলাম বলেন -দেশের মানুষ এখন নতুন করে জামায়াতকে নিয়ে চিন্তা করছে। একটি স্বৈরাচারের পতন হলে ঘুষ দুর্নীতি বন্ধ হয়নি। চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসবাদ বন্ধ হয়নি। এজন্য আগামীর স্বপ্নের বাংলাদেশ গঠনে সমাজের সকল স্তরের মানুষ জামায়াতকে একটি যোগ্য সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করছে। মানুষের এই ভালোবাসাকে মূল্যায়ন করে একটি সমৃদ্ধ জাতি গঠনে জামায়াতের জনশক্তিদেরকে একটি দায়িত্বশীল ভূমিকা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।
.
তিনি বলেন-জামায়াতের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র হচ্ছে। ছোট্ট কোনো বিষয়কে ফলাও করে প্রচার করা হচ্ছে। শত্রুতা আগেও ছিল, এখনো আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে। এজন্য আমাদের প্রত্যেকটি কাজ ব্যক্তি, সংগঠনের কল্যাণের চিন্তা রেখে করতে হবে। সংগঠনের দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে ঐক্যের চিন্তার বাহিরে কটুক্তি, কটাক্ষমূলক বক্তব্য থেকে বিরত থাকতে হবে। সর্বোপুরি আল্লাহর নিকট সাহায্য চাইতে হবে।সকল জনশক্তিদের নিয়ে ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচি পালন করতে হবে। জনশক্তিদের মানোন্নয়নের দিকে মনোযোগ দিতে হবে।
.
এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর এডভোকেট মুহাম্মদ শামসউদদীন, অধ্যাপক মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ, সহকারী সেক্রেটারি এডভোকেট মোঃ নূরুল আলমসহ জেলা, বিভিন্ন উপজেলার দায়িত্বশীল ও রুকনবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
.
উল্লেখ্য সম্মেলনে আগামী ২০২৫-২০২৬ সেশনের জন্য রুকনগণ জেলা আমীর পদে সরাসরি ব্যালটের মাধ্যমে ভোট প্রদান করেন। ভোট গণনা শেষে সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত সারা দেশের জেলা শাখার আমীরগণের নাম প্রকাশ করা হবে

সর্বশেষ ২৪ খবর