ঢাকা ১৮ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৪ঠা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৯:১০ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৬, ২০১৯
ডেস্ক প্রতিবেদন : ১৫ আগস্টের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়লেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, কোনো পরিবারে একজন মানুষ মারা গেলে তারা সে শোক সইতে পারে না। আর আমি কত শোক নিয়ে এখনও বেঁচে আছি। শুধু বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্যই কাজ করে যাচ্ছি। তার আত্মা যেন শান্তি পায়।
বুধবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী কৃষক লীগের জাতীয় সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী। তার বক্তব্যে কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা উঠে আসে। এ সময় আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি।
.
আওয়ামী কৃষক লীগের সাংগঠনিক নেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল এ দেশের কৃষি, কৃষকের ভাগ্যের উন্নয়ন। যারা ফসল ফলায় তারা যেন ভালো থাকে। কারণ তিনি দেখেছেন, যে কৃষক দেশের মানুষের খাদ্যের জোগান দেয় তাদের পরনে কাপড় থাকে না। তারা তিন বেলা ভাত খেতে পারে না। বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, কৃষকের স্বার্থ রক্ষার পাশাপাশি আমরা উন্নত হবো, শিল্পায়ন করব। তবে কৃষকদের বা কৃষিকে বাদ দিয়ে নয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের মনে আছে কৃষকরা সার পেত না। সার চাইতে গিয়েছিল বলে বিএনপি ১৮ জন কৃষককে গুলি করে হত্যা করেছিল। তাদের অপরাধ ছিল ফসল উৎপাদনের জন্য তারা সার চাচ্ছে। আওয়ামী লীগ যখনই সরকারে এসেছে সঙ্গে সঙ্গে প্রথম ক্যাবিনেট মিটিংয়েই নন-ইউরিয়া সারসহ সব সারের দাম কমিয়ে দিলাম। চার দফা আমরা সারের দাম কমিয়েছি। আমরা ভতুর্কি দিচ্ছি, আমরা উচ্চ দামে কিনে কৃষকদের কম দামে দিচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ কৃষিনির্ভর দেশ। কৃষকরাই বাংলাদেশকে বাঁচিয়ে রাখে। কৃষক ফসল ফলায়, আমরা খেয়ে বেঁচে থাকি। একটি সমাজ ও দেশের জন্য কৃষক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেই কৃষকের সুবিধা দেয়া আমাদের কর্তব্য। ১৯৭২ সালে ১৯ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু কৃষক লীগ প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। তারা যেন কৃষকের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কথা বলতে পারে।’
.
সরকার কৃষকের অধিকার সংরক্ষণে কাজ করছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আগে কৃষক ফসল ফলাত, কিন্তু তার পেটে খাবার ছিল না। তাদের পরনের কাপড় ছিল না। কৃষক যেন তাদের ন্যায্য অধিকার আদায় করতে পারে, সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশে ই-কৃষি চালু হয়েছে। কৃষকরা যেকোনো সমস্যার সমাধানে ‘১৬১২৩’ নম্বরে কল করে জানতে পারে। আমাদের কৃষকরাও এখন যথেষ্ট পরিপক্ব। মোট কথা, কৃষকদের যত ধরনের সুবিধা দেয়ার কথা, আমরা তা দিচ্ছি।’
কৃষিখাতে গবেষণার ওপর গুরুত্ব দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘গবেষণা ছাড়া কৃষি উন্নয়ন সম্ভব নয়। আমরা গবেষণার মাধ্যমে উন্নতমানের বীজ উৎপাদন করছি। বর্তমানে দেশেই গবেষণার মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের সবজি ১২ মাসই উৎপাদন করা যাচ্ছে। আমরা কৃষি উন্নয়নে গুরুত্ব দিচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। খাদ্য উৎপাদনে সারাবিশ্বে আমরা চতুর্থ অবস্থানে আছি। বাংলাদেশে একটি মানুষও আর গৃহহারা থাকবে না। তাদের প্রত্যেকের যেন মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়, আমরা সে ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কৃষিকাজে যারা ভালো ফলাফল দেবে তাদের গবেষণা, উৎপাদন বিতরণ-সব ক্ষেত্রে যারা নাম ধনে রাখতে পারবে তাদের পুরস্কৃত করার জন্য বিশেষ তহবিল গঠন করেছিলেন। ৭৫-এর পর কৃষক এবং কৃষি গবেষকরা যে পুরস্কার পাবে সে পথও বন্ধ করে দিয়েছে। বিএনপি আমলে গবেষণা ক্ষেত্রে কোনো অর্থই বরাদ্ধ দেয়া হতো না। আমরা যখন আবার সরকার গঠন করি তখন পুনরায় এটা চালু করি। একই সঙ্গে, আমরা ‘বঙ্গবন্ধু কৃষি পুরস্কার ট্রাস্ট আইন, ২০১৬’ প্রণয়ন করি। আমরা সবসময় কৃষিকে গুরুত্ব দিয়েছিলাম বলেই দেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে।”
তিনি বলেন, ‘আমরা আবার ক্ষমতায় এসে দেখলাম, গবেষণা খাতে একটি টাকাও বরাদ্দ নেই। বীজ বিতরনের ব্যবস্থাও বেসরকারি খাতে দেয়া হয়েছিল। ৭৫-এ বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে শুধু গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেয়া হয়নি, বেঁচে থাকার সব অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছিল।’ সম্মেলন শেষে এলাকায় গিয়ে কৃষকদের নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জাতীয় সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন সভাপতিত্ব করেন কৃষক লীগের সভাপতি আলহাজ মোতাহার হোসেন মোল্লা। অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথিদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। এর পর মঞ্চে উপবিষ্ট অতিথিদের ব্যাজ পরিয়ে দেয়া হয়। কৃষক লীগের প্রকাশনা মোড়ক উম্মেচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর উদ্বোধনী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয়। পরিবেশিত হয় ‘যদি রাত পোহালে শোনা যেত বঙ্গবন্ধু মরে নাই’, ‘কৃষক বাঁচাও আর দেশ বাঁচাও শেখ হাসিনার নির্দেশ’ গান।
শোক প্রস্তাব পাঠ করেন নাজমুল ইসলাম মানু। মুক্তিযুদ্ধসহ সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা করা হয়।
অনুষ্ঠানে সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করেন কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খন্দকার শামসুল হক রেজা। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ও সর্বভারতীয় কৃষাণ সভার সাধারণ সম্পাদক অতুল কুমার অঞ্জন।
সম্পাদক : জে.এ কাজল খান
স্বত্ত্ব: দৈনিক বিজয়ের কণ্ঠ (প্রিন্ট ভার্সন)
০১৭১৮৩২৩২৩৯
Design and developed by syltech