ঢাকা ১৭ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১:০৮ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২১, ২০১৯
ডেস্ক প্রতিবেদন : আগামীকাল রবিবার (২২ ডিসেম্বর) রাজধানীর বনানী করবস্থানে সমাহিত হবেন ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ।
এর আগে রবিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত তাঁর মরদেহ ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামে সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাখা হবে। দুপুর সাড়ে ১২টায় আর্মি স্টেডিয়ামেই জানাজা শেষে বনানী কবরস্থানে তাঁর লাশ দাফন করা হবে।
শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) রাত ৮টা ২৮ মিনিটে রাজধানীর বসুন্ধরার অ্যাপোলো হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি দুরারোগ্য মস্তিষ্কের ক্যান্সারে ভুগছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে দেশজুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর প্রয়াণে পৃথক শোক জানিয়েছেন।
এ ছাড়া সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তাঁর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন।
রাষ্ট্রপতি তাঁর শোক বার্তায় ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান স্যার ফজলে হাসান আবেদের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। রাষ্ট্রপতি দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে তাঁর অবদানের কথা স্মরণ করেন। তিনি আরো বলেন, দেশের উন্নয়নে তাঁর অবদান জাতি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।রাষ্ট্রপতি মরহুমের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্রাকের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান স্যার ফজলে হাসান আবেদের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। এক শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালে ফজলে হাসান আবেদ ইংল্যান্ড থেকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সমর্থন আদায়, তহবিল সংগ্রহ ও জনমত গঠন করেন। সদ্য স্বাধীন যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনেও তিনি কাজ করেন। তিনি আরো বলেন, তাঁর মতো মানবতাবাদী মানুষের মৃত্যুতে দেশ ও জাতির এক অপূরণীয় ক্ষতি হলো।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর মাগফেরাত কামনা করেন ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পরবর্তী পরিস্থিতিতে বিধ্বস্ত দেশে গণমানুষের জন্য কিছু করার অদম্য ইচ্ছা নিয়ে মাঠে নামেন তিনি। হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচংয়ে জন্ম নেওয়া মানুষটি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসনকে সামনে রেখে সুনামগঞ্জের শাল্লায় ব্র্যাকের কর্মসূচি শুরু করেছিলেন। সেই ব্র্যাক দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিশ্বজুড়ে আলো ছড়ায়।
ফজলে হাসান আবেদের মা কেবল গ্রামের দরিদ্র পরিবারের অন্নবস্ত্র আর চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করতেন না, একই সঙ্গে রাতের অন্ধকারে যে বাতি জ্বালাতে পারে না, তার জন্য কেরোসিন পাঠাতেন। ব্র্যাক প্রতিষ্ঠার পেছনে শৈশবের সেই স্মৃতিটা আবেদের স্বপ্নের অন্তরালে অনুপ্রেরণা জোগাত। তিনি ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্সে ফিজিকসে ভর্তি হন।
কিন্তু পরে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ে নেভাল আর্কিটেকচারে ভর্তি হন, কিন্তু দুই বছর লেখাপড়া করার পরে তিনি এ বিষয়ে পড়া বাদ দিয়ে লন্ডনে গিয়ে অ্যাকাউন্টিংয়ে ভর্তি হন। ১৯৬২ সালে কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টিংয়ের ওপর তিনি প্রফেশনাল কোর্স সম্পন্ন করেন। ১৯৬৮ সালে আবেদ শেল অয়েল কম্পানিতে হেড অব ফিন্যান্স হিসেবে যোগ দিলেন।
দুই বছরের মাথায় দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের পাশাপাশি প্রাকৃতিক বিপর্যয় হিসেবে দেখা দিল ঘূর্ণিঝড়। চট্টগ্রাম অঞ্চল ছাড়াও নোয়াখালীর বিস্তীর্ণ অঞ্চল লণ্ডভণ্ড হলো। মারা গেল প্রায় তিন লাখ মানুষ। কিন্তু উপদ্রুত অঞ্চল নিয়ে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার কিছুই করল না। ওই সময়ে আবেদ সহযোদ্ধা ব্যারিস্টার ইসলাম চৌধুরী, কায়সার জামানকে নিয়ে ‘হেল্প’ নাম দিয়ে একটি সংগঠনের ব্যানারে দুর্গত চরাঞ্চলের মানুষের সাহায্যার্থে এগিয়ে এসেছিলেন। জার্মানির একটি সংস্থা থেকে তিন মিলিয়ন মার্ক অনুদান লাভ করেন। সে টাকায় মনপুরা অঞ্চলের পুনর্গঠনে সর্বশক্তি নিয়োগ করলেন তাঁরা। পরে একাত্তরের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রেক্ষাপটে আবেদ শেল অয়েল কম্পানির লোভনীয় চাকরিকে উপেক্ষা করে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন।
দেশের পক্ষে বিশ্ব জনমত গঠনের লক্ষ্য নিয়ে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান। লন্ডন থেকে প্যারিস, তারপর জাতিসংঘ পর্যন্ত বিরামহীন প্রচারণা অব্যাহত রাখেন। মুক্তিযুদ্ধের প্রবাসী সরকারের তহবিলে অনুদান দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যান। ফজলে হাসান আবেদ বিশ্বের সর্ববৃহৎ বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘ব্র্যাক’ এর প্রতিষ্ঠাতা।
সম্পাদক : জে.এ কাজল খান
স্বত্ত্ব: দৈনিক বিজয়ের কণ্ঠ (প্রিন্ট ভার্সন)
০১৭১৮৩২৩২৩৯
Design and developed by syltech