ঢাকা ১৯শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১১:১২ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৭, ২০২০
মশাহিদ আলী : ‘না জানি কোন অপরাধে দিলা এমন জীবন। আমারে পোড়াইতে তোমার এত আয়োজন, আমারে ডুবাইতে তোমার এত আয়োজন / আমি নষ্ট মানুষ নষ্ট আমার প্রাণ ও সজনী, আমার সুখের ঘরে দুখের তালা খুলতাম যে নাই ছুরানি। এরকম অসংখ্য গান মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছে খুব অল্প সময়ে। বলছি ২০১৭ সালে শ্রেষ্ঠ গীতিকার বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্ত সর্বকনিষ্ঠ গীতিকার সেজুল হোসেনের কথা । তিনি একাধারে সাংবাদিক, গীতিকার, লেখক ও নির্মাতা।
সেজুল হোসেনের গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলার নুরপুরে। তিনি ২০০৪ সালে সাংবাদিকতা পেশায় যোগ দেন। আমাদের সময় ও একুশে টেলিভিশনের মত গণমাধ্যমে কাজ করেছেন। বর্তমানে তিনি এটিএন নিউজে কাজ করছেন। সেই সাথে স্বপ্নসিঁড়ি অডিও ভিজুয়ালের প্রধান নির্বাহীর দায়িত্ব পালন করছেন।
ভাটি এলাকায় বড় হবার কারণে চারপাশে থাকা অনেক বাউলের সঙ্গে মেশার সুযোগ পান তিনি। রাধা রমন দত্ত শিতালংশাহ, হাসন রাজা, কিংবা বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের মতো মরমি কবির জন্ম হয়েছে এই সুনামগঞ্জে আর সেই প্রকৃতির সান্নিধ্যে বেড়ে উঠা সেজুল হোসেন।
লেখালেখি শুরুর গল্প জানতে চাইলে সেজুল বললেন, ‘আমার লেখালেখির শুরু চিঠি লেখার মাধ্যমে। তখন আমি ৭ম শ্রেণীতে পড়তাম। আমার বড় বোনকে দেখতাম পাশের গ্রামে তার বান্ধবীকে মনের মাধুরী মিশিয়ে চিঠি লিখছেন। সেই চিঠি ও চিঠির উত্তর লুকিয়ে লুকিয়ে পড়তাম। একটা সময় নিজেও লিখেছি। এরপর পড়াশুনার পাশাপাশি দৈনিক সবুজ সিলেট, দৈনিক আমাদের সময়, সকালের খবর ও একুশে টিভিতে মফস্বল সাংবাদিকতায় জড়িত ছিলাম।’ ছোটবেলা থেকে বাউলদের গান শুনতাম। আর নিজে যেহেতু কবিতা লিখতাম, পড়তাম, ভিতরে কথা বলার, যথেষ্ট শব্দ ছিলো, সেই সব শব্দই একটা সময় গান কবিতার আঙ্গিকে প্রকাশিত হয়েছিলো সেটা ২০০৬ এর দিকে ।
প্রথম লেখা গান সম্পর্কে জানতে চাইলে,তিনি বলেন প্রথম লেখা গান ছিলো, ‘দিন কাটেনা’। শিল্পী ছিলেন শাহীন, অলক বাপ্পার সুর ,সুমন কল্যানের সঙ্গীতে ‘গানচিল’ থেকে প্রকাশিত এ অ্যালবামের নাম ছিল ‘ধূসর বিকেল’। সেই গান লিখেছিলাম ছাতক থেকে সিলেটে যাবার পথে সিএনজিতে বসে। সেই থেকে গানের নেশা আজ অব্দি ঘুরে বেড়াচ্ছে। কোন ধরনের গান নিয়ে কাজ করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমি মাটির গান নিয়ে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি।যে গান মায়ের ভাষায় রচিত হয় বিপন্ন মানুষেরা যে ভাষায় কথা বলে। বিশেষ করে জীবন ফাঁদে পড়া মানুষেরা যারা আধুনিকতার সংজ্ঞা জানেনা, যেমন ফোক গান।
আপনি তো একাধারে সাংবাদিক, গীতিকার, লেখক ও পরিচালক এতগুলো পেশা নিয়ে কাজ করতে কোনো সমস্যা হয় কি না জানতে চাইলে সেজুল বলেন, সমস্যা হয় না৷ আমার ডেইলি রুটিন নিজের মতো করে নিয়েছি৷ যখন যে বিষয় নিয়ে কাজ করি তখন মনোযোগের পুরাটাই সেখানে থাকে৷ চিন্তা ওভারল্যাপের সুযোগ নাই। বিভিন্ন মাধ্যমে কাজ করি কিন্তু ঘুরে ফিরে নিজের মনের কিংবা চিন্তার প্রয়োগটাই হয় সবখানে বিভিন্ন মাধ্যমে, বিভিন্ন কাজে৷
সেজুল হোসেনের গান গুলোর মধ্যে মমতাজ এর ‘না জানি কোন অপরাধে’, বাপ্পার কণ্ঠে ‘ঢেউয়ের গল্প’, কিশোর এর ‘বিষন্ন প্রেমিক’, ভারতীয় বাঙালি শিল্পী অপরাজিতার কণ্ঠে ‘বিষন্ন কাঁটাতার’, সুমন কল্যাণ এর ‘একটা গানের আশায়’, লুৎফর হাসানের ‘উত্তরী হাওয়া’, সামিনা চৌধুরীর ‘ঝড়ো বাদল’ রিঙ্কুর আমি নষ্ট মানুষ নষ্ট আমার প্রাণ ’ লুইপা-লুৎফর হাসানের ‘শীতের অবসরে’ উল্লেখযোগ্য। তার মধ্যে প্রিয় গান হচ্ছে ‘শীতের অবসরে’।
২০১৭সালের হাসিবুর রেজা কল্লোল পরিচালিত সত্তা সিনেমার গান না জানি কোন অপরাধে, দিলা এমন জীবন সম্পর্কে বলেন ’গানটি প্রায় একযুগ আগে লিখে ছিলাম । এই গানের মাধ্যমে তুলে ধরেছি , জীবনের ফাঁদে পড়া, অভাবের ফাঁদে পড়া, সংসার সম্পর্কের ফাঁদে পড়া মানুষের হাহাকার যে হাহাকারটা, যে জিজ্ঞাসা আমার হয়ে পৃথিবীর সব বিপদগ্রস্ত মানুষের।
তিনি আরো বলেন বর্তমানে প্রয়াত বাউলদের কথা, সুর সংরক্ষণ ও চর্চা বাড়াতে দেশ বিদেশে আরো বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে কিছু পরিকল্পনা আছে৷ আপাতত জীবিত বাউল, সাধকদের সঙ্গে কথা বলে তাদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ, ভিডিও চিত্রে তাদের চিন্তা ও গান ধারণ করছি।
নতুন কোনো গান আসছে কি না জানতে চাইলে বলেন, কয়েকটা গানের কাজ চলছে, আগামী দু-মাসে রিলিজ হবে, এর মধ্যে ত্রি-কণ্ঠে বন্ধু তুমি ছবিতেই সুন্দর, লুইপার প্রেমের ঋণ, অংকনের বুকটা করে দুরুদুরু, রাজন পালের আমারেনি চিনে তোমার মন ইত্যাদি। নতুন যারা গানের এই জগতে আসতে চায় তাদের সম্পর্কে সেজুল বলেন, গান লেখার আগে অন্তত হাজার খানেক ভালো কবিতা যেনো মন থেকে মনোযোগে পড়েন।
সম্পাদক : জে.এ কাজল খান
স্বত্ত্ব: দৈনিক বিজয়ের কণ্ঠ (প্রিন্ট ভার্সন)
০১৭১৮৩২৩২৩৯
Design and developed by syltech