ঢাকা ১৭ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৭:০৬ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২০
হবিগঞ্জ প্রতিনিধি : শিল্প কারখানার বিষাক্ত বর্জ্যে হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জের সুতাং নদীর পর বাহুবলের উপর দিয়ে প্রবাহমান করাঙ্গী নদীর পানি দূষিত হচ্ছে। প্রতিনিয়ত ফেলা হচ্ছে কেমিক্যাল মিশ্রিত লক্ষাধিক ঘন মিটার বর্জ্য। এসব বর্জ্য এফলুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে (ইটিপি) শোধনের কোন নিয়মই মানছেন না রাশা কেমিক্যাল ইন্ডাষ্ট্রিজ ও ভার্টেক্স পেপার মিলস। ফলে পানি হচ্ছে বিপদজনক। এতে নষ্ট হচ্ছে নদীর পানি এবং হুমকীর মুখে পড়েছে মৎস্য সম্পদ ।সুতাংয়ের পর কারখানার বিষাক্ত বর্জ্যে দূষিত হচ্ছে করাঙ্গী : কৃষকের মাথায় হাত
নদীর দূষিত পানি ব্যবহারের কারণে বিভিন্ন ধরনের রোগ বালাইয়ে আক্তান্ত হচ্ছেন নদীর তীরবর্তী বাসিন্দারা। এই প্ল্যান্ট ব্যাবহারে খরচ বেশি হওয়ার অজুহাতে প্রতিষ্ঠান দুটি ইটিপিকে এড়িয়ে চলছেন। উল্লেখিত দুটি শিল্প প্রতিষ্ঠানে নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন অভিযান। পরিবেশ বাদীদের অভিযোগ, পরিবেশ অধিদপ্তরের অভিযান না থাকায় প্রতিষ্ঠানের পরিচালকরা নদীতে ইচ্ছামত কেমিক্যাল ফেলছে। সঠিকভাবে এর আইন বাস্তবায়ন না করায় দিনের পর দিন দূষিত বর্জ্য ফেলে নদীর পানি দূষিত করছে নদীপাড়ের শিল্পকারখানা।
এক জরিপে দেখা গেছে, নদীর পানিতে মাছসহ জীববৈচিত্র্য টিকে থাকার জন্য নূন্যতম (০৪.০৫) চার দশমিক পাঁচ মিলিগ্রাম অক্সিজেন থাকার কথা। সেখানে করাঙ্গী নদীর পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ (০০.০৪) শূন্য দশমিক চার মিলিগ্রাম। করাঙ্গী নদীর ঘোলা পানিতে দেখা যায় না কিছুই। পানিতে প্রায়ই ভাসতে দেখা যায় বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ।
রাশা কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের কেমিকেলের কারনেই করাঙ্গী নদীর এই অবস্থা। ভার্টেক্স পেপার মিলের কেমিক্যালে নদীর পানিত দূষিত হচ্ছে। আবু সুফিযান পেশায় কৃষক। করাঙ্গী নদীর ধারেই তাঁর ফসলি জমি। অনেক দিন ধরেই মারাত্মক চর্মরোগে ভুগছেন সুফিয়ান। ভূগছে তার পুরো পরিবার। আর এর জন্য দায়ী করাঙ্গী নদীর দূষিত পানি। পাহাড়িয়া খরগ্রোতা করাঙ্গী নদী এখন পরিণত হয়েছে নর্দমায়।
নদীর ঘোলা পানির ভেতরে তাকালে কিছুই দেখা যায় না। পানিতে প্রায়ই ভাসতে দেখা যায় বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ, গৃহস্থালি আবর্জনা ও বিভিন্ন প্রাণীর বিষ্ঠা। এই নদীর ধারেই ছয় সদস্যের পরিবার নিয়ে থাকেন ৫৪ বছর বয়সী ইউসুফ। নদীর পানি মারাত্মক দূষিত হলেও জীবনধারণের জন্য এই পানিই ব্যবহার করতে হয় তাঁকে। এর ফলে দেখা দিয়েছে চর্মরোগ। আর দূষিত পানির কারণে নষ্ট হচ্ছে ইউসুফের জমিতে জন্মানো ধান।
আবু সুফিয়ান বলেন, ‘বর্ষাকালে যখন বন্যা হয়, তখন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে নদীর দূষিত পানি। এতে আমার ধান নষ্ট হচ্ছে। হাত-পা চুলকাচ্ছে। যদি এভাবেই চলতে থাকে, তবে আমি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হব। আর যদি এর পানি ব্যবহার বন্ধ করে দিই, তবে কৃষিকাজ ছেড়ে দিতে হবে। এ ছাড়া অন্য কোনো কাজ আমার জানা নেই।’
এই করাঙ্গী নদীর দূষিত পানির ওপর প্রায় লক্ষাধীক মানুষের জীবন নির্ভরশীল। এসব মানুষ এই নদীর পানি সেচ ও দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করে থাকে। অনেকে এই পানি পানও করেন। বাহুবল উপজেলা সদর বাজার এলাকার প্রায় ৮০ শতাংশ ব্যবসায়ী এই দূীষত পানির ওপর নির্ভরশীল।
স্থানীয় একটি বেসরকারি পরিবেশবিষয়ক সংস্থার কর্মী প্রিয়াংকা দেব বলেন, নদীর পার্শ্ববর্তী এলাকার মানুষের অসুস্থ হওয়ার হার অনেক বেশি। কিন্তু এসব নিয়ে সরকারি কর্তৃপক্ষকে বারবার জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি। এদিকে প্রতিদিনই করাঙ্গী নদীর দূষিত পানি নিয়ে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে লাইভ করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এতে নজর নেই স্থাণীয় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের।
সম্পাদক : জে.এ কাজল খান
স্বত্ত্ব: দৈনিক বিজয়ের কণ্ঠ (প্রিন্ট ভার্সন)
০১৭১৮৩২৩২৩৯
Design and developed by syltech