দ.সুরমায় উধাও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান,এলজিডি’র উন্নয়নে জনদুর্ভোগ চরমে

প্রকাশিত: ১১:৫২ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৪, ২০২১

দ.সুরমায় উধাও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান,এলজিডি’র উন্নয়নে জনদুর্ভোগ চরমে

খলিলুর রহমান
সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় স্থানীয় সরকার প্রকেীশল অধিদপ্তর (এলজিডি) এর রাস্তা নির্মাণ কাজে আদৌ কোন অগ্রগতি নেই। বরং উন্নয়নের নামে সৃষ্টি করা হয়েছে চরম জনদুর্ভোগ ও দুর্গতি। বেঁধে দেওয়া সময়সীমা পার হয়ে গেলেও সম্পন্ন হয়নি কোনো কাজ। ফলে রাস্তার উন্নয়ন কাজে জনদুর্ভোগ এখন হয়ে উঠেছে চরমে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। পাশাপাশি ঘটে চলেছে ঘটনা-দুর্ঘটনাও।

 

প্রকল্পের কাজ না করেই কোনো কোনো ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে উধাও হয়ে গেছে। মিলছে না সিলেটের বাইরে থাকা এ প্রতিষ্ঠানের কোনো হদিস। এতে করে ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে উন্নয়নকামী সরকারের ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের।

 

সূত্রে প্রকাশ, স্থানীয় সরকার প্রকেীশল অধিদপ্তর (এলজিডি) দক্ষিণ সুরমা প্রকৌশল অফিসের আওতায় ২০১৯ সালে ১ বছর মেয়াদে কাজ সম্পন্ন করার শর্তে ৪টি সড়কে ২টি উন্নয়ন প্রকল্পের টেন্ডার ড্রপ করা হয়। এগুলো হচ্ছে- স্থানীয় সরকার প্রকেীশল অধিদপ্তর (এলজিডি) দক্ষিণ সুরমার কার্যাধীন সিলেট-মোগলাবাজার রোডের হাজীগঞ্জ বাজার-ছিছরাকান্দি-চানপুর এবং কদমতলী-শিবেরচক সড়কের দেড় কিলোমিটার রাস্তার পিচঢালাই। এ প্রকল্পে টেন্ডার দেওয়া হয়েছে ১ কোটি ১৫ লাখ ৪৫ হাজার ৯৫৩ টাকার। ঢাকার গুলশান নিকেতন এলাকার আরএআরআইপি (জঅজওচ) নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয় এ প্রকল্পের কাজ। গত ২০১৯ সালের ১৪ নভেম্বর থেকে ২০২০ সালের ১৩ নভেম্বর-এর মধ্যে এ কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও দীর্ঘপ্রায় দেড় বছর অতিবাহিত হয়ে গেলেও কোন কাজ হয়নি। উল্টো প্রকল্প এলাকায় বক্সকার্টার করে রাস্তাটি একেবারে ধ্বসিয়ে দিয়েছে ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। পিচডালাইয়ের পরিবর্তে সৃষ্টি করা হয়েছে অসংখ্য খানাখন্দকের। এমনকি প্রকল্প এলাকার সড়কটি ক্ষেতের জমির সাথে মিশে যাওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে। বক্সকার্টার করে রাস্তা ধ্বসে দেওয়ার পর থেকে কোন হদিসই মিলছে না ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আরএআরআইপি’র।

 

এলজিডির দক্ষিণ সুরমা অফিস থেকে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের ই-মেইলে বারবার তাগিদপত্র পাঠানো হলেও তা রিসিভ হচ্ছে না এবং প্রতিষ্ঠানের দেওয়া সেলফোনও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের ঠিকানায় পত্র প্রেরণ করা হলে তা গ্রহণ করছে না কেউই। ফেরত আসছে পত্রের পর পত্র। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি সিলেটের বাইরের হওয়ায় প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করাও সম্ভব হচ্ছে না। এ প্রতিবেদককে এমনটা জানিয়েছেন দক্ষিণ সুরমা উপজেলা প্রকৌশলী আফছর আহমদ।

 

এলজিডির দক্ষিণ সুরমার আওতাধীন অপর বৃহৎ প্রকল্প হচ্ছে- ২টি কালভার্টসহ দক্ষিণ সুরমার লালাবাজার জিসি-বিবিদইল-জালালপুর জিসি সড়ক পিচঢালাই এবং নাজিরবাজার-হাকিয়ারচর জিপিএস সড়ক পিচঢালাই-এর কাজ। এ দু’সড়কে মোট ১০ কিলোমিটার ঢালাই ও দুটি কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় প্রায় ৫ কোটি টাকা। এ দু’রাস্তা ঢালাই প্রকল্পের টেন্ডার পায় ঢাকার মগবাজারস্থ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স মোল্লা এন্টারপ্রাইজ।

 

গত ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর থেকে ২০২১ সালের ১০ এপ্রিল পর্যন্ত সময়সীমার মধ্যে এ কাজ সম্পন্নের কথা। কিন্তু ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ৭০% ভাগ বিল উত্তোলন করে নিলেও সময়ীমার মধ্যে কাজ সম্পন্ন করতে পারেনি। কাজ দ্রæত সম্পন্নের জন্য উপজেলা প্রকৌশলীর দফতর থেকে বারবার তাগিদপত্র পাঠানো হলেও তা আমলে নেয়নি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স মোল্লা এন্টারপ্রাইজ। ফলে এ দু’ সড়কেও জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারন করেছে। সিলেটের বাইরের এসব ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অবজ্ঞা অবহেলা ও বেপরোয়া আচরণে সরকারের উন্নয়ন নিয়ে জনমনে বিরূপ ও ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় জনতা ক্ষোভের স্বরে জানান, কাজগুলোর টেন্ডার স্থানীয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে দিলে আজ এ অবস্থার সৃষ্টি হতো না। কাজে কোনোরূপ ব্যাঘাত ঘটলে তাৎক্ষণিক তাদের সাথে যোগাযোগ করা যেতো বা কৈফিয়ত তলব করা যেতো। কিন্তু বহি:বিভাগের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়ার ফলে আজ তাদের কোনো হদিসই মিলছে না। এদিকে দিন দিন জনদুর্ভোগ বাড়ছে। তারা বলেন, দীর্ঘদিন থেকে রাস্তারগুলোর এমন বেহাল অবস্থার কারণে জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে। যেকোন মানুষ ফুঁসে উঠতে পারে। তাই যতদ্রæত সম্ভব, উল্লেখিত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাদ দিয়ে স্থানীয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কাজগুলো সম্পন্ন করে মানুষের নিরাপদ যাতায়াতের ব্যবস্থা করা হোক। এ জন্য তারা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশু সুদৃষ্টি কামনা করেন।

 

এ ব্যাপারে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আরএআরআইপি (জঅজওচ) এবং মেসার্স মোল্লা এন্টারপ্রাইজ-এর সেল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে উভয় প্রতিষ্ঠানের ফোন বন্ধ পাওয় গেছে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বশেষ ২৪ খবর