ঢাকা ১৭ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৮:৩৩ অপরাহ্ণ, জুন ৪, ২০২১
নিজস্ব প্রতিবেদক
সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সদ্য সাবেক সদস্য সাংবাদিক নিজামুল হক লিটন আত্মহত্যা করেছেন। শুক্রবার সকালে তার নিজ বাড়ি এসএমপি’র মোগলাবাজার থানার আলমপুরস্থ গঙ্গারামের চক থেকে তার লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। পরে সুরত হাল রিপোর্ট তৈরি করে লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়।
লিটনের পরিবার জানায়, বৃহস্পতিবার রাতের খাবার খেয়ে সবাই যার যার ঘরে কক্ষে চলে যান। রাত ৩টার দিকে নিজামুল হক লিটনের মরদেহ নিজ ঘরে ঝুলতে দেখেন নিহতের পিতা। এসময় পরিবারের লোকজন ওড়না কেটে লাশটি নিচে নামান ও পুলিশকে খবর দেন। পরে পুলিশ এসে শুক্রবার ভোরে তার লাশ উদ্ধার করে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে মোগলাবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামসুদ্দোহা পিপিএম জানান, ধারণা করা হচ্ছে সাংবাদিক লিটন আত্মহত্যা করেছেন। তবুও পুলিশ বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। ময়নাতদন্তের জন্য তার লাশ সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
তার পরিবার জানিয়েছে, লিটন বিভিন্ন কারণে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন। বড্ড অভিমানে, ক্ষোভে ও দুঃখে তিনি আত্মহত্যা করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দক্ষিণ সুরমার লালাবাজারস্থ একটি মাজারের অনিয়ম আত্মসাত নিয়ে তিন তিনটি সংবাদ প্রতিবেদন করেছিলেন নিজামুল হক লিটন। প্রতিবেদন প্রকাশের পর একটি মহল আক্রোশান্বিত হয়ে তাকে বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করে। তারই ধারাবাহিকতায় গত ৯ মার্চ সাংবাদিক নিজামুল হক লিটনকে লালাবাজার এলাকায় সংঘবদ্ধ জনতা আটক করে গণপিটুনী দেন ও তার সাথে গাজা রয়েছে বলে পুলিশে সোপর্দ করেন। এসময় তারা আটক ও গণপিটুনির ভিডিও ধারণ করে তা সোস্যাল মিডিয়ায় প্রচার করলে মুহূর্তেই ভাইরাল হয়। এই মামলার বাদী ছিলেন পুলিশের এসআই বিষ্ণু। পরে লিটনকে মাদক মামলার আসামি হিসেবে আদালতের মাধ্যমে জেলে পাঠানো হয়। এখানেই শেষ নয়, অপর একটি চুরির মামলায় কোতোয়ালি পুলিশ দিয়ে তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
লিটনের উপর আনিত মাদক ব্যবসা ও চুরির অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন দাবি করছে তার পরিবার। তাদের দাবি লিটকে ফাঁসাতে সড়যন্ত্রমূলক মামলা সাজানো হয়েছিল। তাকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছিল। এগুলো লিটনের জন্য সত্যিই অপমানজনক।
এদিকে সাংবাদিক নিজামুল হক লিটন দীর্ঘদিন কারাবাসের পর জামিনে মুক্তি পান। তার উপর এসব আইনী নির্যাতনের ঘটনায় নিরব থাকে সিলেট জেলা প্রেসক্লাব। এমনকি ওই সময় তাকে সিলেট প্রেসক্লাব থেকেও বহিষ্কার করা হয়।
জামিনে মুক্তির পর সাংবাদিক লিটন সোস্যাল মিডিয়ায় তার নির্যাতনের ভিডিও দেখতে পান। এছাড়া সিলেট জেলা প্রেসক্লাব থেকে তাকে বহিষ্কারের বিষয়টিও জানতে পেরে তিনি চরম অসহায় হয়ে পড়েন। একপর্যায়ে জেল জুলুম, মিথ্যা মামলা, নগ্ন অপপ্রচার এবং অসহায়ত্বের গ্লানি সহ্য করতে না পেরে শুক্রবার ভোররাতে তিনি আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।
সাংবাদিক নিজামুল হক লিটনের আত্মহত্যার মূলে প্ররোচনাদানকারী কে বা কারা সে বিষয়ে কিছুই জানা যায়নি। তবে, মাজার পুজারী, বাউল বান্ধব ‘ক’ প্রথমাক্ষরের জনৈক নেতার ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে ক্ষোভে দুঃখে তিনি আত্মহত্যা করতে পারেন মর্মে তার সহকর্মী অনেকেই ধারণা করছেন।
সম্পাদক : জে.এ কাজল খান
স্বত্ত্ব: দৈনিক বিজয়ের কণ্ঠ (প্রিন্ট ভার্সন)
০১৭১৮৩২৩২৩৯
Design and developed by syltech