ছাতকে নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত ৭ ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ

প্রকাশিত: ৭:৫৭ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১০, ২০২৪

ছাতকে নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত ৭ ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ

ছাতক প্রতিনিধি
পাঁচ আগস্টের পর থেকে ছাতক উপজেলার ১৩ ইউনিয়নের মধ্যে ৭ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা কর্মস্থলে অনুপস্থিত। আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল এসব জনপ্রতিনিধিরা মামলা ও গ্রেফতারের ভয়ে নিজ নিজ কার্যালয়ে অনুপস্থিত রয়েছেন দীর্ঘদিন ধরে। কোন কোন জনপ্রতিনিধিরা কিছুদিন কার্যালয়ে আসা-যাওয়া করলেও এক সময়ে তারা আত্মগোপনে চলে যান। বর্তমানে দুইজন আছেন প্রবাসে একজন কারাগারে। এ কারণে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় থেকে স্থানীয় ভুক্তভোগী জন-সাধারণরা কাক্সিক্ষত সেবা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত রয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে ছাতক উপজেলা। জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সরকার ভারতে পালিয়ে যায়। সেই সাথে পাঁচ আগস্টের পর ছাতক উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের একই ঘরোনার চেয়ারম্যানরাও চলে যান আত্মগোপনে। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর পৌরসভা মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানকে পর্যাক্রমে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। উপজেলা চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা রফিকুল ইসলাম কিরণ চলে যান যুক্তরাজ্য। জেলা আওয়ামী লীগ নেতা পৌর মেয়র আবুল কালাম চৌধুরীও এলাকায় নেই। উপজেলা যখন জনপ্রতিনিধিত্বহীন হয়ে পড়ে তখন ইউনিয়র পরিষদের একাধিক চেয়ারম্যানরাও চলে যান আত্মগোপনে। মামলা মোকদ্দমায় ইতোমধ্যে একাধিক চেয়ারম্যান কারাভোগ করে অন্যান্য মামলার গ্রেফতারের ভয়ে এলাকা ছাড়া।
১৩ ইউনিয়নের মধ্যে কর্মস্থলে উপস্থিত আছেন, ছাতক সদর ইউনয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম, নোয়ারাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেওয়ান পীর আবদুল খালিক রাজা, ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সুফি আলম সোহেল, জাউয়াবাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল হক, ভাতগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাস্টার আওলাদ হোসেন, দোলারবাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আলম।
কানাডায় গিয়ে প্রায় এক বছর ধরে চরমহল্লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল হাসনাত অনুপস্থিত। তার ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন প্যানেল চেয়ারম্যান আবদুল মতিন। এছাড়া কালারুকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অদুদ আলম মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাভোগ করে জামিনে এসে আরেক মামলায় গ্রেফতারের ভয়ে আছেন আত্মগোপনে। সিলেটের একটি মামলায় র?্যাবের হাতে তিনি গ্রেফতারের পর কালারুকা ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন প্যানেল চেয়ারম্যান মো. তাজ উদ্দিন। দক্ষিণ খুরমা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক মামলায় কারাগারে থাকায় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন প্যানেল চেয়ারম্যান মহিবুর রহমান তালুকদার (জাহাঙ্গীর)। উত্তর খুরমা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিল্লাল আহমদ একটি মামলায় সিলেটে র?্যাবের হাতে গ্রেফতারের পর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন প্যানেল চেয়ারম্যান খালেদ আহমদ খলিল।
তবে খলিল বলেন, চেয়ারম্যান গ্রেফতার হওয়ায় জনগনের সেবা দিতে তিনি ৬ থেকে ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত তিনি প্যানেল চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন। জামিনে এসে এরপর থেকে বর্তমানে চেয়ারম্যান বিল্লাল আহমদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন।
স্থানীয় একাধিক নাগরিকরা বলছেন উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বিল্লাল চেয়ারম্যানকে তারা ইউনিয়ন পরিষদে কার্যক্রমে দেখছেন না, যে কারণে কাক্সিক্ষত সেবাও পাচ্ছেনা। সিংচাপউড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাহাব উদ্দিন মো. শাহেল মামলার আসামি হয়ে আত্মগোপনে যাওয়ায় এখানে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন প্যানেল চেয়ারম্যান আবদুল ওয়াদুদ, ছৈলা আফজলাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গয়াছ আহমদ আত্মগোপনে থাকায় ওই পরিষদে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন প্যানেল চেয়ারম্যান আজাদ মিয়া। গোবিন্দগঞ্জ-সৈদেরগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুন্দর আলী যুক্তরাজ্যে যাওয়ায় এখানের প্যানেল চেয়ারম্যানও প্রবাসে থাকায় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কেউ নেই।
তবে ইউপি সদস্য আলমগীর কবির ও ইউপি সদস্যা জেসমিন বেগম জানিয়েছেন, গত বৃহস্পতিবার উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম প্রশাসক হিসেবে এসেছেন।
উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম একাধিক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের আত্মগোপনে থাকার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এসব ইউনিয়ন পরিষদ ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দিয়ে জনগণের সেবা প্রদান করা হচ্ছে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বশেষ ২৪ খবর