আট ম্যাচের ছয়টিতেই হারল সিলেট

প্রকাশিত: ৮:৩৫ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২০, ২০২৫

আট ম্যাচের ছয়টিতেই হারল সিলেট

ক্রীড়াকণ্ঠ ডেস্ক
শেষ ওভারে সিলেটের প্রয়োজন ২৩ রান। মুস্তাফিজুর রহমানের প্রথম বলই ছক্কায় উড়িয়ে দিলেন সামিউল্লাহ শিনওয়ারি। পরের বল ওয়াইড, এরপর আরেকটি চার। ম্যাচে তখন দারুণ নাটকীয়তা। টিভি পর্দায় ফুটে উঠল ঢাকার কোচ খালেদ মাহমুদের চিন্তিত চেহারা। তার মুখভঙ্গি বলছিল, ‘এই ম্যাচও হারতে হবে!’
না, হারতে হয়নি তাদেরকে। খরুচে শুরুর পর সামনে নিলেন মুস্তাফিজুর রহমান। বিধ্বংসী ব্যাটিং করতে থাকা আরিফুল হক ফেরানোর পর ওভারের শেষটাও ভালোভাবে করলেন অভিজ্ঞ পেসার। শঙ্কা সরিয়ে বিপিএলে আরেকটি জয়ের দেখা পেল ঢাকা।
চট্টগ্রামে সোমবার তলানির দুই দলের লড়াইয়ে ৬ রানের জয়ে সিলেট স্ট্রাইকার্সকে সবার নিচে নামিয়ে এক ধাপ ওপরে ওপরে উঠল ঢাকা ক্যাপিটাল। জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে লিটন কুমার দাসের ৭০ রানে ইনিংসের সঙ্গে থিসারা পেরেরার ক্যামিও ইনিংসে ২০ ওভারে ১৯৬ রান তোলে ঢাকা। এলোমেলো বোলিংয়ে তাদেরকে সহায়তা করেন সিলেটের বোলাররা। পরে রনি তালুকদারের ফিফটি, জাকের আলি ও আরিফুলের ঝড়ো ব্যাটিংয়ের পরও ১৯০ রানের বেশি করতে পারেনি সিলেট। ৯ ম্যাচে ঢাকার এটি দ্বিতীয় জয়। আট ম্যাচে সিলেট হারল ছয়টি।
আট ম্যাচে সিলেটের চতুর্থ কিপার :
টস হেরে ফিল্ডিংয়ে নামে সিলেট স্ট্রাইকার্স। চমকে দেয় তারা কিপার বদল করে। জাকের আলিকে দিয়ে শুরু, মাঝে জাকির হাসান ও পরে দুই ম্যাচে জর্জ মানজির পর এবার রনি তালুকদারকে উইকেটকিপিংয়ের দায়িত্ব দেয় দলটি। যদিও জাকির, জাকের, মানজিরা একাদশেই ছিলেন।
গ্লাভস হাতে প্রথম দিন যাচ্ছেতাই পারফরম্যান্স ছিল রনির। বেশ কয়েকটি বল তার হাতের নিচ দিয়ে বা হাতে লেগে বেরিয়ে যায়। বাড়তি রান পেয়ে যায় ঢাকা।
আগুন-পানি তানজিদ :
আসরে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা সুমন খানের তৃতীয় বলে ছক্কা মারেন তানজিদ হাসান। একই পেসারের পরের ওভারে প্রথম বল ওড়ান ছক্কায়। বাউন্ডারি দিয়ে তিনি শেষ করেন ওই ওভার। তবে ঝড়ো শুরুর ইঙ্গিত দিলেও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি বাঁহাতি ওপেনার।
চতুর্থ ওভারে বিপিএলে অভিষিক্ত স্পিনার টিপু সুলতানের বল ছক্কায় ওড়াতে গিয়ে লং অনে ক্যাচ দেন তিনি (১৬ বলে ২২)।
ঝড় তুলে নীরব লিটন :
অনিয়মিতি স্পিনার অ্যারন জোন্সকে পাওয়ার প্লের মধ্যে আক্রমণে আনে সিলেট। তাতে হাত খোলার সুযোগ পান লিটন। ওই ওভারে দুটি চার একটি ছক্কা আসে তার ব্যাট থেকে।
তিন নম্বরে নেমে ফের হতাশ করেন জেপি কোটজি। সপ্তম ওভারে সামিউল্লাহ শিনওয়ারির বল সুইপ করে সোজা ডিপ স্কয়ার লেগে দাঁড়ানো জাকের আলির হাতে ক্যাচ দেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। আগের ম্যাচগুলোতে তেমন কিছু না করেই প্রমোশন পেয়ে চার নম্বরে নামেন মোসাদ্দেক। শিনওয়ারির পরের ওভারে ফুল টসে লং অফে ক্যাচ দেন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। এই জোড়া ধাক্কায় খোলসে ঢুকে পড়েন লিটন। পাঁচ নম্বরে নামা সাব্বির রহমানও শুরুতে সময় নেন কিছুটা। ১২ ওভারে ঢাকার সংগ্রহ ছিল ৩ উইকেটে ৮০ রান। লিটনের রান তখন ২৯ বলে ৩৩ ও সাব্বিরের ১২ বলে ৮ রান।
এলোমেলো সিলেট, ঢাকার তাণ্ডব :
মন্থর শুরুর পর শেষ দিকে সিলেটের বোলারদের যেন কচুকাটা করেন ঢাকার ব্যাটসম্যানরা।শেষের ৮ ওভারে তারা করে ১১৬ রান। শেষ ৫ ওভারে আসে ৮১ রান। এতে অবশ্য সিলেটের নিয়ন্ত্রণহীন, এলোমেলো বোলিংয়ের দায়ও অনেক।
ত্রয়োদশ ওভারে শিনওয়ারির বলে দুইটি ছক্কা মারেন সাব্বির। এক ওভার পর বাঁহাতি স্পিনে তাকে বোল্ড করেন টিপু। ২৪ রান করতে ২১ বল খেলে ফেরেন সাব্বির।
লিটন-পেরেরার বিধ্বংসী জুটি :
সিলেটের বাজে বোলিংয়ের পূর্ণ ফায়দা নেন লিটন ও থিসারা পেরেরা। দুজন মিলে মাত্র ২৮ বলে গড়ে তোলেন ৮১ রানের জুটি। সাব্বির আউট হওয়ার পর ওই ওভারে বিস্ময়কর একেকটি ওয়াইড করতে থাকেন টিপু। পেরেরা বা লিটনের ব্যাটের ধারেকাছেও ছিল না সেগুলো। পরের ওভারে সুমনও করেন বড়সড় একটি ওয়াইড।
সুমনকে লং অফ দিয়ে ছক্কা মেরে ৩৮ বলে পঞ্চাশে পৌঁছান লিটন। অষ্টাদশ ওভারে আরিফুল হকের বলে পরপর দুটি ছক্কা মারেন পেরেরা। স্ট্রাইক পেয়ে লিটনও ওড়ান ছক্কায়। সব মিলিয়ে ওভার থেকে ২৬ রান নেয় ঢাকা। পরের ওভারে রুয়েল মিয়ার বলে ওয়াইড লং অন দিয়ে বড় ছক্কা মারেন লিটন। শেষ বলে সুমনের দারুণ ক্যাচে সমাপ্তি ঘটে লিটনের ৪টি করে চার-ছক্কার ইনিংসের।
শেষ ওভারের প্রথম বল ছক্কায় ওড়ান পেরেরা। তবে পরের বলে আরিফুল হকের চমৎকার ক্যাচে ফেরেন ঢাকা অধিনায়ক। মাত্র ১৭ বলে ৩৭ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। বাকি চার বলে আর বাউন্ডারি হয়নি।
অতিরিক্ত রানের জোয়ার :
ওয়াইড থেকে ১৬ রানসহ সব মিলিয়ে অতিরিক্ত মোট ২৫ রান খরচ করে সিলেট। বিপিএলে এক ইনিংসে এর চেয়ে বেশি অতিরিক্ত রানের ঘটনা আছে আর একটি। ২০১৭ সালে রাজশাহী কিংসের ১২৭ রানের ইনিংসে অতিরিক্ত ২৭ রান দিয়েছিল ঢাকা ডায়নামাইটস। আগের ম্যাচে দুর্বার রাজশাহীর বিপক্ষে অতিরিক্ত ২০ রান দিয়েছিল সিলেট। তিন ম্যাচ পর একাদশে ফিরলেও বিস্ময়করভাবে বোলিং পাননি অভিজ্ঞ পেসার আল-আমিন হোসেন।
হতাশায় শুরু সিলেটের :
বড় লক্ষ্যে শুরুটা একদমই ভালো করতে পারেনি সিলেট। তৃতীয় ওভারে ড্রেসিং রুমে ফিরে যান জর্জ মানজি। এক ওভার পর একই পথে হাঁটেন টুর্নামেন্টে তাদের সফলতম ব্যাটসম্যান জাকির হাসান।
জোন্সকে নিয়ে রনির লড়াই :
শুরুর চাপ সামলে অ্যারন জোন্সকে নিয়ে জুটি বাধেন রনি। দুজনের ৫৬ বলে ৮০ রানের জুটিতে অগ্রণী ভূমিকা নেন রনি। ৭ চারে ৩৩ বলে চলতি আসরে তৃতীয় ফিফটি করেন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান।
অন্য প্রান্তে ছন্দ খুঁজে পেতে বেশ সময় নেন জোন্স। এক পর্যায়ে ২৪ বলে ২৩ রানে ছিলেন তিনি। পরে নাজমুল ইসলামের বলে ছক্কা-চার মেরে স্ট্রাইক রেট কিছুটা বাড়ান। তবে টিকতে পারেননি বেশিক্ষণ। পেরেরার বলে ফিরতি ক্যাচ দেন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাটসম্যান (৩২ বলে ৩৬)। পরের ওভারে রনিকে বোল্ড করেন পেরেরা। ৪৪ বলের ইনিংসে ৯ চারে ৬৮ রান করেন রনি।
জাকের-আরিফুলের চেষ্টা :
২৭ বলে যখন প্রয়োজন ৭০ রান, ম্যাচ জমিয়ে তোলার চেষ্টা করেন জাকের ও আরিফুল। দুজনের জুটিতে আসে ১৯ বলে ৪২ রান। সপ্তদশ ওভারে মুস্তাফিজের বলে দুটি ছক্কা মারেন আরিফুল। পরের ওভারে পেরেরার বল ছক্কায় ওড়ান সিলেট অধিনায়ক। পরে দুই ওভারে ৪০ রানের সমীকরণে টানা তিনটি চার মারেন জাকের। পরের বলে তাকে থামিয়ে দেন মুকিদুল ইসলাম। ৫ চারে ১৩ বলে ২৮ রান করেন জাকের। শেষ ওভারে আউট হওয়া আরিফুল খেলেন ২ চার ও ৩ ছক্কায় ১৩ বলে ২৯ রানের ইনিংস।
খরুচে মুস্তাফিজ, বল হাতেও পেরেরার বাজিমাত :
ব্যাটিংয়ে শেষ দিকে ক্যামিও খেলা পেরেরা বল হাতেও নেন ২ উইকেট। ২ উইকেট পেলেও খরুচে বোলিংয়ে ৪ ওভারে ৪৬ রান দেন মুস্তাফিজ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
ঢাকা ক্যাপিটালস: ২০ ওভারে ১৯৬/৬ (তানজিদ ২২, লিটন ৭০, কোটজি ৯, মোসাদ্দেক ৪, সাব্বির ২৪, পেরেরা ৩৭, শাফি ৪*, মুকিদুল ১*; সুমন ৪-০-৪৭-১, ৪-০-৩২-১, টিপু ৪-০-২৬-২, জোন্স ১-০-১৯-০, শিনওয়ারি ৪-০-২৭-২, আরিফুল ৩-০-৩৭-০)
সিলেট স্ট্রাইকার্স: ২০ ওভারে ১৮৬/৭ (মানজি ৩, রনি ৬৮, জাকির ৮, জোন্স ৩৬, জাকের ২৮, আরিফুল ২৯, শিনওয়ারি ১২, সুমন ০*, রুয়েল ৪*; আবু জায়েদ ৩-০-২৫-০, মোসাদ্দেক ২-০-১৬-১, মুস্তাফিজ ৪-০-৪৬-২, নাজমুল ৪-০-২৭-০, মুকিদুল ২-০-৩১-১, শাফি ১-০-১৪-০, পেরেরা ৪-০-৩১-২)
ফল: ঢাকা ক্যাপিটালস ৬ রানে জয়ী। ম্যান অব দা ম্যাচ: থিসারা পেরেরা।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বশেষ ২৪ খবর