টানা ৩ বার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়ে দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশকে নিয়ে গেছেন উন্নয়নের মহাসড়কে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে বিশ্বের সেরা ৫ টি দেশের একটি বাংলাদেশ। এই সময়ে উন্নয়নের সবগুলো সূচকে পাকিস্তানকে পেছনে ফেলা দেশের নামও বাংলাদেশ। দেশের মানুষের ভালোবাসাকে পূঁজি করে তিনি এখন চার বারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী।
বঙ্গবন্ধু হত্যার পর দেশের কোনো স্বপ্ন ছিল না, ভিশন ছিল না। শেখ হাসিনাই জাতির সামনে টার্গেট দিয়েছেন, ভিশন তুলে ধরেছেন।
গনতন্ত্রের মানসকন্যা, দেশরত্ন, সাংবাদিক বান্ধব, জননেত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিনে তাঁকে নিয়ে দু‘কলম লেখার চেষ্টা করেছি।
বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ এখন শুধু উন্নয়নের রোল মডেলই নয়, একটি মানবিক রাষ্ট্র হিসেবেও প্রশংসিত। কথিত তলাবিহীন ঝুড়ির বাংলাদেশ আজ ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়ার পাশাপাশি খাদ্য, বস্ত্র-চিকিৎসার দায়িত্ব নেয়। বিশ্লেষকরা মনে করেন, এ সবকিছুই সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়চেতা ও সাহসী নেতৃত্বের কারণে। জ্বালাও-পোড়াও, জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাসহ দেশি-বিদেশি নানা ষড়যন্ত্র, বাধা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এগোতে হয়েছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, যোগাযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি, ক্রীড়া, পরিবেশ, কৃষি, খাদ্য, টেলিযোগাযোগ, সংস্কৃতি, সামাজিক নিরাপত্তা, মানবসম্পদ উন্নয়ন এমন কোনো খাত নেই যে খাতে অগ্রগতি সাধিত হয়নি। এ ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে গত কয়েক বছরে দেশে অবকাঠামো উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, পুষ্টি, মাতৃত্ব এবং শিশু স্বাস্থ্য, প্রাথমিক শিক্ষা ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। যা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে প্রশংসিত হয়েছে আন্তর্জাতিক মহলেও।
বাংলাদেশ এখণ দক্ষিণ এশিয়ার সীমানা পেরিয়েছে। দেশরত্ন শেখ হাসিনা বর্তমানে বিশ্ব রাজনীতিতে একজন প্রশংসনীয় এবং অনুকরনীয় রাষ্ট্রনায়ক।
জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিলের মানদন্ড অনুযায়ী একটি দেশের মাথাপিছু আয় হতে হবে কমপক্ষে ১২৩০ মার্কিন ডলার, বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় তার থেকে অনেক বেশি অর্থাৎ ১৬১০ মার্কিন ডলার। মানবসম্পদ সূচকে ৬৬ প্রয়োজন হলেও বাংলাদেশ অর্জন করেছে ৭২ দমমিক ৯। অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচক হতে হবে ৩২ ভাগ বা এর কম যেখানে বাংলাদেশের রয়েছে ২৪ দশমিক ৮ ভাগ।
বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশ থেকে কীভাবে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত হতে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় দ্রুতগতিসম্পন্ন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের মতো সফলতা দেখা যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশরত্ন কতটা সফল, সৎ ও আদর্শিক সেটা জানতে হলে আমাদের আন্তর্জাতিকভাবে এই দুটি সংস্থার স্বীকৃতি জানতে হবে। ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে প্যারাডাইস পেপারস আর পানামা পেপারসের পর এবার পিপলস অ্যান্ড পলিটিকস, বিশ্বের পাঁচজন সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানকে চিহ্নিত করেছেন, যাদের দুর্নীতি স্পর্শ করেনি, বিদেশে কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই, উল্লেখ করার মতো কোনো সম্পদও নেই। বিশ্বের সবচেয়ে সৎ এই পাঁচজন সরকারপ্রধানের তালিকায় তৃতীয় স্থানে আছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
অন্যদিকে ২০১৮ সালের মার্চ মাসে আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন গবেষণা সংস্থা দ্য স্ট্যাটিসটিক্স শেখ হাসিনাকে বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত করে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অধরা স্বপ্ন সোনার বাংলা ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশের রুপকার হলেন দেশরত্ন শেখ হাসিনা।
১৯৭৫ সালে পিতাসহ পরিবারের সবাইকে মেরে ফেলা হয় বিপথগামী কিছু আর্মি অফিসারের নেতৃত্বে। শেখ হাসিনা ৬ বছর নির্বাসনে থেকে ১৯৮১ সালে দেশে ফিরেন। সেই থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত ৯টি দীর্ঘ দিন রাজপথে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে তাঁর দল হয় বিরুধী দল। পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালের জাতীয় নির্বাচনে জয়লাভ করে ক্ষমতায় আসে বাংলাদেশ আওয়ামীলী। সেই সময় যমুনা বহুমুখী সেতু নির্মাণ কা হয়, যা ছিলো সেই সময়ে বিশ্বের দীর্ঘতম সেতুর তালিকায় একাদশতম। ১৯৯৮ সালের বন্যার সময় তাঁর সরকার ২ কোটি বন্যা দুর্গত মানুষকে বিনামুল্যে খাদ্য প্রদান করে। তাঁর নেতৃত্বাধীন সেই সরকারের আমলে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, পার্বত্য শান্তি চুক্তি, ২১শে ফেব্রুয়ারিকে জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা। অতঃপর
২০০১ থেকে আবারো জাতির ইতিহাসে কালো অধ্যায় শুরু হয়। বিএনপি-জামাত জোট ক্ষমতায় আসে। জঙ্গীবাদ মাথা চাড়া দিয়ে উঠে, ৬৪ জেলায় বোমা হামলা হয়। ২০০৪ সালের ২১শে আগষ্ট শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে রাজধানী ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে তার জনসভায় গ্রেনেড হামলা করা হয়।
২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামীলীগের সর্বাত্মক আন্দোলনের ফলে সাজানো নির্বাচন বাতিল করতে বাধ্য হয় তৎকালীন সরকার। জরুরী অবস্থা ঘোষিত হয়। নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন হয়।
শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে নির্বাসনে পাঠানোর ষড়যন্ত্র করা হয়। ২০০৭ এর ১৬ জুলাই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ব্যাপক জনবিক্ষোভের মুখে তাঁকে ২০০৮ এর ১১জুন প্যারোলে মুক্তি দেয়া হয়। তিনি চিকিৎসার জন্যে বিদেশ যান এবং ডিসেম্বরের ৪ তারিখে দেশে ফিরেন। ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় শেখ হাসিনা “দিন বদলের সনদ” – তাঁর নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ একচেটিয়া বিজয় লাভ করে। তাঁর এই শাসনামলে, জাতীয় প্রবৃদ্ধি বেড়ে হয় ৬.৫১। সকল খাতের ডিজিটালাইজেশন করা হয়, অবকাঠামো খাতের ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়, জঙ্গীবাদ কঠোর ভাবে দমন করা হয়।
২০০৯ ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশ দুইটি ঐতিহাসিক সমুদ্র সীমান্ত মামলায় জয়লাভ করে ভারত ও মিয়ানমারের সাথে।
বাংলাদেশ ভারতের সাথে বঙ্গোপসাগরের বিরোধপূর্ণ ২৫,৬০২ বর্গ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে ১৯,৪৬৭ বর্গ কিলোমিটার জায়গা পায়।
সেই সময় দেশকে নিয়ে যান উন্নয়নের মহাসড়কে। এরপর আর পেছনে ফিরে থাকাতে হয়নি। এই ১০ বছরে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে জাতিসংঘের হিসেবে উন্নয়নশীল ও বিশ্বব্যাংকের হিসেবে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। তাঁর সুযোগ্য নেতৃত্বেই নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মান কাজ প্রায় শেষের পথে। রুপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, কর্ণফুলী ট্যানেল, মেট্রো রেলের মত মেগা প্রজেক্টের কাজও এগিয়ে চলছে আপন গতিতে। দেশরত্ন শেখ হাসিনা শুধুমাত্র উন্নয়ন অগ্রযাত্রাতেই থেমে নেই। দেশে যখন দুর্নীতি সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করে ঠিক তখনই দলের ভেতরেই দুর্নীতিবাজ, চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজদের দৌড়াত্ব কমাতে শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করছেন। কতটুকু রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে ক্ষমতায় থেকেও নিজ দলের অঙ্গ সংগঠনে এরকম শুদ্ধিঅভিযান পরিচালনা করা যায় সেটা অবশ্যই এদেশের রাজনীতিতে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের সাথে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ও বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশগুলোর সাথে সর্বকালের সবচেয়ে নৈকট্যপুর্ণ সম্পর্ক স্থাপনে সমর্থ হয়েছেন। পার্বত্য শান্তি চুক্তির জন্যে তিনি ইউনেসকো শান্তি পুরস্কার পান। ১৯৯৮ সালে তিনি নিখিল ভারত পরিষদের কাছ থেকে মাদার তেরেসা পদকও পান। ১৯৯৯ সালের ১৫ই মে তিনি হেগ শান্তি পরিষদের সমাপনী অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন। ১৯৯৯ সালে শেখ হাসিনা সেরেস শান্তি পদক পান।
২০১৪ সালে ইউনেস্কো তাকে ‘শান্তির বৃক্ষ ও জাতিসংঘ পরিবেশ উন্নয়ন কর্মসূচি দেশে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরিবেশ এবং টেকসই উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখার জন্য লিডারশিপ ক্যাটাগরিতে শেখ হাসিনাকে তাদের সর্বোচ্চ পুরস্কার চ্যাম্পিয়ন অব দ্যা আর্থ-২০১৫ পুরস্কারে ভূষিত করেন।
শেখ হাসিনার অর্জনের সবচেয়ে বড় স্বীকৃতি এসেছে ব্রিটিশ মিডিয়া থেকে। যুক্তরাজ্যের টেলিভিশন চ্যানেল -৪ প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘মাদার অব হিউম্যানিটি‘ খেতাবে ভূষিত করেছেন। তুরস্কের প্রেসিডডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বঙ্গবন্ধু তনয়াকে ‘বিরল মানবতাবাদী নেতা‘ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
২০০৯ সালে ভারতের ইন্দিরা গান্ধী মেমোরিয়াল ট্রাস্ট শান্তি ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় অসামান্য ভূমিকা পালনের জন্য শেখ হাসিনাকে ইন্দিরা গান্ধী পুরস্কারে ভূষিত করে। এছাড়াও তিনি বৃটেনের গ্লোবাল ডাইভারসিটি পুরস্কার এবং দুইবার সাউথ সাউথ পুরস্কারে ভূষিত হন। তাঁই গনতন্ত্রের মানস কন্যা দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিনে তাঁর প্রতি অনেক অনেক শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করছি সেই সাথে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় তাঁর উত্তর উত্তর সাফল্য কামনা করছি।
লেখকঃ মোঃ জিল্লুর রহমান জিলু
কেন্দ্রীয় সহকারী পরিচালক ও
সিলেট জেলা শাখার সভাপতিঃ
পরিবেশ ও মানবাধিকার উন্নয়ন সোসাইটি
সদস্যঃ সার্ক এনভায়রনমেন্ট জার্নালিষ্ট ফোরাম ও সিলেট জেলা প্রেসক্লাব।