ঢাকা ১৬ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২রা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১১:১৯ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ২৭, ২০১৯
হবিগঞ্জ প্রতিনিধি : নির্যাতনের শিকার হয়ে সৌদি আরব থেকে বাঁচার আকুতি জানিয়ে ভিডিওবার্তা পাঠানো হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জের হোসনা আক্তারকে দেশে ফেরত আনার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় জেদ্দায় বাংলাদেশ কনস্যুলেটের উদ্যোগে গৃহকর্মী হোসনা আক্তারকে উদ্ধারের পর পুলিশের নজরদারিতে এবং সেইফহোমে রাখা হয়েছে। বর্তমানে তিনি নিরাপদে আছেন। তাকে বাংলাদেশে পাঠানোর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। এ বিষয়ে জেদ্দা কনস্যুলেটের ফলোআপ অব্যাহত।
এদিকে, মঙ্গলবার হোসনা আক্তারের বাড়ি আজমিরীগঞ্জের কাকাইলছেও ইউনিয়নের আনন্দপুর গিয়ে দেখা যায় হোসনার জন্য বাড়িতে চলছে আহাজারি। তার মা-বাবাকে পাওয়া না গেলেও নানা-নানী বারবার কান্নায় ভেঙে পড়ছেন। সেই সাথে এলাকাবাসীও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে হোসনার ভিডিও বার্তাটি দেখে মর্মাহত হয়েছে। তারা দ্রুত তাকে বাংলাদেশে আসার আবেদন জানিয়েছেন।
হোসনার নানা ফজল মিয়া জানান, মো. মুজিবুর রহমানের মেয়ে হোসনা আক্তারের বিয়ে হয় কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন উপজেলার চারিগাঁও গ্রামের শফিউল্লাহর সাথে। বিয়ের কয়েক মাস যাওয়ার অপর অভাব অনটনের সংসার হওয়ায় স্বপ্ন নিয়ে মাত্র ২০ দিন আগে দালাল শাহীন মিয়া ও প্রস্তাবিত রিক্রুটিং এজেন্সি আরব ওয়ার্ল্ড ডিস্ট্রিবিউশনের প্রলোভনে পড়ে এজেন্সি আল-সারা ওভারসিসের (আরএল-৭৫২) মাধ্যমে আবার সৌদি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন হোসনা। এরপর থেকে পরিবারের সাথে আর কোন যোগাযোগ হয়নি তার। তবে গত ৬ নভেম্বর সৌদি যাওয়ার পর থেকে সেখানে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হন বলে ভিডিও বার্তায় অভিযোগ করেন।
এদিকে, বিষয়টিকে অসম্মানজনক মনে করে হোসনার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন তার মামার বাড়ির লোকজন। এমনকি সংবাদ সংগ্রহে গ্রামে গেলে হোসনার মামার পরিবারের লোকজন পরিচয় গোপন করে রাখেন। তবে হোসনাকে দ্রুত দেশে আনার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। হোসনার প্রতিবেশী সায়েম মিয়া বলেন, ‘মাত্র ২০/২৫ দিন আগে হোসনা আক্তার সৌদি আরব যায়। কিন্তু আমরা ইন্টারনেটে তার নির্যাতন হওয়ার একটি ভিডিও দেখেছি। আমরা মেয়েটিকে দ্রুত বাংলাদেশে আনার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানোচ্ছি’।
আরেক প্রতিবেশী তুহিন সওদাগর বলেন, ‘মেয়েটির পরিবার অত্যন্ত গরিব। তাই হোসনা আক্তার সৌদি আরব গিয়েছিল। কিন্তু সে সেখানে খুব নির্যাতনের শিকার হচ্ছে বলে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে দেখেছি। আমরা চাই বাংলাদেশ সরকার সৌদি আরবে বাংলাদেশের দূতাবাসের সাথে যোগাযোগ করে দ্রুত তাকে দেশে আনা হোক’। তবে এ ব্যাপারে জানতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি সৌদি আরবে নির্যাতনের শিকার হয়ে বাঁচার আকুতি জানিয়ে একটি ভিডিও বার্তা পাঠায় হোসনা আক্তার। ভিডিও বার্তায় হোসনা বলেন, ‘দালাল ভালো কাজের কথা বলে আমারে সৌদি পাঠাইছে। আমি এসে দেখি, ওরা আমার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করে না। আমার ওপর অত্যাচার কর’। তিনি বলেন, ‘আমি আসছি ১০-১২ দিন। অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে আমি বলেছি, আমি আর থাকব না। এটা শুনে ওরা আরও অত্যাচার করছে। অফিসে (রিক্রুটিং এজেন্সি) ফোন দিয়েছি, অফিসও আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে’। তিনি বলেন, ‘তোমরা যেভাবে পারো আমারে বাঁচাও। এরা আমাদের বাংলাদেশেও পাঠাতে চায় না। আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছি। এমনকি বলেন, এরা আমার ফোনও চালু করতে দেয় না। স্যার, ম্যাডাম সবাই আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে’।
সম্পাদক : জে.এ কাজল খান
স্বত্ত্ব: দৈনিক বিজয়ের কণ্ঠ (প্রিন্ট ভার্সন)
০১৭১৮৩২৩২৩৯
Design and developed by syltech