ঢাকা ২১শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১২:০৬ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১, ২০২০
ডেস্ক প্রতিবেদন : দেশের মানুষের আমিষের চাহিদা পূরণের প্রধান উপকরণ মাছ-মাংস। যে খাত থেকে এ চাহিদা পূরণ হচ্ছে সেই মৎস্য ও প্রাণিসম্পদে বাংলাদেশ এখন স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। অথচ কয়েক বছর আগেও এ চাহিদা পূরণে আমদানির ওপর নির্ভর করতে হতো। নানামুখী পদক্ষেপের কারণে অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ে মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন সারা বিশ্বে তৃতীয়। একই সঙ্গে বদ্ধ জলাশয়ে চাষকৃত মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন পঞ্চম স্থানে। শুধু তাই নয়, গত ১০ বছরে দেশে মাছের উৎপাদন বেড়েছে ১৪ লাখ ৮২ হাজার টন। আর প্রাণিসম্পদে বাংলাদেশ এখন বিশে^র মধ্যে অনুকরণীয়। চাহিদা পূরণে অন্য দেশের দিকে না তাকিয়ে থেকে প্রাণিসম্পদে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে রফতানিও শুরু করেছে। এভাবে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদে সাফল্য এনে বাংলাদেশ এখন ‘অন্য এক বাংলাদেশ’।
মৎস্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, মৎস্যবান্ধব কার্যক্রম বাস্তবায়ন এবং চাষি ও উদ্যোক্তা পর্যায়ে চাহিদাভিত্তিক লাগসই কারিগরি পরিষেবা প্রদানের ফলে বিদায়ি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে মাছের উৎপাদন হয়েছে ৪৩ লাখ ৮১ হাজার টন। অথচ ২০০৯-১০ অর্থবছরেও মাছের উৎপাদন ছিল ২৮ লাখ ৯৯ হাজার টন। সুতরাং দেখা যাচ্ছে গত ১০ বছরে দেশে মাছের উৎপাদন বেড়েছে ১৪ লাখ ৮২ হাজার টন।
মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির চিত্রের দিকে তাকালে দেখা যায়, প্রতিবছরই মাছের উৎপাদন বেড়েছে গড়ে প্রায় দুই থেকে আড়াই লাখ টন হারে। ২০০৯-১০ অর্থবছরে ২৮ লাখ ৯৯ হাজার টন মাছের উৎপাদনের পরের বছর অর্থাৎ ২০১০-১১ অর্থবছরে মাছের উৎপাদন হয় ৩০ লাখ ৬২ হাজার টন। এরপর ২০১১-১২ অর্থবছরে ৩২ লাখ ৬২ হাজার টন, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৩৪ লাখ ১ হাজার টন, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৩৫ লাখ ৪৮ হাজার টন, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৩৬ লাখ ৮৪ হাজার টন, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৩৮ লাখ ৭৮ হাজার টন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৪১ লাখ ৩৪ হাজার টন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৪২ লাখ ৭৭ হাজার টন এবং সর্বশেষ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৪৩ লাখ ৮১ হাজার টন।
মাছের রাজা ইলিশের অবদানও বাড়ছে মৎস্য খাতে। দেশের মোট উৎপাদিত মাছের প্রায় ১২ শতাংশ আসে শুধু ইলিশ থেকে। জাতীয় জিডিপিতে প্রায় ৩.৫৭ শতাংশ এবং জিডিপিতে কৃষি অবদানের ২৫.৩০ শতাংশই আসে মৎস্য খাত থেকে। এর মধ্যে জিডিপিতে ইলিশের অবদান ১ শতাংশেরও বেশি। একক প্রজাতি হিসাবে মৎস্য খাতে ইলিশের অবদান সবচেয়ে বেশি। তা ছাড়া বাংলাদেশের ইলিশ স্বাদে ও গন্ধে বিশ^সেরা এবং ইলিশ আহরণে বাংলাদেশ শীর্ষে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০০৭-০৮ অর্থবছরে দেশে ইলিশের উৎপাদন ছিল ২ লাখ ৯০ হাজার টন। ২০১৮-১৯ সালে তা ৫ লাখ ১৭ লাখ টনে উন্নীত হয়েছে। অর্থাৎ বিগত ১১ বছরের ব্যবধানে দেশে ইলিশ উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৭৮ শতাংশ।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতের সাফল্যের বিষয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান সময়ের আলোকে বলেন, সরকারের বাস্তবমুখী কার্যক্রমের ফলে বাংলাদেশ এখন মাছ ও মাংস উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রতিবেদন অনুযায়ী জনপ্রতি দিনে মাছ গ্রহণের পরিমাণ ৬২.৫৮ গ্রাম, যা দৈনিক মাথাপিছু মাছের চাহিদার চেয়ে বেশি। জনপ্রতি প্রতিদিন ৬০ গ্রাম মাছ গ্রহণের পরিমাণ খাদ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় প্রকাশিত জাতীয় খাদ্য গ্রহণ নির্দেশিকা-২০১৫ এ নির্ধারিত। ফলে মাথাপিছু মাছের চাহিদা অনুযায়ী বাংলাদেশ মাছ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। তিনি আরও বলেন, মৎস্যজাত উৎস থেকে প্রাণীজ আমিষের চাহিদা পূরণ, দারিদ্র্য বিমোচন ও রফতানি আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে বর্তমান সরকার সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। মৎস্য খাতের এ অনন্য সফলতা ধরে রাখার লক্ষ্যে সরকার বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। মৎস্য খাতের উন্নয়নে সরকার বদ্ধ জলাশয়ে মৎস্য চাষ নিবিড়করণ কার্যক্রম চালু করেছে, পরিবেশবান্ধব চিংড়ি চাষ সম্প্রসারণ করা হচ্ছে, জাটকা সংরক্ষণ ও ইলিশ সম্পদ উন্নয়নে কার্যকর পদক্ষেপ, পোনা অবমুক্তি কার্যক্রম ও বিল নার্সারি স্থাপন করা হয়েছে, সমাজভিত্তিক মৎস্য ব্যবস্থাপনা ও মৎস্য অভয়াশ্রম স্থাপন করা হয়েছে, মাছের আবাসস্থল উন্নয়ন করা হচ্ছে, মাছের প্রাকৃতিক প্রজননক্ষেত্র সংরক্ষণ করা হচ্ছে। তা ছাড়া মৎস্য আইন বাস্তবায়ন এবং সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বিশেষ করে বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের সীমানা নির্ধারণ হওয়ায় যে ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার এলাকা মৎস্য আহরণে আইনগত অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তাতে বাংলাদেশের মৎস্য খাতের ব্যাপক উন্নতি ঘটবে। এর মাধ্যমে ব্লু ইকোনোমির অপার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
বিদায়ি অর্থবছর ২০১৮-১৯ এ জিডিপিতে প্রাণিসম্পদ খাতের অবদান ১.৪৭ শতাংশ এবং প্রবৃদ্ধির হার ৩ দশমিক ৪৭ শতাংশ। তা ছাড়া মোট কৃষিজ জিডিপিতে প্রাণিসম্পদ খাতের অবদান ১৩ দশমিক ৪৬ শতাংশ। জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশ প্রত্যক্ষ এবং ৫০ শতাংশ পরোক্ষভাবে প্রাণিসম্পদ খাতের ওপর নির্ভরশীল। প্রাণীজ আমিষের প্রধান উৎস্য দুধ, মাংস এবং ডিমের উৎপাদন বিগত পাঁচ বছরে ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। এই পাঁচ বছরে দুধের উৎপাদন বেড়েছে ৪২.৩৭ শতাংশ, মাংসের উৎপাদন বেড়েছে ২৮ দশমিক ২৩ শতাংশ এবং ডিমের উৎপাদন বেড়েছে ৫৫ দশমিক ৬১ শতাংশ। তা ছাড়া দুধের প্রাপ্যতা বেড়ে হয়েছে দিনে জনপ্রতি ১৬৫.০৭ মিলি লিটার, মাংসে ১২৪.৯৯ গ্রাম এবং ডিমে ১০৩.৮৯টিতে। তা ছাড়া বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি খামার মিলে বছরে দুধের উৎপাদন ৯৯ লাখ ২৩ হাজার টন, মাংসের উৎপাদন ৭৫ লাখ ১৪ হাজার টন এবং ডিমের উৎপাদন ১৭১১ কোটি পিস।
দেশে গবাদি পশু এবং হাঁস-মুরগির উৎপাদনও বেড়েছে। সর্বশেষ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে গরুর উৎপাদন হয়েছে ২৪.২৪ মিলিয়ন, মহিষের উৎপাদন ১.৫০ মিলিয়ন, ছাগলের উৎপাদন ২৬.২৭ মিলিয়ন, ভেড়ার উৎপাদন ৩.৫৪ মিলিয়ন, মোরগ-মুরগির উৎপাদন ২৮৯.২৮ মিলিয়ন এবং হাঁসের উৎপাদন ৫৭.৭৫ মিলিয়ন। এভাবে মৎস্য খাতের ন্যায় প্রাণিসম্পদ খাতও আজ এক সমৃদ্ধ খাতে পরিণত হয়েছে বলে জানান খাত সংশ্লিষ্টরা।
সম্পাদক : জে.এ কাজল খান
স্বত্ত্ব: দৈনিক বিজয়ের কণ্ঠ (প্রিন্ট ভার্সন)
০১৭১৮৩২৩২৩৯
Design and developed by syltech