ঢাকা ২১শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১২:১১ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১, ২০২০
ডেস্ক প্রতিবেদন : বছরের প্রথম দিন শিশু-কিশোররা খালি হাতে স্কুলে যাবে। আর নতুন ঝকঝকে বই নিয়ে ঘরে ফিরবে। কেউ কেউ দীর্ঘশ্বাসে ঘ্রাণ নেবে আনকোরা বইয়ের। নতুন বছরে নতুন শ্রেণিতে উত্তীর্ণের উচ্ছ্বাস আর নতুন বই প্রাপ্তির আনন্দ দুয়ে মিলে খুশির বন্যা বয়ে যাবে দেশের প্রতিটি স্কুলে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের ৪ কোটি ২৭ লাখ ৫২ হাজার ১৯৮ জন ছাত্রছাত্রীর হাতে এবার ৩৫ কোটি ৩১ লাখ ৫৪ হাজার ৬৩৮ কপি বিনামূল্যের পাঠ্যবই তুলে দেবে সরকার। আজ (বুধবার) ইংরেজি বছরের প্রথম দিন উৎসবের মধ্য দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানে শতভাগ বই পৌঁছে গেছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা।
বিনামূল্যের বই বিতরণ কার্যক্রম ‘পাঠ্যপুস্তক উৎসব’ কোমলমতি শিশু-কিশোরদের কাছে হয়ে ওঠে ‘আনন্দ উৎসব’। প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের স্বল্প পরিসরে অনেক আগে থেকে বই দেওয়া হলেও ২০১০ সাল থেকে সরকার প্রথম থেকে নবম শ্রেণির সব শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে বই দিয়ে আসছে। এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, এ বছর প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য ব্রেইল বই এবং ৫টি নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের জন্য নিজ ভাষায় বই দেওয়া হবে।
আজ সকালে কেন্দ্রীয়ভাবে উৎসবের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়া হবে। উৎসবে শিশু-কিশোরদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে যোগ দেবেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। রাজধানীর বাইরে সাভারের অধর চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তক উৎসবের উদ্বোধন করবেন। অন্যদিকে এদিন সকাল ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তক উৎসবের উদ্বোধন করবেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন। কেন্দ্রীয় উৎসব হলেও বছরের প্রথম দিন সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উৎসবের মধ্য দিয়ে বই বিতরণ করা হবে। ওই উৎসবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা অংশ নেবেন।
সব বই এবার দেশেই ছাপা হয়েছে। সারা দেশের প্রায় ৪০০ মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানের (প্রিন্টিং প্রেস) ৯৮ হাজার কর্মী রাত জেগে পাঠ্যবই ছাপা, কাটিং ও বাইন্ডিংয়ের কাজে জড়িত ছিলেন। আর এসব বই ছেপে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে দিতে কাজ করেছে ১৬ হাজার ৪০০টি ট্রাক।
২০২০ শিক্ষাবর্ষের বিনামূল্যের বই ছাপতে সরকারের ৯২৯ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। মাধ্যমিক ও মাদ্রাসার দাখিল স্তরের বই ছাপতে খরচ হবে ৪৬৯ কোটি টাকা। মাধ্যমিক স্তরের প্রায় আট কোটি বইয়ের কাগজ কিনে দেওয়া হয়েছে। তাতে আরও ব্যয় হবে ১৯৭ কোটি টাকা। আর প্রাথমিক স্তরের বই ছাপতে খরচ হবে ২৬৪ কোটি টাকা।
এনসিটিবি জানিয়েছে, আগামী শিক্ষাবর্ষের প্রাক-প্রাথমিক স্তরের ৩২ লাখ ৭২ হাজার ১৮৬ জন কোমলমতি ছাত্রছাত্রীর জন্য ৬৬ লাখ ৭৫ হাজার ২৭৬ কপি বই ৬টি লটে ছাপানো হয়েছে। প্রাথমিক স্তরের (প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি) দুই কোটি ৪ লাখ ৪১ হাজার ৫৯৫ ছাত্রছাত্রী হাতে পাবে ৯ কোটি ৮৫ লাখ ৫ হাজার ৪৮০ কপি বই।
ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ৯৭ হাজার ৫৭২ জন শিশুর জন্য প্রাক-প্রাথমিক, প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির জন্য পাঁচটি ভাষায় রচিত ২ লাখ ৩০ হাজার ১০৩ কপি বই ছাপানো হয়েছে। ইবতেদায়ি (মাদ্রাসার প্রাথমিক) স্তরের ৩২ লাখ ৬৯ হাজার ৭১৫ জন শিশুর জন্য দুই কোটি ৩২ লাখ ৪৩ হাজার ৩৫ কপি বই ছাপানো হয়। এর সঙ্গে সারা দেশের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ৭৫০ জন শিক্ষার্থীর জন্য ছাপানো হয় ৯ হাজার ৫০৪টি বই।
মাধ্যমিক স্তরে মোট ছাপা হয়েছে ২৪ কোটি ৭৭ লাখ ৪২ হাজার ১৭৯ কপি বই। এর বাইরে কারিগরি স্তরের জন্য ১৬ লাখ ৩ হাজার ৪১১ কপি বই, এসএসসি ভোকেশনালের জন্য ২৭ লাখ ৬ হাজার ২৮ কপি বই এবং দাখিল ভোকেশনাল স্তরের জন্য ১ লাখ ৬৭ হাজার ৯৬৫ কপি বই ছাপানো হয়। ২০১৯ সাল পর্যন্ত মোট ২৯৬ কোটি সাত লাখ ৮৯ হাজার ১৭২ কপি বই বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড প্রতিবছর সরকারের বিশাল এই কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়ন করছে, যা সারাবিশ্বে নজরকাড়া সুনাম বয়ে এনেছে।
সম্পাদক : জে.এ কাজল খান
স্বত্ত্ব: দৈনিক বিজয়ের কণ্ঠ (প্রিন্ট ভার্সন)
০১৭১৮৩২৩২৩৯
Design and developed by syltech