খলিলুর রহমান :
তুরস্কের আয়াসোফিয়ায় পুনরায় মসজিদ ও নামায চালু নিয়ে যে সব মাদখালী নেতিবাচক ফতোয়া দিয়ে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে, তারা কি জানে না, প্রাক ইসলামিক যুগে কা’বা শরীফ অর্থাৎ মসজিদুল হারাম ছিল মক্কার পৌত্তলিকদের পূনঃনির্মিত ‘দেবালয় ও পূজালয়’ তথা তাদের উপাসনালয়। সেখানে লাত, উয্যাহ, হোবল, মনাত-সহ ছোট-বড় ৩৬০ দেব-দেবী রেখে এগুলোল পূজো (উপাসনা) করতো মক্কার কাফের ও পৌত্তলিক রা। ইসলামের আগমন ও মক্কা বিজয়ের পর কা’বা গৃহ থেকে পূজ্য দেব-দেবীগুলো অপসারণ করে তথায় শুরু হয় আযান ও এক আল্লাহর ইবাদত সালাত (নামায)।
আর তুরস্কের আয়াসোফিয়া’তো বিক্রি করে মূল্য নিয়ে যায় খ্রীস্টান যাজকরা। তুর্কি ওসমানী খলিফা তা ক্রয়ের পর “ওয়াকফ লিল্লাহ তায়ালা” করে দেন মসজিদের নামে। সে থেকে আয়াসোফিয়াকে মসজিদ বানিয়ে পাঁচ শতাধিক বছর আযান ও নামাজ চলে।
আপত্তি তোলেনি কোন ইহুদী খ্রীস্টান ও মাদখালী মুসলিম মৌ’লোভীরা। ১৯২৪ সাল পর্যন্ত চলমান প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ও ওসমানী খেলাফতের পতনের পর অধুনা তুরস্কের জাতির পিতা হয়ে আবির্ভুত হন ধর্মহীন মতবাদী কামাল আতাতুর্ক। পশ্চিমা মদদপুষ্ট কামাল আতাতুর্ক আধুনিক তুরস্ককে ধর্মনিরপেক্ষ (ধর্মহীন) রাষ্ট্র ঘোষনা দিয়ে বদলে দেন সকল ইসলামী রীতি-নীতি ও কালচার। সামরিক স্বৈরাচার কামাল আতাতুর্ক তার পশ্চিমা মিত্র ইহুদী-খ্রীস্টানদের খুশি করতে সামরিক শক্তির বলে জানাযা ডাকেন। ইসলামের খেলাফত, এমনকি স্বয়ং আল্লাহ তায়ালাকে জানাযা করে (নাউজু বিল্লাহ) তুর্কি থেকে নির্বাসনে দিয়ে দেন। তুর্কি জাতীয়তাবাদের নামে তুরস্কে নিষিদ্ধ ঘোষনা করেছিলেন আরবি কোরআন। আরবির বদলে কোরআন ছাপিয়েছিলেন তুর্কি ভাষায় ও লেটিন বর্ণমালায়। ওহীর মাধ্যমে আল্লাহ নির্ধারিত আরবি শব্দমালার আযানকে বদলে দিয়েছিলেন তুর্কি শব্দমালায়। অথচ এর আগ পর্যন্ত তুর্কি ভাষার লিপি (বর্ণ) ছিল আরবি বর্ণমালা। পশ্চিমা মদদপুষ্ট স্বৈরাচার কামাল আতাতুর্ক আরব ও ইসলামকে চরমভাবে ঘৃণা করতেন। তাই আরবি লিপি বাদ দিয়ে এর বদলে দেশে চালু করেন পশ্চিমাদের লেটিন বর্ণমালা। বন্ধ করে দেন আরবি ও কোরআনের সকল ছাপাখানা। পরবর্তীতে ১৯৩৩ সালে বন্ধ করে দেন তুর্কি খেলাফতের সর্বশেষ নিদর্শন রাজকীয় মসজিদ আয়াসোফিয়া। বানিয়ে দেন পর্যটকদের জন্য যাদুঘর। ইস্তাম্বুলে দারুল খেলাফত বন্ধ করে আধুনিক তুর্কির রাজধানী করেন আনকারা। এশিয়ার দেশ হওয়া সত্বেও তুর্কিকে করেন ইউরোপ-আমেরিকার সামরিক জোট ন্যাটোভুক্ত।
দীর্ঘপ্রায় ছয় দশক সংগ্রামের পর আরবি কোরআন ও আরবি আযান প্রবেশ করে তুর্কির জমিনে। মসলমানদের দীর্ঘ ৮৬ বছরের দাবি, সংগ্রাম ও আইনী লড়াইয়ের পর পুণরূদ্ধার হয় খেলাফতে ওসমানিয়ার কেন্দ্র মসজিদে আয়াসোফিয়া। আয়াসোফিয়া থেকে ধ্বনিত হতে শুরু করে আল্লাহু আকবর-এর আযান। এতে করে চরম গাত্রদাহের সৃষ্টি হয় ইহুদী-খ্রীস্টান অধ্যুষিত পশ্চিমা বিশ্বে। এর জেরে ইহুদী-খ্রীস্টানদের এশিয়া ও উপমহাদেশীয় দোসর আহলে হাদীস নামের
মাদখালীদের মধ্যেও শুরু হয় চরম হতাশা। তাই তারা মসজিদে আয়াসোফিয়া নিয়ে মেতে ওঠে নেতিবাচক ফতোয়ার ফুলজুরিতে।
মাদখালী, ওহে মাদখালী। তোগোর দাবি ও ফতোয়া যখন এই ‘খ্রীস্টানদের নির্মিত গীর্জা মসজিদ বানানো যাবে না, তখন আমরা মুসলিমদের দাবি-“তোরা এখন থেকে আর যাবে না মক্কায় হজ্জ করতে। যাবে না তোরা কাবা শরীফের তাওয়াফ করতে। যাবে না তোরা মসজিদুল হারামে নামাযও আদায় করতে। কারণ,তোদের ফতোয়া মতে জাহেলী যুগে মক্কার পৌত্তলিক কাফেরগনের হাতে পুনঃনির্মিত তাদের ‘দেবালয় পূজালয় (উপাসনালয়)’ কা’বা ঘরকে মসজিদ বানানো ঠিক হয়নি।
নাউজু বিল্লাহি মিনাল কুফরি ওয়াজ্ব জ্বালাল।