ঢাকা ১৬ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২রা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৬:১২ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৩, ২০২১
আজমিরীগঞ্জ প্রতিনিধি
হবিগঞ্জরে আজমিরীগঞ্জে সরকারি অনুমোদন ছাড়াই ক্ষুদ্রঋণ ব্যবসা জমজমাটভাবে করছে কিছু এনজিও ও সমিতি। তাদের অনেকের নিবন্ধনও নেই। এসব সমিতি কিংবা এনজিওর ঋণের বোঝায় পড়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন যথাক্রমে- জলসুখা, বদলপুর, কাকাইলছেও, শিবপাশাও সদর ইউনিয়নে প্রায় ২০-৩০টি এনজিও ক্ষুদ্র ঋণের নামে মূলত কাগজে কলমে সুদের ব্যবসা করছে।
জরুরী প্রয়োজনে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও দিনমজুররা এদের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে আটকা পড়ছে কড়া সুদের জাতাকলে। সুদ ও ঋণের টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে অনেকে ঘরের আসবাবপত্র বিক্রি করছেন, আবার অনেককে ঘরবাড়ি বিক্রি করতে হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বেশিরভাগ এনজিও বা সমিতির কোনো সরকারি নিবন্ধন নেই। কিন্তুু তারা স্বাচ্ছন্দ্যে মনমজাইয়া ক্ষুদ্রঋণের ব্যবসা করে চলেছে। নিয়ম অনুযায়ী একটি এনজিওর ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের মাইক্রো ক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির নিবন্ধন নিতে হয়। আর সমিতির ক্ষেত্রে সমাজসেবা ও সমবায় অধিদপ্তরের নিবন্ধন নিয়ে শুধু নিজেদের সদস্যদের কাছ থেকে সঞ্চয় গ্রহণ ও ঋণ দেয়ার কথা। কিন্তু এসব এনজিও ও সমিতি সরকারি নিয়মনীতির কোন তোয়াক্কা না করে দেদারসে তাদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
এসব অনুমোদনহীন সংস্থা পাস বইয়ের মাধ্যমে ঋণের কিস্তির টাকা তুলছে। সাপ্তাহিক ২০% হারে সুদে কোন কোন এনজিও বা সমিতি ঋণ প্রদান করে উক্ত ঋণের সুদ আদায়ের অভিযোগও পাওয়া গেছে।
অনেক ভুক্তভোগী অভিযোগ করে বলেন, এসব সংস্থার সভাপতি-সম্পাদকরা দিনে দিনে আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে যাচ্ছেন। তাদের প্রভাবের কারণে কেউ কিছু বলতে পারে না। শুধুমাত্র বদলপুর ইউনিয়নে ওই ১৫ এর অধিক সমিতির খবর পাওয়া গেছে, যেগুলির মধ্যে আবার কয়েকটি টাকার অংকে তাদের সমিতিকে কোটি টাকার মূল্যে নিয়ে গেছে।
উল্লেখযোগ্য কয়েকটি এনজিও সমিতির মধ্যে বন্ধন, প্রথম আলো, জিএইচপিএল, সেভেন স্টার এনজিওগুলি চড়া সুদে ব্যবসা করে শুধুমাত্র বদলপুরেই কোটি টাকার এনজিওতে পরিণত হয়েছে।
আজমিরীগঞ্জ সচেতন সমাজ এই ধরনের ব্যবসাকে কাগজে কলমে প্রকাশ্যে ‘সুদের ব্যবসা’ আখ্যা দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি করেছেন।
নিবন্ধনবিহীন সমিতি কিভাবে চালাচ্ছেন এ বিষয়ে জানতে প্রথম আলো এনজিও পরিচালক নিবারন দাসকে বার বার কল করার পরও তিনি কল রিসিভ করেননি।
সেভেন স্টার সমিতির পরিচালক গনেন তালুকদার জানান, তারা এরকম কোন সমিতি চালান না।
বন্ধন সমিতির পরিচালক রাজেশ দাস এ প্রতিবেদকের পরিচয় পাওয়ার পরপরই কল কেটে দেন। পরে আবারও কলে চেষ্টা করলে তিনি রিসিভ করেননি। ফলে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
জিএইচপিএল সমিতির পরিচালক তাপস দাস জানান, সমিতি চালান তবে সমিতি চালাতে কোন ধরনের নিবন্ধন আমরা নেইনি।
সমিতির নামে পাশবই করে চড়া সুদে ঋণ, সমিতির সদস্যদের বাইরে ঋণ দেওয়া যায় কিনা জানতে চাইলে আজমিরীগঞ্জ উপজেলা সমবায় কার্যালয়ের সহকারী পরিদর্শক দুলাল দেব রায় ‘দৈনিক বিজয়ের কন্ঠ’ কে বলেন, সমবায় আইনে আছে নিবন্ধন ছাড়া কেউ যদি সমিতির পূর্বে সমবায় ব্যবহার করে তাহলে সমবায় আইনের ৯ ধারা অনুযায়ী ৭ বছরের জেল অনাদায়ে নূন্যতম ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা করার বিধান রয়েছে। আমরা খোঁজ নিচ্ছি কেউ যদি আজমিরীগঞ্জে এমন ব্যবসা করে তাহলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে আজমিরীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুলতানা সালেহী সুমি ‘দৈনিক বিজয়ের কন্ঠ’কে জানান, এইসকল এনজিও, সমবায় সমিতির বিরুদ্ধে কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে আমি অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি ‘দৈনিক বিজয়ের কন্ঠ’কে জানান, এ ব্যাপারে আমার কাছে এখনও কোন অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ আসলে আমি অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
সম্পাদক : জে.এ কাজল খান
স্বত্ত্ব: দৈনিক বিজয়ের কণ্ঠ (প্রিন্ট ভার্সন)
০১৭১৮৩২৩২৩৯
Design and developed by syltech