ভবনের ছাদে সবজি বাগান

প্রকাশিত: ১:৫২ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৯

ভবনের ছাদে সবজি বাগান

নিজস্ব প্রতিবেদন
নিচ তলা থেকে সিঁড়ি বেয়ে সাত তলায় ছাদের ওপরে ওঠে দেখা গেল বেশ ছিমছাম, সাজানো-গোছানো একটি বাগান। লুঙ্গি আর পাঞ্জাবি পরা প্রায় ষাটোর্ধ্ব আব্দুস সালাম বাগানের পরিচর্যায় ব্যস্ত। হাজী মোঃ আব্দুস সালাম সিলেট নগরের শাহজালাল উপশহর আবাসিক এলাকার ছাদ বাগানের মালিক। নিজের বাড়ির ছাদে বিভিন্ন প্রজাতির ফুল, ফল ও ঔষধী গাছসহ সিজনাল তরিতরকারি চাষ করাতে তিনি ইতিপূর্বে এলাকায় ছাদ বাগানের মালিক হিসেবেই বেশ পরিচিতি পেয়ে গেছেন।

তবে, আব্দুস সালাম পেশা হিসেবে এই পথটি বেছে নেননি। সম্পূর্ণ শখের বসেই তার বাড়ির ছাদটিকে আধুনিক পন্থায় চাষের উপযুক্ত করে তুলে তাতেই বিভিন্ন সবজির চাষ করতে শুরু করেছেন। প্রতিদিন নিয়ম করে তিনি ছাদে ওঠে টমেটো, ঝিঙে আর বাউকুল গাছের ডালপালা সোজা করে দেওয়া ও বিভিন্ন গাছের মরা পাতা আর আগাছা সরানোর কাজ করে থাকেন।

শুক্রবার বিকেলে উপশহর আবাসিক এলাকার এইচ ব্লকের ৩ নম্বর সড়কের সুরম্য বাড়ির বাগানটি দেখতে গেলে কথা হয় বাড়ির মালিক আব্দুস সালামের সাথে। তিনি জানান, প্রায় এক হাজার ১৪৫০ বর্গফুটের ছাদের পুরোটাজুড়ে তিনি বিভিন্ন সবজির চাষ করেছেন। কী নেই তাঁর সেই বাগানে। সব ধরনের সবজিসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফুল ও ফলের গাছ রয়েছে পুরো ছাদ জুড়ে।

সেখানে ৬ ও ৭ তলার দু’টি ফোরে রয়েছে টমেটো, বেগুন, মূলা, ফুলকপি, শালগম, লালশাক, পালংশাক, লাইশাক, লুডুস পাতা, কাঁচা মরিচ, ধনিয়াপাতা, ক্যাপসিকাম, নাগা মরিচ, লাউ, পেপে ও কলমির শাক। আরও রয়েছে বাতাবি লেবু, পেয়ারা, বাউকুল, আপেলকুল, বারোমাসি আম, মেহেদি, ডালিম, কালোজাম, কামরাঙ্গা, সফেদা, তেজপাতা, মেহেদী, মোসাম্বি ও কলাগাছ সহ তিন রকমের পিয়ারা, দু’রকমের বড়ই, এলাচি, লুকলুকি, আপেল কুল, বাউকুল, শরীফা, দারুচিনি।

এছাড়া ফুল গাছের মধ্যে গাদা, সূর্যমুখী, কেকটাস, নয়নতারা, গোলাপ, মোহন লোভা, বাগান বিলাস, বাহারি কচু, ঘৃতকুমারী এবং আম, তুলসী, কমলাসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। যা পুরো ছাদটাকে একটি নির্মল বাগানে রূপ দিয়েছে। গত দু’বছর যাবৎ আব্দুস সালাম আরো দু’জনকে সাথে নিয়ে তার মনের মতো করে পুরো ছাদটাকে একটি বাগানের পরিণত করেছেন।

ছাদের চারপাশে টাইলস দিয়ে বাঁধানো সবজিখেত। এখানে বিভিন্ন শাকের মধ্যে টমেটোগাছে শোভা পাচ্ছে ছোট-বড় কাঁচা-পাকা টমেটো। বেগুনগাছে দু-একটি বেগুনও উঁকি দিচ্ছে।

আব্দুস সালাম বলেন, ‘এখন তো মৌসুমের প্রায় শেষ সময়। তাই সবজির বাগানের শোভা কিছুটা কমে গেছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের বাইরে থেকে সবজি কিনতে হয় না।

জানা যায়, আব্দুস সালাম দীর্ঘদিন আমদানী-রপ্তানীর ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। বর্তমানে তিনি তার উপশহর এলাকায় অবসর সময় কাটানোর ইচ্ছে থেকেই বাড়ির ছাদে বাগানটি গড়ে তুলেন কৃষি বিভাগের পরামর্শে। প্রতিদিন সকাল-বিকেল বাগানে এসে গাছে পানি দেওয়াসহ পরিচর্যার কাজ নিজেই করেন। মাঝে মাঝে বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক সাহায্য করেন তাঁকে। নিচ থেকে ছাদে পাইপ টানা হয়েছে বাগানে পানি দেওয়ার জন্য। ওপরে নেট টানিয়ে দেওয়া হয়েছে বাগানের সুরক্ষার জন্য। আব্দুস সালামের স্ত্রী আর এক ছেলে নিয়ে সুখের সংসার।

এ প্রসঙ্গে সিলেট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ আবুল হাশেম বলেন, জনসংখ্যার চাপের কারণে ইতিমধ্যেই সিলেটের বিভিন্ন এলাকায় কৃষি জমি বিলীন হতে বসেছে। এ অবস্থায় বহুতল ভবনের ছাদে সবজি চাষকে আমরা উৎসাহ জোগাই এবং উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে থাকি।

তিনি বলেন, বাড়ির ছাদকে ফেলে না রেখে বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি ও ফলের আবাদ করা সম্ভব। এতে কীটনাশকমুক্ত ফল উৎপাদন করা সম্ভব। বাড়ির ছাদে বাগান করতে কৃষি বিভাগের ওয়েবসাইট থেকেও অনেকে জানতে পারবেন।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বশেষ ২৪ খবর