ঢাকা ১৯শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৫:৩৫ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ৮, ২০১৯
নিজস্ব প্রতিবেদন
সিলেট সিটি কর্পোরেশেনের (সিসিক) মাসব্যাপী পরিচ্ছন্নতা অভিযানে আর্থিক কেলেঙ্কারি, শিশুশ্রম ও লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। পর্যাপ্ত শ্রমিক কাজে না লাগিয়ে এবং নির্ধারিত পারিশ্রমিক না দিয়ে দৈনিক লোপাট করা হচ্ছে সিসিক’র প্রায় অর্ধলক্ষ টাকা। আর এ টাকা ভাগ বাটোয়ারা করা হচ্ছে পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা কমিটির সচিবসহ সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের মধ্যে। ফলে ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হচ্ছে মেয়রের। ভেস্তে যাচ্ছে কাঙ্খিত উন্নয়ন। গত ৩ এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছে সিসিকের মাসব্যাপী এই পরিচ্ছন্নতা অভিযান।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের পচ্ছিন্নতা অভিযানে ৪ সদস্যের পরিচালনা কমিটির আহŸায়ক হচ্ছেন সিসিক’র নির্বাহী প্রকৌশলী আলী আকবর এবং সচিব হচ্ছেন সিসিক’র পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা মোহাম্মদ হানিফুর রহমান। মূলত, সচিব মোহাম্মদ হানিফুর রহমানই পচিালনা করছেন সার্বিক অভিযান। অভিযানে সিসিক’র ২৭টি ওয়ার্ডের প্রত্যেকটি ওয়ার্ডের সচিবসহ সিসিক’র ২জন কর্তা ব্যক্তি নিয়ে ৩ সদস্য করে পৃথক ২৭টি মনিটরিং কমিটি করা হয়েছে। প্রত্যেকটি ওয়ার্ডের নিয়মিত মাসিক বেতনভোগী ৫জন পরিচ্ছন্নতা কর্মী ছাড়াও দৈনিক মজুরিতে আরো ৫ জনসহ মোট ১০ জন করে কর্মীকে কাজে লাগানোর কথা। সব মিলিয়ে ২৭০ জন পরিচ্ছন্নতা কর্মী দিয়ে কাজ করানোর কথা রয়েছে এ অভিযানে। এদের মধ্যে ১৩৫ জন দিনমজুর ও ১৩৫ জন ওয়ার্ড ভিত্তিক মাসিক বেতনভোগী পরিচ্ছন্নতা কর্মী।
এ ছাড়াও বিশেষ বিশেষ স্পটে আরো প্রায় ১০০ জন দিনমজুর কর্মী দিয়ে কাজ করানোর কথা থাকলেও সরেজমিনে পুরো সিটি এলাকায় ২৭০ জনের স্থলে কাজ করছে মাত্র ১০০ থেকে ১৩০ জন পরিচ্ছন্নতা কর্মী। যাদের অর্ধেকই নিয়মিত মাসিক বেতনভোগী কর্মী। দৈনিক মজুরীতে ওয়ার্ডভিত্তিক ১৩৫ জন ও বিশেষ স্থানসমূহে ১০০ জন দিয়ে কাজ করানোর কথা থাকলেও সরেজমিনে এর অর্ধেক কর্মী দিয়েই কাজ করাতে দেখা যাচ্ছে।
কয়েকটি ওয়ার্ড ঘুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, কোন ওয়ার্ডেই নির্ধারিত ১০ জন পরিচ্ছন্নতা কর্মী নেই। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন মাসিক বেতনভোগী ওয়ার্ড পরিচ্ছেন্ন কর্মী জানান, অনিয়মিত দৈনিক মজুরীর কর্মীদের অধিকাংশ কর্মীদের কাজে না লাগিয়ে তাদের নামে মজুরীর টাকা তুলে নেয়া হচ্ছে। এ ছাড়াও দৈনিক মজুরীতে প্রত্যেক কর্মীকে ৩৫০ টাকা হারে মজুরী দেয়ার কথা থাকলেও শিশু শ্রমিকদের ক্ষেত্রে নির্ধারিত ৩৫০ টাকা দেয়া হচ্ছে। আবার বড় শ্রমিকদের বেলায় এর ব্যতিক্রম চোখে পড়ে। তাদের বেলায় ন্যূন্যতম ৪০০ টাকা থেকে ৪৫০ টাকা পর্যন্ত মজুরী দেওয়া হচ্ছে। এখানে ৩৫০ টাকার স্থলে ৪৫০ টাকা মজুরী কিভাবে প্রদান করা হচ্ছে সে টাকা কোথা থেকে আসছে এমন প্রশ্ন এখন জনমনে। শিশু শ্রমিকদের সাড়ে ৩শ’ টাকা এবং বড় শ্রমিকদের বেলায় সাড়ে ৪শ’ টাকার ব্যবধান জান চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেক শ্রমিক জানান, নির্ধারিত শ্রমিকের চেয়ে কম শ্রমিক দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে। এতে যে টাকা লভ্যাংশ হচ্ছে তা থেকে সামান্যতম বাড়তি টাকা মজুরী বাড়িয়ে বড় শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে। সিটি কর্পোরেশনের তালিকায় শ্রমিকের হিসেব মতে যে পরিমাণ শ্রমিক মাঠে কাজ করার কথা, সরজমিনে সেই পরিমাণ শ্রমিক দিয়ে কাজ না করিয়ে কম শ্রমিক দিয়ে কাজ করানোর ফলে প্রতিদিনই আত্মসাত করা হচ্ছে বড় অঙ্কের টাকা।
এছাড়াও সরাসরি বিশেষ বিশেষ স্থানে পরিচ্ছন্নতা অভিযানে যুব ও পৌড়দের কাজে না লাগিয়ে ১০/১২ বছরের শিশুদের দিয়ে পরিচ্ছন্নতা কাজ করিয়ে শিশুশ্রম আইন লংঘন করছে কর্তৃপক্ষ। এভাবে পরিচ্ছন্নতা অভিযানের সচিব মোহাম্মদ হানিফুর রহমানসহ সংশ্লিষ্টরা অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে সিসিক’র দৈনিক প্রায় অর্ধলক্ষটাকা আত্মসাত ও ভাগ-বাটোয়ারা করে নিচ্ছেন। এতে করে ভেস্তে যাচ্ছে সিলেট নগরের পরিচ্ছন্নতা অভিযান। অভিযানের নামে লোপাট হচ্ছে সিসিক’র লাখ-লাখ টাকা। ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করা হচ্ছে জননন্দিত সিটি মেয়রের।
অভিযানে অনিয়মের ব্যাপারে সিসিক’র পরিচ্ছন্নতা অভিযান কমিটির সচিব মোহাম্মদ হানিফুর রহমানের সাথে কথা হলে তিনি দৈনিক বিজয়েরকণ্ঠকে জানান, অনিয়মের অভিযোগ সত্য নয়, তবে অনেক ক্ষেত্রে দৈনিক মজুরিতে পরিচ্ছন্নতা কর্মীর অভাব রয়েছে বলে জানান তিনি।
সম্পাদক : জে.এ কাজল খান
স্বত্ত্ব: দৈনিক বিজয়ের কণ্ঠ (প্রিন্ট ভার্সন)
০১৭১৮৩২৩২৩৯
Design and developed by syltech