অনুপ্রবেশকারীদের তালিকায় শীর্ষে সুনামগঞ্জ, সর্বনিম্ন সিলেটে

প্রকাশিত: ২:২৪ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৯, ২০১৯

অনুপ্রবেশকারীদের তালিকায় শীর্ষে সুনামগঞ্জ, সর্বনিম্ন সিলেটে

নিজস্ব প্রতিবেদন : সিলেট বিভাগে অনুপ্রবেশকারীদের তালিকায় সর্বোচ্চ স্থানে রয়েছে সুনামগঞ্জ। এই জেলায় মোট অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যা ২২ জন। সবচাইতে কম অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যা সিলেটে। প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী এই জেলায় অনুপ্রবেশ কারীর সংখ্যা ৭জন। এর মধ্যে মৌলভী বাজারে ৮ জন থাকলেও হবিগঞ্জে অনুপ্রবেশকারীর তালিকায় নাম রয়েছে ১৮ জনের। সব মিলিয়ে সিলেট বিভাগে অনুপ্রবেশকারী হিসেবে সর্বমোট ৫৫ জনের নাম উঠে এসেছে তালিকায়।
.
বুধবার কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা আহমদ হোসেন একটি গণমাধ্যমকে এই তথ্য জানিয়েছেন। তথ্যঅনুযায়ী এই
তালিকা গণমাধ্যমে প্রকাশের পর সিলেট জোড়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্ঠি হয়। বিশেষ করে বিভিন্ন উপজেলায় আরো একাধিক চিহ্নিত অনুপ্রবেশ কারী রয়েছেন- এমন দাবি করেছেন বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা। অনেকেই তালিকায় থাকা কয়েকটি নাম দেখে বিস্মিতও হয়েছেন।
.
অনুপ্রবেশকারীদের অধিকাংশই এসেছেন বিএনপি-জামায়াত থেকে। তাছাড়া, বিভিন্ন সময়ে আরো অন্যান্য দল থেকে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতৃবৃন্দের হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে আওয়ামী লীগে প্রবেশ করেছেন একাধিক অনুপ্রবেশকারী। দলে প্রবেশ করেই বাগিয়ে নিয়েছেন পদ-পদবি। এ রকম একাধিক অনুপ্রবেশকারী বিভিন্ন উপজেলা কমিটিতে যুক্ত থাকলেও প্রকাশিত তালিকায় নাম আসেনি তাদের- এমনটি জানিয়েছেন বিভিন্ন উপজেলার ত্যাগী তোকর্মীরা। এমনকি উপজেলা ও ইউনিয়ন কমিটিতে অনুপ্রবেশকারী হিসেবে দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের কাছে চিহ্নিত এবং নিন্দিত ব্যক্তিদের নামও নেই এই তালিকায়।
.
টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ। দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি তত্ত্বাবধানে দলে শুদ্ধি অভিযানের অংশ হিসেবে অনুপ্রবেশ
কারীদের তালিকা করা হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি জানান, ওই তালিকাটি প্রধানমন্ত্রীর দলীয় কার্যালয় থেকে বিভিন্ন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের কাছে পাঠানো হয়েছে। আগামী সম্মেলনে নতুন নেতৃত্ব আসবে। অনুপ্রবেশকারী, বিতর্কিত বা অপকর্মকারীরা আওয়ামী লীগের কোনো পর্যায়ের নেতৃত্বে যেন আসতে না পারে, সে ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। এদিকে, অনুপ্রবেশকারীদের তালিকা প্রকাশের পর বিভিন্ন উপজেলায় নেতাকর্মীদের মধ্যে শুরু হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কারো দাবি- আওয়ামী লীগের আগে কোনদিনই অন্য দল করেননি, এমন অনেকের নাম যুক্ত হয়েছে অনুপ্রবেশকারীর তালিকায়। আবার একাধিক দল পরিবর্তন করে সহযোগী সংগঠন কিংবা আওয়ামী লীগে এসেছেন-এমন একাধিক লোক দলে থাকলেও অনুপ্রবেশকারীর তালিকায় নাম নেই তাদের।
.

এ বিষয়ে যুবলীগ নেতা মাহবুবুর রহমান মিছলু তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেন, ‘ আমি মাহবুবুল ইসলাম চৌধুরী মিসলু ২০০১-২০০৫ সাল পর্যন্ত “মীর সাখাওয়াত হোসেন তরু” ভাইয়ের স্বাক্ষরে শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদ কচুয়াবহর আঞ্চলিক শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করেছি। ফেঞ্চুগঞ্জ বিএম কলেজ ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলাম,২০১০-২০১৩ সাল পর্যন্ত ফেঞ্চুগঞ্জ ডিগ্রী কলেজ ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলাম,আমি ২০১৩-২০১৭ সাল পর্যন্ত ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের ১ম যুগ্ন আহবায়ক ছিলাম এবং ২০১৮ থেকে অদ্যাবধি ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের যুগ্ন আহবায়কের দায়িত্ব সফলতা এবং স্বচ্ছতার সাথে পালন করছি। কিন্তু পরিতাপের বিষয় কোন জরিপ বা মানদ-ের ভিত্তিতে আমার নাম অনুপ্রবেশকারীর তালিকায় যুক্ত হলো-আমার কাছে বোধোগম্য নয়’।
.
তালিকায় তার নাম দেখে বিস্ময় প্রকাশ করে পাঁচ নম্বর ফেঞ্চুগঞ্জ ইউনিয়ন কৃষক লীগের সভাপতি আতিকুর রহমান এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমি খুবই সাধারন প্রকৃতির মানুষ। দীর্ঘদিন থেকে মাটি ও মানুষের সংগঠন আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িত আছি। কিন্তু তার পরেও কিভাবে আমার নাম অনুপ্রবেশকারীর তালিকায় গেলো তা ভেবে পাচ্ছি না।’ এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন
আহমদ বলেন, একজন লোক রাজনৈতিক মত পরিবর্তন করার অধিকার সংরক্ষণ করেন। দল পরিবর্তন করার মানেই তিনি অনুপ্রবেশকারী নন। দলে যোগ দিয়ে আদর্শ বিরোধী কিংবা সুযোগের সদ্ববহার করে সীমাহিন অনিয়মের সাথে জড়িত, তাদেরকেই

অনুপ্রবেশকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তাছাড়া, মামলাবাজ কিংবা মামলার আসামী ও মামলা থেকে রক্ষা পেতে যারা সূবিধা গ্রহণের জন্য দলে ভিড় করেছেন- তারাও অনুপ্রবেশকারী। তালিকায় ৫৫ জনের নামের বিষয়ে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমার বলার কিছুই নেই। প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভানেত্রী ব্যক্তিগত ভাবে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে তালিকার কাজ সম্পন্ন করেছেন। জেলা সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, শুধু সিলেট নয়-সারাদেশেই অনুপ্রবেশকারীদের তালিকা সংগ্রহ করে প্রকাশ করা হয়েছে। তিনি বলেন, দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলে শুদ্ধি অভিযানের অংশ হিসেবে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে এই তালিকা সংগ্রহ করেছেন। পরবর্তীতে প্রাপ্ত তালিকা যাছাই বাছাই শেষে অনুপবেশকারীদের নাম প্রকাশ করা হয়েছে। সিলেটে প্রকাশিত তালিকার বাহিরে আরো অনুপ্রবেশকারী রয়েছেন, মাঠ পর্যায়ের একাধিক নেতাদের এমন বক্তব্যের বিষয়ে তিনি বলেন, সেটি দায়িত্বপ্রাপ্ত গোয়েন্দা সংস্থার এখতিয়ার।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বশেষ ২৪ খবর