ঢাকা ১৮ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৪ঠা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১:৩৩ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২, ২০১৯
তাহিরপুর প্রতিনিধি : তাহিরপুরের যাদুকাটা নদী। স্বচ্ছ জল আর প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যে মুগ্ধ সবাই। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকরা স্বচ্ছ জলে গা ভাসাতে ছুটে যান যাদুকাটায়। আনন্দ-উল্লাসে যাদুকাটার স্বচ্ছ জলের একরূপ হলে অন্য রূপ হল সংগ্রামী মানুষের জন্য যাদুকাটার কয়লা-পাথর। পানির সৌন্দর্য্যের উপরিভাগে আনন্দ হলে পানির নিচে মানুষ জীবিকা খুঁজে। তাহিরপুরের বিভিন্ন এলাকার প্রায় ২০ হাজার মানুষ যাদুকাটার স্বচ্ছ পানির নিচে জীবিকা খুঁজতে বের হয়। যাদুকাটাও তাদেরকে খালি হাতে ফেরায় না। সেজন্যই তাহিরপুরের প্রায় ২০ হাজার হতদরিদ্র পরিবারে এসেছে স্বাচ্ছন্দ্য, এসেছে স্বাভাবিক জীবন-যাপনের নিশ্চয়তা।
.
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নদীর বিভিন্ন জায়গায় যে যার মতো করে পাথর ও কয়লা খুঁজে বেড়াচ্ছেন। এরমধ্যে বেশির ভাগই শিশু ও নারী। আবার বেশিরভাগ শিশুর বয়সই ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে। অর্থাৎ যে বয়সে শিশু স্কুলে যাবার কথা সেই বয়সে যাদুকাটায় পাথর-কয়লা খোজার কাজ শুরু করে। তবে কাজ করা নিয়ে এসব শিশুদের কোন আক্ষেপ নেই। কারণ পরিবারের সবার জন্য খাবার জোগাড় করতে পারাতেই তাদের আনন্দ। সেই আনন্দেই প্রতিদিন তারা নদীতে নামে। সাইমন নামে এক শিশু বলে, আমরা খুব গরিব মানুষ। ঠিক মতো খেতে পারি না। সেজন্য মায়ের সাথে এসে নদীতে পাথর খুঁজি। এতে দিনে আমি ৪ থেকে সাড়ে ৪শ’ টাকার পাথর-কয়লা বিক্রি করতে পারি।
অথচ হতদরিদ্র মা-বাবাকে কাজে সহায়তা করে সংসারের আর্থিক সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনার আপ্রাণ প্রয়াস চালিয়ে যাওয়া এসব শিশুদের মুখাবয়বে রয়েছে পরিশ্রম আর দারিদ্র্যতার ছাপ।
.
আমেনা বেগম নামে এক পাথর শ্রমিক বলেন, পানি কমার সাথে সাথে আমরা পাথর খোঁজার কাজ শুরু করি। আমরা বছরের ৬ মাসের মতো নদীতে পাথর-কয়লা খোঁজে বিক্রি করে থাকি। এতে ৬ মাসে নারী শ্রমিক গড়ে ৪০-৫০ হাজার টাকা রোজগার করে থাকেন।
পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাসমির রেজা বলেন, যাদুকাটায় বালি পাথর ও গ্রোতের পানিতে নেমে আসা কয়লা উত্তোলনের মাধ্যমে এ অঞ্চলের অনেক বেকার শ্রমিকদের কর্মসংস্থান তৈরি হয়। এ বালি-পাথর-কয়লা উত্তোলনে যেন পরিবেশে ভারসাম্য বিনষ্ট না হয় সেদিকটা খেয়াল রাখতে হবে। আর শ্রমিকরাও যেন কোন অদৃশ্য বাঁধার সম্মুখীন হয়ে কর্মসংস্থান হারিয়ে পথে না বসে এ জন্য প্রশাসন যেন সঠিক নজরদারির মাধ্যমে পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
.
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল বলেন, হাজার হাজার শ্রমিকদের অন্ন বস্ত্র বাসস্থান যোগানের অন্যতম উৎস এ যাদুকাটা নদী। যাদুকাটা নদীতে বালু পাথর ও কয়লা উত্তোলনের কাজ বন্ধ হওয়া মানে শ্রমিকদের আহাজারিতে এ অঞ্চলের আকাশ ভারী হয়ে উঠা। যাদুকাটা নদী ও তার আশপাশের পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রেখে কাজটি চালু রাখতে হবে। কোন চাঁদাবাজ, সিন্ডিকেট দ্বারা শ্রমিকদের এ প্রাকৃতিক কর্মসংস্থান যেন বন্ধ না হয়,এজন্য আমরা প্রশাসনের সহযোগিতায় কঠোরভাবে নজরদারি করব। কারণ যাদুকাটা নদীতে কোন অবস্থাতেই চাঁদাবাজি সহ্য করা হবে না।
সম্পাদক : জে.এ কাজল খান
স্বত্ত্ব: দৈনিক বিজয়ের কণ্ঠ (প্রিন্ট ভার্সন)
০১৭১৮৩২৩২৩৯
Design and developed by syltech