গ্রামকে শহরে রূপান্তর করতে শক্তিশালী স্থানীয় সরকার চাই : ডা. রহিম

প্রকাশিত: ১১:১৭ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ১০, ২০১৯

গ্রামকে শহরে রূপান্তর করতে শক্তিশালী স্থানীয় সরকার চাই : ডা. রহিম

দোয়ারাবাজার প্রতিনিধি : দোয়ারাবাজার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ডা. মো. আব্দুল রহিম বলেছেন, গ্রামকে শহরে রূপান্তর করতে শক্তিশালী স্থানীয় সরকারব্যবস্থা চাই। শক্তিশালী স্থানীয় সরকারব্যবস্থা ছাড়া গ্রামকে শহর বানানো যাবে না। তিনি বলেন, গ্রামে যদি শহরের সব সুবিধা নিশ্চিত করতে হয় তাহলে শক্তিশালী স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাপনার কোনো বিকল্প নেই। বর্তমানে যে উপজেলা পরিষদের গঠন কাঠামো রয়েছে তাতে কোনো পরিকল্পনা উপজেলা চেয়ারম্যানের পক্ষে বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। যদি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হয়, তাহলে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার বিনীত অনুরোধ থাকবে, ১৯৮৫ সালের যে উপজেলা পরিষদের ম্যানুয়েল রয়েছে তা পুনর্বহাল করতে হবে।
.
তিনি বলেন, আমি ১৯৮৫ সালে প্রথম উপজেলা চেয়ারম্যন হিসেবে ছিলাম, তখন চেয়ারম্যানদের অনেক ক্ষমতা ছিল। সব উপজেলা অফিসারের এসিআর লেখার ক্ষমতা চেয়ারম্যানদের ছিল। প্রতিটি বরাদ্দ আসত উপজেলা চেয়ারম্যানদের নামে। কিন্তু বর্তমানে সব বরাদ্দ আসে ইউএনও বরাবর। বর্তমানে একটি আদেশ এসেছে যে, সব কাগজপত্র ও ফাইল ইউএনওর মাধ্যমে তার দস্তখতসহ পেশ করতে হবে। উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এটি প্রতিবন্ধকতা হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, লোকাল গভর্নমেন্ট সাপোর্ট প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে চেয়ারম্যানের কোনো ভ‚মিকা নেই, সব ক্ষমতা ইউএনওর ওপর অর্পিত। কর্মসৃজন নামক একটি প্রকল্প রয়েছে, সেটাও ইউনিয়ন পরিষদ বাস্তবায়ন করে। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ডা. মো. আব্দুর রহিম বলেন, উপজেলা পরিষদে বর্তমানে স্থানীয় সংসদ সদস্যদের উপদেষ্টা হিসেবে রাখা হয়েছে। স্থানীয় এমপিরা একটি অদৃশ্য শক্তি হিসেবে কাজ করেন।
.
নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর ভোটারদের কীভাবে মূল্যায়ন করেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এটাই চিন্তা করি যে, মানুষের এই ঋণ আমি কীভাবে শোধ করব, মানুষের এই ঋণ শোধ করার ক্ষমতা আমার নেই। মানুষ আমাকে অনেক আশা নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত করেছে। দুর্নীতি কীভাবে প্রতিরোধ করবেন তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশকে দুর্নীতি গ্রাস করে ফেলেছে, একজন প্রধানমন্ত্রী একা কীভাবে তা প্রতিরোধ করবেন। একটি পরিবারের মধ্যে সব সদস্য দুর্নীতিগ্রস্ত হলে পরিবারকর্তা কীভাবে একা প্রতিরোধ করবেন। তবুও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতি প্রতিরোধে অবিরাম কাজ করে যাচ্ছেন। আমিও আমার উপজেলায় দুর্নীতির বিষয়ে জিরো টলারেন্সে আছি।
.
রাজনীতি ও প্রশাসন কীভাবে দুটি সমন্বয় করেন জানতে চাইলে তিনি জানান, আমি কোনো গ্রুপিংয়ে বিশ্বাসী নই। আমি বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ করি। আমি কোনো ব্যক্তিকেন্দ্রিক রাজনীতি করি না। আমি নিজে একজন চিকিৎসক। বর্তমানে আমি প্রশাসনের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে চিকিৎসাসেবা দিয়ে থাকি। এতে আমার কোনো সমস্যা হয় না।
মুক্তিযুদ্ধে ভুমিকা কী ছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ১৯৭১ সালের ৫ এপ্রিল ভারত চলে যাই। আমি প্রথমে চেলা এবং পরে ডিংরা ইয়ুথ ক্যাম্পে, চেলা সাব-সেক্টর-৫-এ মেডিকেল অফিসার ছিলাম। আমার কমান্ডিং অফিসার ছিলেন ফ্লাইট লে. নীরেন্দ্র চন্দ্র প্রসাদ। এখানে আমি মুক্তিযোদ্ধাদের ও শরণার্থী ক্যাম্পের ডাক্তার ছিলাম। ৪৬ বছর পর ২০১৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার স্বাধীনতা যুদ্ধে ডাক্তার ও নার্সদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দিলে আমি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পাই।
.
ডা. মো. আব্দুর রহিম ১৯৬২ সালে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় সিলেট এইডেট হাইস্কুল, ১৯৬৫ সালে সিলেট এমসি কলেজ থেকে এইচএসসি ও ১৯৭২ সালে প্রথম ব্যাচে সিলেট মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তিনি ১৯৬৮-১৯৭০ সাল পর্যন্ত সিলেট মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। ১৯৭৯ সালে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে দোয়ারাবাজার-ছাতক আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করেন। পরবর্তী সময়ে ১৯৮৫ সালে প্রথম উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত দোয়ারাবাজার উপজেলা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বশেষ ২৪ খবর