ঢাকা ১৮ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৪ঠা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১২:৫৭ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১০, ২০১৯
বিশেষ প্রতিনিধি :: সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়ন জামায়াতের দায়িত্বশীল নেতা সরদারপুর গ্রামের মৃত আফতর আলীর ছেলে মো. আব্দুল লতিফ। এলাকার মানুষ তাকে জামায়াত-শিবিরের শীর্ষ নেতা হিসেবে চিনেন। জামায়াতের এই নেতা দীর্ঘদিন ধরে তার গ্রামের প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা নিঃসন্তান নাছির উদ্দিনের সন্তান সেজে ভাতা তোলছেন। জামায়াত নেতার এই প্রতারণার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সুনামগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক সদস্যসচিব মুক্তিযোদ্ধা মালেক হুসেন পীর সোমবার (৯ ডিসেম্বর) সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রশাসক বরাবরে লিখিত আবেদন করেছেন। আবেদনের অনুলিপি তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সমাজসেবা কার্যালয় এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে জমা দিয়েছেন। এদিকে জামায়াত নেতা মুক্তিযোদ্ধার ভুয়া সন্তান পরিচয়ে ভাতা উত্তোলন করে আত্মসাতের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মুক্তিযোদ্ধারা।
.
লিখিত আবেদন ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সদর উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের সরদারপুর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দিন ২০০৮ সালে নিঃসন্তান অবস্থায় মারা যান। মৃত্যুর কিছুদিন পরেই ২০০৯ সালে মোহনপুর ইউনিয়ন পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান আনজব আলীর কাছ থেকে সরদারপুর গ্রামের মৃত আফতর আলীর ছেলে ইউনিয়ন জামায়াতের কোষাধ্যক্ষ আব্দুল লতিফ মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দিনের ছেলে সেজে জন্মনিবন্ধন নেন। মো. আব্দুল লতিফ ২০১৮ সালের ২০ মার্চ নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দিনের ছেলে পরিচয় দিয়ে একটি এফিডেভিট করেন। তার এই এফিডেভিটে সত্যায়ন করেন অ্যাডভোকেট হেলাল উদ্দিন। ২০১৭ সালের ২ মার্চ মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দিনের ছেলে মর্মে উত্তরাধিকারী সনদপত্র দেন মোহনপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নূরুল হক। এরপর ২০১৭ সনের জুলাই মাস থেকে মো. আব্দুল লতিফ মুক্তিযোদ্ধার ছেলের ভুয়া পরিচয় দিয়ে ভাতা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করছে।
.
এদিকে ভাতা উত্তোলনের পরেই আব্দুল লতিফ নিজের পুরোনো ভোটার আইডি কার্ড বাতিল করে মুক্তিযোদ্ধা নাছির উদ্দিনের ছেলে পরিচয়ে সেটা সংশোধন করার চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে। যার ফলে নির্বাচন অফিসে বর্তমানে তার কোন ভোটার আইডি কার্ড নেই। আবেদনকারী মুক্তিযোদ্ধা মালেক হুসেন পীর নির্বাচন অফিসে যোগাযোগ করে আব্দুল লতিফের নামের ভোটার তালিকাও খুঁজে পাননি।
.
মোহনপুর ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা মো. সাখাদ আলী বলেন, আব্দুল লতিফের নেতৃত্বে বিএনপি-জামায়াত সময়ে জয়নগর বাজারে আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে নিয়মিত মিছিল-সভা হতো। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে একবার লাঠি মিছিলও করেছে সে। তিনি বলেন, লতিফ মোহনপুর ইউনিয়ন জামায়াতের কোষাধ্যক্ষ। বিএনপি-জামায়াত সরকারে থাকাকালে আমরা তার ভয়ে থাকতাম। আমিসহ দুই মুক্তিযোদ্ধার বন্দোবস্তকৃত জায়গা দখল করার চেষ্টাও করেছে সে। মুক্তিযোদ্ধা নাছির উদ্দিন মারা যাবার পরই সে প্রতারণার মাধ্যমে তার পিতার নামে নাছির উদ্দিনকে পিতা দেখিয়ে জাল কাগজপত্র তৈরি করেছে।
.
মুক্তিযোদ্ধা মালেক হুসেন পীর বলেন, আব্দুল লতিফ নামের জনৈক ব্যক্তি প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দিনের ভুয়া সন্তানের পরিচয় দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ভাতা উত্তোলন করছে। অথচ নাসির উদ্দিন ছিলেন নিঃসন্তান। আব্দুল লতিফের স্কুল, জমি ও সম্পদের কাগজপত্রে তার পিতার নাম আফতর আলী লেখা রয়েছে। তার বিরুদ্ধে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে আমি লিখিত আবেদন করেছি।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্র্তা (ভারপ্রাপ্ত) সমীর বিশ্বাস বলেন, এ সংক্রান্ত একটি আবেদন পেয়েছি। আমি সমাজসেবা অফিসকে তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছি।
সম্পাদক : জে.এ কাজল খান
স্বত্ত্ব: দৈনিক বিজয়ের কণ্ঠ (প্রিন্ট ভার্সন)
০১৭১৮৩২৩২৩৯
Design and developed by syltech