ঢাকা ২০শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১০:৪৯ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২০
মিঠু মিয়া, ধর্মপাশা থেকে : সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলায় গুরমা হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ মেরামত কাজে পাউবোর আধিনে গঠিত পিআইসি’র সভাপতির বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ৯১ নম্বর প্রকল্পের সভাপতি রুপন সরকার এ কাজে পাউবোর বেঁধে দেয়া নীতিমালার কোনো রকম তোয়াক্ক্া না করেই তিনি নিজের ইচ্ছে মতো এক্সভেটর মেশিন দিয়ে বাঁধের ঘুরা থেকে মাটি উত্তোলন করে ঝুকিপূর্ণভাবে বাঁধ মেরামতের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে করে চলতি বোরো মৌসুমে আগাম বন্যায় গুরমার হাওরের ওই বাঁধ ভেঙে বছরের এক মাত্র বোরো ফসল তলিয়ে যাওয়ার আশংকায় দিন কাটাচ্ছেন এলাকার কৃষকেরা। কৃষকদের অভিযোগ, গত বছর হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধগুলো টেকসইভাবে নির্মাণ ও মেরামত করার ফলে গত বর্ষার পানির দোরে ওইসব বাঁধের তেমন ক্ষতি না হওয়া সত্ত্বেও এবার ওই বাঁধ মেরামতে অন্যান্য বছরের চেয়েও অধীক বরাদ্দ দেয়ার পরেও পিআইসি’র সভাপতি রুপন সরকারসহ আরও অনেক প্রকল্পের সভাপতিরাই বাঁধ মেরামতের কাজে এভাবেই বাঁধের ঘুরা কেটে মাটি তুলে বাঁধগুলোকে আরো ঝুকিপৃর্ণ করে দিচ্ছেন। নাম প্রকাশ্য না করার শর্তে গুরমার হাওর পাড়ের ঘাসী গ্রামের ষাট ঊর্ধ এক কৃষক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, টেকসই বাঁধ থাকা সত্যেও এবার পাউবোর কর্মকর্তাদের জোকসাজসে প্রায় লক্ষ টাকার বিনিময়ে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পে কমিটি গঠন করার কারনেই বাঁধ মেরামত কাজে এ ধরনের অনিময়ম ও দুর্নীতির আশ্রয় নিচ্ছেন এসব পিআইসি’রা। তবে এসব অনিয়মের বিষয় গুলো দেখার যেন কেউ নেই বলেও জানান ওই কৃষক।
পাউবো’র সূত্রে জানা গেছে, এবার চলতি বোরো মৌসুমে সুনামগঞ্জ পানি উন্নায়ন বোর্ডের অধীনে থাকা ধর্মপাশা উপজেলার আটি হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ মেরামতে ¯হানীয় কৃষকদের সমন্বয়ে ১৫৯টি প্রকল্প কমিটি গঠন করা হয়। আর ওইসব প্রকল্পের বিপরীতর পাউবো থেকে ৩০ কোটি ৯৮ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ওইসব প্রকল্পের কাজ গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর থেকে শুরু করে তা চলতি ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেষ করার জন্য সময় সীমা বেধে দেয়া হয়। কিন্তু সময় সীমার আর মাত্র ১৮ দিন বাকি থাকার পরও অনেক প্রকল্প কমিটিই বাঁধের কাজ শুরুই করেনি বলেও অভিযোগ রয়েছে। এ দিকে প্রকল্পে কমিটিকে পাউবোর বেঁধে দেয়া নিতীমালা উনুযায়ী বাঁধের ১০ ০ ফুটেরও অধীক দূর থেকে মাটি কেটে এনে বাঁধে ফেলার কথা থাকলেও গুরমার হাওরের ৯১ নম্বর প্রকল্প কমিটির সভাপতি রুপন সরকারসহ একাধীক প্রকল্পের সভাপতিরা ওই নিময় না মেনে তাঁরা বাঁধের ঘুরা থেকে মাটি উওোলন করে বাঁধ মেরামতের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে ওইসব প্রকল্পের তদারকির দায়িত্বে থাকা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সুনামগঞ্জ পাউবোর এক উপ সহকারি প্রকৌশলী জানান, সেন্ড্রিকেটের মাধ্যমে একই পরিবারের সদস্যদেরকে বিভিন্ন প্রকল্পের সভাপতি করা হয়েছে। আর এসব অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প কমিটি গঠন করে এবার অন্যান্য বছরের চেয়েও অধীক বরাদ্দ এনে এখানে কাজ করা হলেও এসব অনিয়মের বিষয়ে আমার কিছু করার নেই।
অভিযুক্ত প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) সভাপতি রুপন সরকারের সাথে কথা বলার জন্য তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোনটি ধরেননি।
উপজেলা কাবিটা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব ও সুনামগঞ্জ পাউবোর উপ সহকারি প্রকৌশলী মাহদুল ইসলাম বলেন, বাঁধের ঘুরা থেকে মাটি কাটা হচ্ছে এমন সংবাদটি জানার পরেই ৯১ নম্বর প্রকল্প সভাপতিকে মোবাইল ফোনে সতর্ক করেছি এবং আগামীকাল মঙ্গলবার ওই প্রকল্প এলাকায় গিয়ে সভাপতির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা সুখাইড় রাজাপুর দক্ষিন ইউপি চেয়ারম্যান আমানুর রাজা চৌধুরী বলেন, ফসল রক্ষা বাঁধের কমিটিতে কাদেরকে রাখা হয়েছে এ বিষয়ে আমার কোনো মতামত নেওয়া হয়নি। তবে এবার হাওরের অপ্রয়োজনীয় বাঁধ মেরামতের নামে সরকারের কোটি কোটি টাকা লুটপাটের মহোৎসব শুরু হচ্ছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
উপজেলা ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা কাবিটা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি মো. আবু তালেব বলেন, হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের ঘুরা থেকে মাটি উওোলন সম্পূর্ণভাবে বেআইনি। এমনটি হয়ে থাকলে খুঁজ নিয়ে ওই প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজের পিইসির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সম্পাদক : জে.এ কাজল খান
স্বত্ত্ব: দৈনিক বিজয়ের কণ্ঠ (প্রিন্ট ভার্সন)
০১৭১৮৩২৩২৩৯
Design and developed by syltech