জগন্নাথপুরে ফসলরক্ষা প্রকল্প : এখনও বাঁধের কাজে দায়সারা ভাব

প্রকাশিত: ১:১৮ অপরাহ্ণ, মার্চ ৩, ২০২০

জগন্নাথপুরে ফসলরক্ষা প্রকল্প : এখনও বাঁধের কাজে দায়সারা ভাব

জগন্নাথপুর প্রতিনিধি : হাওরের বোরো ফসল রক্ষা বেড়িবাঁধের নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে এখনও হাওরের ফসলরক্ষা বেড়িবাঁধের কাজ শেষ হয়নি। কোন কোন প্রকল্পে দায়সারাভাবে কাজ শেষ করার চেষ্টা চলছে।
গতকাল সোমবার সরেজমিনে জগন্নাথপুরের মইয়ার হাওরের রানীগঞ্জ ইউনিয়ন আওতাধীন নলুয়া হাওর এর আওতাভুক্ত কয়েকটি প্রকল্পে এমন চিত্র দেখা গেছে।

পরিদর্শনকালে দেখা যায়, ৩৩ নম্বর প্রকল্পের নারিকেলতলা এলাকার কাছুরখাই নামকস্থানে পুরোনো মাটির ওপর দায়রাসাভাবে সামান্য মাটি ফেলে রাখা হয়েছে। স্লোপ এবং কম্পেকশন নেই। ওই প্রকল্পের কিছু স্থানে বাঁধের পাশ থেকে মাটি তুলে ৩/৪ জন শ্রমিক প্রকল্পের একাংশে নামমাত্র মাটি ফেলছেন। এই প্রকল্পে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৫ লাখ ৯৪ হাজার ১শ’ ৮৫ টাকা। নীতিমালা অনুযায়ী প্রকল্পের কাজ দেখা যায়নি। প্রকল্পের কোন সাইনর্বোডও নেই। তবে, প্রকল্পের কাজে নিয়োজিত লোকজন জানিয়েছেন প্রকল্পটি স্থানীয় রানীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য আবুল কালামের। তারা আবুল কালামের শ্রমিক। অপরদিকে, পাশের ৩২ নম্বর প্রকল্পের সভাপতি ও ইউপি সদস্য আবুল কালাম। এ প্রকল্পের স্লোপে বালি মাটি থাকায় একাধিক স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, বৃষ্টি এলেই বালি মাটি ধসে পড়বে। এছাড়াও ৩৪ নম্বর প্রকল্পেও দায়সারাভাবে কাজ হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

স্থানীয় কৃষক আব্দুল জলিল বলেন, কৃষিনির্ভর আমরা। ফসল বুনে সারাবছরের সংসারের যোগান যোগাতে হয়। এখনও পর্যন্ত বাঁধের কাজ শেষ না হওয়াতে আমরা শঙ্কিত হাওরের ফসল নিয়ে। ৩২ নম্বর প্রকল্পের সভাপতি রানীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য আবুল কালাম বলেন, বাঁধের যেসব স্থানে ত্রুটি রয়েছে সেসব স্থানে কাজ করা হচ্ছে।
৩৩ নম্বর প্রকল্পের বিষয়ে তিনি বলেন, এই প্রকল্পটি অন্য আরেকজনের ছিল। প্রকল্পের কাজ শুরু না করায় স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশনায় আমি কাজ শুরু করেছি। নীতিমালা অনুয়ায়ী প্রকল্প কাজ শেষ করা হবে। এদিকে, জগন্নাথপুরের সর্ববৃহৎ নলুয়া হাওরের পোল্ডার-১ আওতাধীন ২, ১০, ১১, ১২, ১৩, ১৪, ১৫ ১৬, ১৭, ১৮ ও ১৯ নম্বরের কাজ এখনও শেষ হয়নি। তবে, অধিকাংশ প্রকল্পের সভাপতি দ্রুত কাজ করতে চেষ্টা চালিয়েছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ড জগন্নাথপুর উপজেলা কার্যালয় সূত্র জানায়, এবার ৪৬টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠনের মাধ্যমে ৪২৩১০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের কাজ হয়। এই কাজের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে মোট ৬ কোটি টাকা।
হাওর বাঁচাও আন্দোলনের জগন্নাথপুর উপজেলা কমিটির আহবায়ক সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম জানান, ‘নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও জগন্নাথপুরেও অর্ধেকও কাজ শেষ হয়নি। এতে আমরা হতাশ। নীতিমালা অনুয়ায়ী দ্রুত কাজ সম্পন্ন না করা হলেও কৃষকদের নিয়ে অধিকার আদায়ে মাঠে নামব আমরা।’

এ ব্যাপারে জগন্নাথপুর উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী হাসান গাজী জানান, এখন পর্যন্ত বেড়িবাঁধ প্রকল্পের ৮০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। যেসব প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি ওই সব প্রকল্পের কাজের দায়িত্বরত লোকজনকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য।
জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহফুজুল আলম মাসুম বলেন, দ্রুত ফসলরক্ষা বেড়িবাঁধ করা না হলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বশেষ ২৪ খবর