ঢাকা ১৫ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১লা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১২:২৪ পূর্বাহ্ণ, জুন ১৭, ২০২১
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকৃতির ষোড়শী কন্যা জাফলং। সেই জাফলংকে সাবাড় করতে একাট্টা সর্বদলীয় পাথর ও বালুখেকোরা। হাজার খানেক দানবযন্ত্র নামের বোমা মেশিন বসিয়ে খাবলে খাচ্ছে অপরূপ সৌন্দর্যের নৈস্বর্গিক এই জাফলং ভূমি। ধ্বংস হচ্ছে পরিবেশ ও প্রতিবেশ। উচ্চ আদালতের নির্দেশনার পরও থেমে নেই সিলেটের জাফলংয়ে বালু ও পাথরখেকোদের তাণ্ডব। হাতে গোনা কয়েকজন প্রভাবশালীর ছত্রছায়ায় ধ্বংস হয়ে গেছে দৃষ্টিনন্দন স্থানগুলোর ৯৫ ভাগ। এখন কেবল ধ্বংসযজ্ঞের শেষ পেরেকটুকু বাকি।
সচেতন এলাকাবাসীর অভিযোগ, এই পরিবেশ-প্রকৃতি ধ্বংসে জড়িত স্থানীয় এক শ্রেণির পাথর ও বালুখেকো। এই পাথর ও বালু দস্যুদের নেপথ্যে স্থানীয় উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসন। ফলে অপরূপ জাফলং নৈস্বর্গিক কথাটি এখন অতীত। অনিয়মতান্ত্রিক ও অবৈধপন্থায় পাথর ও বালু উত্তোলনের ফলে প্রকৃতির নিজস্বতা হারিয়েছে জাফলং। পাথর ও বালুখেকোদের লালসায় পিয়াইন নদী হারিয়েছে গতিপথ। খোয়া গেছে নদীর তীর, রাস্তাঘাট, খেলার মাঠ। বাড়িঘর বিলীন করেও থেমে নেই ধ্বংসযজ্ঞ। এবার পাথর ও বালুখেকোদের রাক্ষসী থাবায় হারাতে বসেছে জাফলং এলাকার লন্ডনীবাজার থেকে জাফলং ব্রীজ এলাকা।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এমন ধ্বংসলীলা চালাতে এখন রাতের আঁধারে নামানো হয়েছে হাজার খানেক বোমা মেশিন। এসব মেশিন যেনো খাবলে খাচ্ছে জাফলংয়ের অবশিষ্ট এলাকা। সম্প্রতি নদীতে পানি হওয়ার সুবাদে রাতের আধারে বালু ও পাথর উত্তোলন করে দৈনিক শত শত নৌকা করে বালু ও পাথর পাচার করছে তারা।
স্থানীয়রা বলেন, জোর যার, মুল্লুক তার। ওখানে আওয়ামী লীগ-বিএনপি ও জামায়াত বলতে কিছু নেই। তারা সর্বদলীয় পাথর ও বালুখেকো মহল। তারাই মিলেমিশে শাসন ও ধর্ষণ করছে প্রকৃতি কন্যা জাফলং। স্থানীয় প্রশাসন সামলানোর দায়িত্ব তাদেরই। উর্ধতন নেতা-হোতা ও কর্তাদের দৈনিক ও সাপ্তাহিক হারে টাকা দিয়ে চালান বোমা মেশিন। এই টাকার ভাগ কোথায় না যায়? এমন উল্টো প্রশ্ন স্থানীয় বাসিন্দাদের।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, দিনের বেলা বালু ও পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকে, রাতে পুরোদমে শুরু হয় পাথর ও বালু উত্তোলন। এ সময় বোমা মেশিনের শব্দে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে এলাকা। ঘরবাড়ি থরথর করে কাঁপতে থাকলেও কাঁপে না প্রশাসন। দানবের অবিরত শব্দে বিঘ্নিত শিশু কিশোরদের পড়ালেখার পরিবেশ। স্বাস্থ্য ঝুঁকি তো আছেই। বোমা মেশিন থেকে শুরু করে সব কিছুর নেতৃত্ব ও শেল্টারদাতা স্থানীয় স্থানীয় লেঙ্গুড়া গ্রামের মুজিবুর রহমান মুজিব ও দৌবাড়ি এলাকার সুভাস দাস। বোমা মেশিন ও নৌকা থেকে টাকা তুলে বন্টন করার দায়িত্ব সুভাস দাসের ওপরই ন্যস্ত।
শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বড় বড় লিডার ও প্রশাসনকে সামলে নেন লাইনম্যান সুভাস, মুজিব ও জাফলংয়ের শমসুল আলম শমসু। দিন শেষে নেতাদের কাছেও সুভাস দাসই হিসাব দাখিল করেন। টাকার ভাগ-বাটোয়ারা পৌছান বিভিন্ন স্থানে। তাইতো অবৈধ পন্থায় উত্তোলিত বালু-পাথর বহনকারী নৌকা-বলগেট অবাঁধে চলাচল করলেও এগুলো আটকায় না পুলিশ ও প্রশাসন। এছাড়া স্থানীয়দের মধ্যে পাথরখেকো চক্রের সদস্যরা অর্ধশতাধিক বোমা মেশিন বসিয়ে পাথর ও বালু উত্তোলন অব্যাহত রেখেছেন। তাদের মধ্যে মুজিব ও সুভাস ও শমসুল আলম শমসু অন্যতম।
এ ব্যাপারে সিলেটের গোয়াইনঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল আহাদ তার পুলিশের সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করে সাংবাদিকদের বলেন, ‘উপজেলা প্রশাসন উদ্যোগ নিলে আমরা অভিযান চালাই। বোমা বেশিন ধ্বংসের ব্যাপারে কোনো অনিহা বা কর্তব্যে অবহেলা আমাদের নেই। পুলিশ অভিযান চালালে বোমা মেশিন বন্ধ হয়ে যায়। চলে এলে আবারও শুরু হয়। তবে পুলিশকে ম্যানেজ করার বিষয়টি আদৌ সঠিক নয় বলে জানান তিনি।
সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিলুর রহমান মুক্ত সাংবাদিকদের জানান, ‘বোমা মেশিন বন্ধে রাতেও অভিযান করেছি। মূলত; গ্রামের লোকজনও জড়িত। যে কারণে স্থানীয়ভাবে সহযোগিতা পাই না। তাই প্রশাসন আক্ষরিক অর্থে ‘হেল্পলেস’। আমাদের লোকজন, যাদের অভিযানে নিয়ে যাই, তারাই অভিযান চালাতে নিরুৎসাহিত করে। ভিলেজ সংরক্ষণ কমিটি সাহায্য করার কথা থাকলেও পাই না। বোমা মেশিন ভাঙার লেবার পাই না। পেলোডার ও বুলডোজারের মালিক স্থানীয়রা হওয়াতে তারা সাহায্য করে না। তাছাড়া এলাকার প্রতিটি মানুষের বাড়িতে বোমা বেশিনের কিংবা পাথর উত্তোলনের যন্ত্রাংশ রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘অভিযান হওয়াতে উল্টো পত্রিকায় নিউজ করানো হয়, পাথর উত্তোলন না করার ফলে শ্রমিকরা মানবেতর জীবন-যাপন করছে। ওই কপি দেখিয়ে পাথর উত্তোলনের আদেশ এনে বোমা মেশিন চালানো হয়’।
এ বিষয়ে বক্তব্য নিতে মুজিব ও সুভাসের সাথে মুঠোফোনে বার বার যোগাযোগ করা হলে তারা বিজয়ের কণ্ঠ’র মোবাইল ফোন রিসিভ করেননি।
সম্পাদক : জে.এ কাজল খান
স্বত্ত্ব: দৈনিক বিজয়ের কণ্ঠ (প্রিন্ট ভার্সন)
০১৭১৮৩২৩২৩৯
Design and developed by syltech