সিলেটে ওলামাদের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ : ৮ দফা দাবি

প্রকাশিত: ৫:০৯ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৩, ২০১৮

সিলেটে ওলামাদের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ : ৮ দফা দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদন
গত ১ ডিসেম্বর টঙ্গী ময়দানে নিরীহ মাদরাসা ছাত্র ও তাবলিগ জামাতের সাথীদের উপর বর্বরোচিত হামলা ও হত্যার প্রতিবাদে সিলেটে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ কর্মসূচি থেকে সরকার বরাবরে ৮ দফা দাবী পেশ করা হয়।

সোমবার বেলা আড়াইটায় সিলেটের আলেম ওলামা, মাদরাসার ছাত্র শিক ও তাবলীগের সাথীদের উদ্যোগে এ বিােভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বাদ যোহর বিভিন্ন মাদরাসা ছাত্র শিক, মসজিদের মুসল্লি ও তাবলীগের সাথীরা খ- খ- মিছিল নিয়ে কোর্ট পয়েন্টে জড়ো হতে থাকেন। এক পর্যায়ে কোর্ট পয়েন্টে হাজারো মানুষের সমাগম ঘটে।

দরগাহ মাদরাসার শায়খুল হাদীস মুফতি মাওলানা মহিবুল হক গাছবাড়ী, কাজির বাজার মাদরাসার মুহাদ্দিস মাওলানা শাহ মমশাদ আহমদ ও মাওলানা আব্দুল কাদির খানের যৌথ পরিচালনায় সমাবেশে আলেম ওলামা ও তাবলীগের সাথীরা বলেন, শুক্রবার ছুটির দিন হওয়াতে তাবলীগ জামাতের প্রতি অনুরাগী ছাত্ররা জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় বিশ্ব ইজতেমার প্রস্তুতির জন্য স্বেচ্ছাসেবা দানের ল্েয শুক্রবার এবং শনিবার ইজতেমা ময়দানে জমায়েত হয়। কিন্তু শনিবার সকালে সাদ বাহিনী সেখানে আসতে শুরু করে, সেসময় প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব নিলেও বেলা এগারোটায় যখন ছাত্রদের উপর সাদ অনুসারীরা হামলা করে, তখন প্রশাসন নিরব দর্শকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় এবং প্রশাসনের সহযোগিতায় সাদ বাহিনী গেটগুলো ভেঙে ময়দানের ভিতরে প্রবেশ করে দেশীয় বিভিন্নরকম অস্ত্র, লাঠিসোঁটা, রড ইত্যাদি নিয়ে সরলমনা ও নিরস্ত্র ছাত্র ও একনিষ্ঠ সাথীদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতিতে আমরা বলতে বাধ্য হচ্ছি যে, প্রশাসন আমাদের নিরীহ তাবলিগী সাথী ও ছাত্রদেরকে খুনিদের হাতে তুলে দিয়েছে।

বক্তারা বলেন, টঙ্গীতে ওলামাদের রক্তের বিনিময়ে এদেশে সাদ পন্থিদের কবর রচনা করা হবে। শুক্রবারের হামলায় অনেকে গুরুতর আহত হয়েছেন, ১ জনের প্রাণ গিয়েছে। এই হত্যাকা-ের দায়দায়িত্ব প্রশাসনের বহন করতে হবে।

নেতৃবৃন্দ বলেন, আমরা আজ বিুব্ধ হয়ে তাৎণিক প্রতিক্রিয়া জানাতে রাজপথে নেমে আসতে বাধ্য হয়েছি। সুতরাং পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই, জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় ইজতেমা যদি সাদ বাহিনীর ওয়াসিফ গংদের ষড়যন্ত্রে মাওলানা মাসউদের নেতৃত্বে অব্যাহতভাবে চলতে থাকে তাহলে আমরা আর প্রশাসনকে মানবো না। তাদের ষড়যন্ত্র যেটা ছিলো, আগামী ইজতেমা বানচাল করা। আমরা দেখতে পাচ্ছি প্রশাসন তাদের এ ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করতে ধীরে ধীরে সামনে অগ্রসর হচ্ছে। যদি এভাবেই ষড়যন্ত্র এগিয়ে যেতে থাকে এবং খুনিদের যদি গ্রেপ্তার না করা হয়, ওয়াসিফ, নাসিম এবং ফরিদ উদ্দিন মাসউদের উপযুক্ত বিচারের সম্মুখীন না করা হয় তাহলে আমাদের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেলে টঙ্গী ময়দানের দিকে আমরা রোডমার্চ করতে বাধ্য হবো।

সভা থেকে ৮ দফা দাবি পেশ করেন জামেয়া ক্বাসিমূল উলূম দরগাহ হযরত শাহজালাল (রহ.) মাদরাসা সিলেটের শায়খুল হাদীস মাওলানা মুহিব্বুল হক গাছবাড়ী।

দাবিগুলো হলো- হামলার নির্দেশদাতা ওয়াসিফুল ইসলাম ও শাহাবুদ্দিন নাসিম গংসহ হামলার সাথে জড়িত সকলকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তুমূলক শান্তি প্রদান, আহত-নিহতদের তিপূরণ ও চিকিৎসা ব্যবস্থা করা, টঙ্গী ময়দান এতোদিন যেভাবে শুরা ভিত্তিক পরিচালিত তাবলীগের সাথী ও ওলামায়ে কেরামের অধীনে ছিল তাদের কাছেই হস্তান্তর করা, অতিসত্ত্বর কাকরাইলের সকল কার্যকলাপ হতে ওয়াসিফ ও নাসিম গংকে বহিস্কার করা, সারাদেশে ওলামায়ে কেরাম ও সূরা ভিত্তিক পরিচালিত তাবলীগের সাথীদের উপর হামলা মামলা বন্ধ করে পূর্ণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা, টঙ্গীর আগামীর ইজতেমা পূর্বঘোষিত (১৮,১৯,২০ জানুয়ারি ২০১৮) অনুষ্ঠানের কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা, ওয়াসিফুল ইসলাম ও শাহাব উদ্দিন গংদের সাথে সিলেট থেকে দলবদ্ধ হয়ে টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানে হামলার নেতৃত্বদানকারী সিলেটের মাস্টার সুয়েজ আফজল খান, মৌলভী আব্দুল কুদ্দুস, মাওলানা আব্দুল করিম, তাজ উদ্দিন, এমাদ উদ্দিন গংদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তুমূলক শাস্তি দেওয়া ও অবলিম্বে সিলেটে তাদের সকল কার্যক্রম (বদিকোণা মার্কাজ ও বাইপাস সংলগ্ন মার্কাজ) বন্ধ করার জন্য প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানানো হয়।

সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- মাওলানা খলিলুর রহমান, মাওলানা সিরাজুল ইসলাম সিরাজী, মাওলানা হাবিব আহমদ শিহাব, মাওলানা সামিউর রহমান মুসা, মাওলানা ক্বারী সিরাজুল ইসলাম, মাওলানা আব্দুল কাদির খান, মাওলানা সৈয়দ শামীম আহমদ, আলহাজ্ব এমরান আলম, মাওলানা রুহুল আমিন নগরী, মাওলানা সালেহ আহমদ শাহবাগী, সামসুদ্দিন মোহাম্মদ ইলিয়াছ, আলহাজ্ব একরামূল আজিজ, মুফতি মতিউর রহমান, সৈয়দ শুয়াইব আহমদ, মাওলানা আখতারুজ্জামান তালুকদার, হাফিজ মাওলানা আব্দুল করিম দিলদার, জামাল তারেক বুলবুল, মাওলানা মকবুল আহমদ, আবুল ফাত্তাহ, মাওলানা এমদাদুল হক নোমানী প্রমুখ।

উল্লেখ্য, গত শুক্রবার টঙ্গীর তুরাগ তীরে তাবলীগ জামাতের ইজতেমা প্রস্তুতির কাজের সময় দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ১ জন নিহত ও দুই শাতাধিক আহত হন। এই ঘটনায় সাদপন্থীদের দায়ী করছেন তাবলীগের নেতৃবৃন্দ।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বশেষ ২৪ খবর