একাই লড়লেন মিন্নি, দাঁড়িয়ে দেখছেন দর্শক

প্রকাশিত: ২:০৫ অপরাহ্ণ, জুন ২৭, ২০১৯

একাই লড়লেন মিন্নি, দাঁড়িয়ে দেখছেন দর্শক

ডেস্ক প্রতিবেদন
স্বামীকে বাঁচাতে একাই লড়ে গেলেন মিন্নি। চোখের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলো যেনো একেকটা নিরব দর্শক। এ যেনো শ্যুটিংয়ের কোন দৃশ্য দেখতে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সবাই। কারো মুখে কথা নেই, নেই কোন প্রতিবাদ। অথচ, এমনও লোক দাঁড়িয়ে ছিলো ঘটনাস্থলে যাদের শক্তি খুনিদের শক্তির চেয়েও অনেকগুণ বেশি। তারা চাইলেই মিন্নির মতো করে খুনিদের আগলে ধরতে পারতো। প্রতিহত করা যেতো রিফাতের হত্যা যজ্ঞ। বেঁচে যেতো একটি তরতাজা প্রাণ। কিন্তু নাহ! তারা শুধু দর্শকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে ভিডিও করতে ব্যস্ত ছিলো। হায়রে মানুষ! হায়রে মানবিকতা!

কিন্তু, একটি মানুষ সে সময় পাগলের মতো ছুটেেিছলো রিফাতকে বাঁচাতে, আর সে ছিলো আয়েশা সিদ্দীকা মিন্নি। একবার এ খুনির কাছে তো, আরেকবার ও খুনির কাছে। কখনও পেছন থেকে জাপটে ধরছেন, আবার কখনও একেবারে খুনির হাতে থাকা রাম-দায়ের সামনে গিয়ে পথ আগলে ধরছেন। যেন ক্যামেরার সামনে সিনেমার শ্যুটিং। কিন্তু না, এ যেন সিনেমাকেও হার মানানো গল্প। সিনেমায় এত রক্তের দেখা মেলে না, যত লাল এক মিনিটের হামলায় খুনিরা রিফাতের শরীর থেকে ঝরালো।

কী নির্মমতা! কী পাষ-তা! দিনের বেলায় প্রকাশ্যে হামলে পড়েছে খুনিরা। তাও জনবহুল কলেজ গেটে। শত শত মানুষ ঠায় দাঁড়িয়ে দেখছে। অনেকের হাতে মোবাইল। ক্যামেরা চালু করে দিব্যি ছবি তুলছে। দাঁড়িয়ে থাকারা প্রায় সবাই যুবক গোছের। খুনিদের থেকেও তরতাজা বটে। অথচ কেউ এলো না বাঁচাতে! বরং হামলা শেষে একজন এগিয়ে এসে খুনিদের পালিয়ে যেতে ইশারা করল। যেন আপতত, শ্যুটিং বন্ধ।

রক্তাক্ত উপাখ্যান, অথচ স্বামীর প্রতি স্ত্রীর অসীম ভালোবাসা আরেকবার প্রত্যক্ষ করল মানুষ। সবে বিয়ে হয়েছে। হাতের মেহেদী হয়ত এখনও শুকায়নি। কে জানত, স্বামীর রক্তে সে মেহেদীর রঙ আরও রাঙা হয়ে উঠবে!

প্রাণের স্বামী রিফাতকে বাঁচাতে এতটুকু কার্পণ্য করেনি স্ত্রী আয়েশা সিদ্দীকা মিন্নি। যেন সর্বহারা এক পাগলিনীর গগনবিদারী আর্তনাদ। বাঁচাও বাঁচাও। বাঁচাতে আসেনি কেউ। বাঁচাতে পারেনি সেও। নিরস্ত্র নারীর কিছুই করার ছিল না খুনির ধারাল অস্ত্রের সামনে।

খুনির সামনে এক নিষ্ঠুর পৃথিবীকে দেখেছে মিন্নি। দেখেছে মানুষরূপী হায়েনাদের নির্মমতা, দেখেছে দর্শকরূপী মানুষের নীরবতা। পৃথিবীকে ঘৃণা ছাড়া আর কিছুই দিতে পারবে না এ নারী। বিষাদের রক্তক্ষরণ তার হৃদয়কে পাথর করে দেবে হয়ত। কে দাঁড়াবে মানুষরূপে মিন্নির সামনে?

ৎরভধঃ

রিফাত হত্যার নিন্দা বইছে সর্বত্রই। এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে ফের শিহরিত করছে মানবতাকে। প্রতিবাদের ঝড় বইছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও। মনে করিয়ে দিচ্ছে বিশ্বজিৎ রায় আর অভিজিৎ রায়ের হত্যাকাণ্ডকেও। বিচারহীনতার সংস্কৃতিকেই এমন হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী করছেন কেউ কেউ।

সময় টেলিভিশনের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক সালাউদ্দিন সুমন তার ফেসবুকে পোস্ট লিখেছেন, ‘বরগুনার ঘটনা জানার পর থেকে আমার যেন ঘোর কাটছে না। কিছুই ভালো লাগছে না। ভিডিওটা কয়েক সেকেন্ড দেখেছি, পুরোটা দেখার ক্ষমতা নাই। যতবার ভিডিওটি সামনে এসেছে দ্রুত স্কিপ করেছি।

অথচ কত নির্বিকার চিত্তে শত শত মানুষ উপভোগ করল এই নির্মম হত্যাকাণ্ড। কারও চোখেমুখে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও দেখলাম না তেমন। মনে হলো এফডিসিতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সিনেমার শ্যুটিং দেখছে!

আজ বারবার বিশ্বজিতের কথা মনে পড়ছে। যারা হত্যা করেছে তাদের সবার ছবি আছে, মানে জ্বলন্ত প্রমাণ আছে; এরপরও তারা গুরুতর অপরাধী নয়!’

বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে শত শত লোকের উপস্থিতিতে স্ত্রীর সামনে শাহ নেয়াজ রিফাত শরীফ (২৫) নামের এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা।

এরই মধ্যে রিফাতকে কুপিয়ে হত্যার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে তা ভাইরাল হয়ে যায়।

নিহত রিফাত শরীফের বাড়ি বরগুনা সদর উপজেলার ৬নং বুড়িরচর ইউনিয়নের বড় লবণগোলা গ্রামে। তার বাবার নাম আ. হালিম দুলাল শরীফ। মা-বাবার একমাত্র সন্তান ছিলেন রিফাত।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বশেষ ২৪ খবর