ঢাকা ১৬ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২রা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৯:২৮ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৪, ২০১৯
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি : সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার একমাত্র তাহিরপুর সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়টি শিক্ষক শুন্যতায় বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে। প্রতিবছর শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়লেও শিক্ষককের সংখ্যার বাড়ছে না বরং কমছে। শুন্যতার মাঝেই আবার যে কয়েকজন শিক্ষক রয়েছেন তারাও নিজেদের মত করে স্কুল ফাকিঁ দিয়ে ব্যাক্তিগত কাজ করছেন আর হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করছেন নিয়মিত। ফলে সঠিক ভাবে ও মানসম্মত শিক্ষা গ্রহন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। এদিকে পার্টটাইম শিক্ষক দিয়ে নামমাত্র শিক্ষা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে বলে অভিবাবক মহলে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।
.
স্থানীয় সুত্রে জানাযায়,১৯৫০সালে ৪একর ৫শতক জায়গার উপর এই বিদ্যালয়ের শিক্ষাদান কাজ শুরু হয়। পর্যায়ক্রমে বিদ্যালয়টি ১৯৫৪সালে নি¤œ মাধ্যমিক ও ১৯৬০সালে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের স্বীকৃতি পায়। ১৯৮৭সালে ২৭আগস্ট ৯জন শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ করা হয়। ১৯৮৭সাল পর্যন্ত শিক্ষক ছিলেন ১৬জন। জাতীয়করণের পর থেকে অনুমোদিত শিক্ষকের সংখ্যা দাঁড়ায় ১১জনে। ১৯৮৭সালের পর থেকে কোনো সময়েই ১১জন শিক্ষক পূরণ হয়নি। প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক পদ দুটি দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। চার শিক্ষক বর্তমানে ৬০০ছাত্রছাত্রীর পাঠদান করছে। সিনিয়র শিক্ষক ইসলাম ধর্ম শিক্ষার নুরুল ইসলাম শিক্ষা অধিদপ্তরের শিক্ষা মহাব্যবস্থাপকের অফিসের আদেশে ২০১৬থেকে অদ্যাবধি সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসায় প্রেষণে কর্মরত। তিনি প্রতি মাসের ২-৩তারিখে তাহিরপুর এসে বেতন-ভাতা উত্তোলন করে নিয়ে যান।
.
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে কখনও লিখিতভাবে অবহিত করেননি। বর্তমানে কমর্রত শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছেন-গণিতে এনায়েত হোসেন,ইংরেজিতে জাহিদুল কামাল,সমাজবিজ্ঞানে এএইচএম লিয়াকত ও কৃষিতে বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোশারফ হোসেন। বিদ্যালয়ের শূন্যপদগুলো হলো-প্রধান শিক্ষক,সহকারী প্রধান শিক্ষক,বাংলা,শরীর চর্চা,ভৌত বিজ্ঞান ও জীববিজ্ঞানের শিক্ষক। নেই অফিস সহকারী। এমএলএসএস পদে ২জনের বিপরীতে আছেন ১জন,নৈশপ্রহরীর পদ পাঁচ বছর ধরেই শূন্য রয়েছে। এসব সমস্যার কারনে সঠিক ভাবে ও সময় উপযুগী শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছক একাধিক শিক্ষক ও সচেতন এলাকাবাসী জানান,শিক্ষক সংকট,সঠিক ভাবে উধর্বতন কতৃপক্ষের নজরধারী ও বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোশারফ হোসেন প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে থাকার লোভে র্দীঘদিন ধরেই বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেননি বলে অভিযোগ উঠেছে। যার ফলে সরকারী এ শিক্ষা প্রতিষ্টানটি দিন দিন রসাতলে যাচ্ছে।
কারন হিসাবে বিদ্যালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সহকারী শিক্ষক জানান,সিনিয়র শিক্ষক নুরুল ইসলাম(ইসলাম র্ধম)কর্মরত পাঁচ শিক্ষকের মধ্যে সিনিয়র। বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক কিংবা সহকারী প্রধান শিক্ষক না থাকায় নুরুল ইসলাম ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পান।
.
বিদ্যালয়টির সাবেক শিক্ষার্থী জাহাঙ্গীর,শ্যামল,শরীফ উদ্দিন,চয়নসহ অভিবাবক ও স্থানীয় বাসীন্দারা জানান,সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে ৪জন শিক্ষক এখন কর্মরত আছেন এ বিষয়টি উদ্বেগজনক। শিক্ষক সংকটের কারণে সকল শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পাঠদান সম্ভব হয় না। এর প্রভাব পড়ছে পরীক্ষার ফলাফলে। আর সঠিক নজরদারী না থাকায় স্কুলের সুনামের পরির্বতে এখন দূর্নাম হচ্ছে।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোশারফ হোসেন বলেন,বিদ্যালয়ে প্রয়োজনীয় শিক্ষক না থাকায় খ-কালীন শিক্ষক দ্বারা পাঠদান করানো হচ্ছে। সিলেট আলিয়া মাদ্রাসায় প্রেষণে কর্মরত শিক্ষক নুরুল ইসলামের বিষয়ে কথা বলতে চাইলে তিনি বলেন,তিনি আমার সিনিয়র। তিনি এখানে থাকলে আমার দায়িত্ব পালনে বাধা আসতে পারে।
তাহিরপুর উপজেলা ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা মুনতাসির হাসান জানান,বিদ্যালয়ে প্রয়োজনীয় শিক্ষকের বিষয়ে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবেন।
.
সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসায় প্রেষণে কমর্রত ইসলাম ধর্মের শিক্ষক নুরুল ইসলামকে স্বকর্মস্থলে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করবেন বলে জানান,তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুনা সিন্দু চৌধুরী বাবুল। তিনি জানিয়েছেন,তাহিরপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে শূন্য পদে শিক্ষক নিয়োগের জন্য তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করবেন।
সম্পাদক : জে.এ কাজল খান
স্বত্ত্ব: দৈনিক বিজয়ের কণ্ঠ (প্রিন্ট ভার্সন)
০১৭১৮৩২৩২৩৯
Design and developed by syltech