রোহিঙ্গাদের দৃষ্টি এখন হেগের আদালতে

প্রকাশিত: ১১:২৯ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ১০, ২০১৯

রোহিঙ্গাদের দৃষ্টি এখন হেগের আদালতে

ডেস্ক প্রতিবেদন :: মিয়ানমার থেকে পালিয়ে কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের দৃষ্টি এখন নেদারল্যান্ডসের হেগের দিকে। মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গাম্বিয়ার দায়ের করা গণহত্যা মামলায় কী হবে, কী হতে যাচ্ছে- তা নিয়ে তীব্র আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে রোহিঙ্গাদের মধ্যে।

কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ৩২টি শিবিরে অবস্থিত চায়ের দোকান, হাট-বাজার এবং মসজিদ-মাদ্রাসায় হেগের আন্তর্জাতিক আদালতে (আইসিজে) দায়ের করা মামলাই এখন আলোচনার বিষয়।

হেগের আদালতে দায়ের করা গণহত্যা মামলায় মিয়ানরমার সরকারের কঠোর শাস্তি কামনা করে রোহিঙ্গা শিবিরের মসজিদে মসজিদে এখন চলছে বিশেষ প্রার্থনা। বিশেষ প্রার্থনায় শরিক হয়ে তারা সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করছে, নিরস্ত্র-নিরীহ মানুষগুলো যে বর্বরতার শিকার হয়েছে, বিশেষ করে আগুনে পুড়িয়ে মারা, তাদের মা-বোনকে গণধর্ষণের মতো পৈশাচিকতার যেন বিচার হয়।

গতকাল সোমবার দিনব্যাপী রোহিঙ্গা শিবিরে এসব বিষয় নিয়ে খোঁজ-খবর নিতে গিয়ে পাওয়া গেছে এরকম তথ্য।

মিয়ানমারের সেনা সদস্যসহ সরকারি বাহিনীর অব্যাহত নির্যাতনের শিকার হয়ে পালিয়ে আসা অনেক ক্ষুব্ধ রোহিঙ্গা মনে করেন, অন্তত মামলায় লড়তে অং সান সুচির হেগের আদালতে যাওয়াটাও কম শাস্তি নয়। এতকাল সুচি মনে করেছিলেন, তাঁকে চেয়ার থেকে নড়াচড়া করানোর মতো শক্তিও বিশ্বে কারো নেই। কিন্তু আজ প্রমাণিত হয়েছে, আদালতের কাছে অং সান সুচির মতো ব্যক্তিত্বকেও হার মানতে হয়েছে। এ প্রসঙ্গে রোহিঙ্গারা মনে করেন, ‘অসির চাইতে মসির শক্তি’ অনেক বড়-সেটাই বিশ্ববাসী আরেকবার প্রমাণ পেল।

মিয়ানমারের রাখাইনে সংখ্যালঘু নিরীহ নৃ-গোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের ওপর সে দেশের সেনা বাহিনীর চালানো বর্বরতা ও ‘গণহত্যা’র অভিযোগে হেগে মামলা দায়েরের পর থেকেই রোহিঙ্গা শিবিরে বিরাজ করছে এক ভিন্ন পরিস্থিতি। মামলায় হাজির হতে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সুচির হেগের উদ্দেশে দেশত্যাগের পর থেকেই শিবিরে রোহিঙ্গাদের মধ্যে আনন্দ-উৎফুল্লভাব বিরাজ করছে।

উখিয়ার কুতুপালং ২ নম্বর ক্যাম্পের (পুরান টাল) রোহিঙ্গা আবদুল হাফিজ বলেন, ‘আমরা রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো গণহত্যার কথাই সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছিলেন অং সান সুচি। এমনকি আন্তর্জাতিক এত চাপাচাপিতেও সুচি তাঁর সুর কখনো নরম করেননি। আজ সেই সুচিকেও অন্তত আদালতে যেতে হয়েছে।

হাফিজ নামের এক রোহিঙ্গা বলেন, এমন মামলাটিতে আমাদের আশ্রয়দাতা দেশ বাংলাদেশ সহযোগিতা দিচ্ছে- এ জন্য আমরা আবারো বাংলাদেশ এবং সরকার প্রধান শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

উখিয়ার কুতুপালং শিবিরের ৭ নম্বর ব্লকের মসজিদের ইমাম রোহিঙ্গা মওলানা আবদুল জলিল বলেন, ‘আইসিজে আদালতে দায়ের করা মামলায় মিয়ানমারের শাস্তি কামনা করে মসজিদে প্রতি ওয়াক্ত নামাজের পর আমরা বিশেষ প্রার্থনা করছি। আমরা মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে ফরিয়াদ করছি মামলায় মিয়ানমারের শাস্তি হোক।’

একই শিবিরের ২ নম্বর ব্লকের বাসিন্দা রোহিঙ্গা মওলানা মোহাম্মদ রফিক বলেন, ‘মহান আল্লাহকে ধরে থাকা ছাড়া আমাদের কোনো গত্যন্তর নেই। আমরা আমাদের হক আদায় করতে চাই। আমরা পেতে চাই আমাদের শত শত বছরের বসতি, জায়গা-জমি ও নাগরিকত্ব। আমরা ফিরে যেতে চাই আমাদের নাড়ির মাটিতে।’

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বশেষ ২৪ খবর