ঢাকা ১৬ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২রা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৬:০৫ অপরাহ্ণ, মে ৭, ২০১৯
সুনামগঞ্জ সংবাদদাতা
সুনামগঞ্জে ঘূর্ণিঝড় ফণী’র প্রভাবে অতিবৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলের পানিতে হাওরে এখন বর্ষার রূপ ধারণ করেছে। ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে জেলার জামালগঞ্জ, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর ও ধর্মপাশা উপজেলার ৬টি বেশী হাওরের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে উঠতি ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ফলে ধান শুকানোর খলা, গোচারণ ভ‚মি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় হাওর পাড়ের কৃষকরা কাটা বোর ধান, মাড়াই করা ধান ও গো-খাদ্য না শুকাতে পেরে বিপাকে পড়েছেন।
হাওরপাড়ের কৃষক ও হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলনের সংশ্লিষ্টরা দাবি করেছেন, ঘূর্ণিঝড় ফণীর কারণে গত শুক্রবার(৩মে)থেকেই জেলার সবকটি উপজেলায় ঝড়োহাওয়ার সাথে বৃষ্টিপাতে নদ-নদীর পানি বাড়তে থাকে। শনিবার রাত প্রায় সাড়ে ১১টা থেকে অস্বাভাবিক ভাবে জেলার বিভিন্ন নদীর পানি বেড়ে যায়। ঘণ্টাখানেক পরই জেলার বিভিন্ন ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে বির্স্তীর্ণ এলাকায় পানি প্রবেশ করে পাকা ধান তলিয়ে যেতে থাকে। জামালগঞ্জের হালির হাওর, তাহিরপুরের শনির হাওর, ধর্মপাশার সোনামড়ল হাওর ও গুড়মার হাওর, বিশ্বম্ভরপুরের খরচার হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ নিন্মমানের কাজ হওয়ায় ভাঁধ ভেঙে উঠতি পাকা ধান প্রায় ৩০ভাগ তলিয়েছে গেছে। তবে কৃষি বিভাগ বলছে, ৯০থেকে ৯৪ভাগ ধান কাটা হয়ে গেছে।
কৃষক রইছ মিয়া বলেন, হাওরে পানি প্রবেশের কারণে কৃষকেরা দিশেহারা। হাওরের ৩০-৪০ভাগ জমির ধান এখনো কাটা বাকি আছে। কৃষকেরা বাকি ধান কাটা ও হাওরে মাড়াইকৃত ধান রক্ষণাবেক্ষণ ও গোখাদ্য সংরক্ষণ নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। তিনি বলেন,যে ধান মাড়াই করছি এই ধান বাড়িতে নেয়াই কষ্টকর। যে ধান ডুবছে সেই ধানের চিন্তা না কইরা কাটা ধান নিয়াই জান যায় আর আয়। এর মধ্যে গরুর খাদ্য তুলা কোনটা থইয়া কোনটা করি বুজতে পারছি না।
সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি স¤প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক বশির আহমদ বলেন,‘সোমবার করচার হাওরের কিছু উঁচু এলাকার ধানও ডুবেছে। ব্রি-২৯ জাতের এসব ধান ডুবিয়ে কাটছেন কৃষকরা। অন্য কোন হাওরে এমন অবস্থা নেই। শনিবার পর্যন্ত হাওর এলাকায় মোট এক লাখ ৭২হাজার হেক্টর জমির মধ্যে এক লাখ ৬১হাজার হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে। হাওর ছাড়া মোট ৫২হাজার হেক্টর জমির মধ্যে কাটা হয়েছে ২৬হাজার হেক্টর জমির ধান। চলতি বোরো মওসুমে জামালগঞ্জ উপজেলায় ২৪হাজার ৬৬০হেক্টর ও তাহিরপুর উপজেলায় ১৮হাজার ৩০০হেক্টর জমিতে ধান চাষ করা হয়। হালির হাওর ও শনির হাওরের ২০হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষ করা হয়েছিল।
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, শনির হাওরপাড়ের অপেক্ষাকৃত উঁচু এলাকার জমিও ডুবে গেছে। হাওরপাড়ের সাঁতগাও, বসনপুর, বারুংকা, পাথারি, আনোয়ারপুর, দক্ষিণক‚ল, হোসেনপুর ও চিকশা গ্রামের কৃষকরা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে পানির নীচ থেকে ডুব দিয়ে ধান কাটার চেষ্টা করছেন।
জামালগঞ্জের বেহেলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অসিম তালুকদার বলেন, ‘শনির হাওরে জামালগঞ্জের রাধানগর, শিবপুর, চন্ডিপুর, রহমতপুর, ইসলামপুর, তিল খৈ, প্রকাশনগর গ্রামের কৃষকরা ধান কাটতে পারেন নি। এখন ধানী জমিতে ডুব সমান পানি। এই ধান কাটা সম্ভব হয়নি।
ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো. সফিউল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার থেকেই ফুীর প্রভাবে আসাম এবং মেঘালয়ে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। এই বৃষ্টির পানি সুনামগঞ্জের কয়েকটি হাওরে এসে ঢুকেছে। কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সেটিও নিরূপণ করার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বাঁধ নির্মাণে কারো ত্রæটি ছিল কি-না, ত্রæটি থাকলে তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বকর সিদ্দিক ভূঁইয়া বলেন,ফুীর প্রভাবে ভারী বৃষ্টি হওয়ায় অস্বাভাবিক হারে পাহাড়ি নদীতে পানি বৃদ্ধি পায়। রাত সাড়ে ৩টায় সুনামগঞ্জের পাঁচটি হাওরে পানি প্রবেশ করে। নদীর পানি সোমবার বাড়েনি। ২৩সেন্টিমিটার কমেছে। সুরমা নদীর সুনামগঞ্জ পয়েন্টে এই সময়ে বিপদ সীমা ৬.০৪সেন্টিমিটার। সোমবার বিকেল ৩টায় পানি প্রাবহিত হয়েছে ৫.৬১সেন্টিমিটার উপর দিয়ে।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের প্রধান আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী বলেন, সুনামগঞ্জে পানি বাড়ার আশংকা নেই। আগামী ১০দিনের মধ্যে ১৪ এবং ১৫ মে বৃষ্টি একটু বেশি হবে। তবে ১০দিনের গড় বৃষ্টি ৮থেকে ১০মিলিমিটারের বেশি নয়। আসাম-মেঘালয়ে খুব বেশি বৃষ্টি হবে না।
সম্পাদক : জে.এ কাজল খান
স্বত্ত্ব: দৈনিক বিজয়ের কণ্ঠ (প্রিন্ট ভার্সন)
০১৭১৮৩২৩২৩৯
Design and developed by syltech