ঢাকা ১১ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৮শে চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৪:২৫ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৬, ২০১৮
ক্রীড়াকণ্ঠ প্রতিবেদন
সীমিত পরিসরের ক্রিকেটে সাফল্যের ভান্ডার যখন টইটুম্বুর তখন ক্রিকেটের অভিজাত শ্রেণিতে বাংলাদেশ চলছে ব্যাকগিয়ারে। সবচেয়ে বেশি হতাশ করছেন ব্যাটসম্যানরা। শেষ আট ইনিংসে নেই দলীয় দুইশ! এর মধ্যে চারবারই দেশের মাটিতে। ভাবা যায়?
জিম্বাবুয়ের সাদামাটা বোলিংয়ের বিপে নিজেদের চিরচেনা কন্ডিশনেও দুইশ হবে না! প্রথম ইনিংসে ১৪৩ রান হতে পারে অঘটন। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসের ১৬৯ কিসের আলামত? ৩২১ রানের ল্য তাড়ায় সিলেটের অভিষেক টেস্টে বাংলাদেশ হেরে বসল ১৫১ রানের বিশাল ব্যবধানে। বাংলাদেশ নয়, সিলেটের অভিষেক টেস্ট রাঙিয়ে রাখল জিম্বাবুয়ে।
সিলেটে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের অভিষেক টেস্ট ম্যাচকে স্মরণীয় করতে আয়োজক বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড ও সিলেট বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার প থেকে সব ধরণের ব্যবস্থা করা হয়েছিলো। ব্যাতিক্রম ধর্মী ঘণ্টা বাজিয়ে ভেন্যুর টেস্ট ক্রিকেটে পথচলা শুরু। দুই দলের জন্য লাল গালিচা ব্যবস্থাসহ স্থানীয় সাবেক টেস্ট প্লেয়ারদের সংবর্ধনা দেওয়া সহ কত কি আয়োজন। তবে কে জানতো বাংলাদেশ এই ম্যাচটি উল্টো লজ্জার পরাজয় নিয়ে মাঠ ছাড়বে।সব কিছুর পাওয়ার ম্যাচে কাঙ্খিত জয়টা যে ধরা দেয়নি বাংলাদেশের।
সিলেটের অভিষেক টেস্ট ম্যাচ জিততে বাংলাদেশের সামনে টার্গেট ছিলো ৩২১রান। তবে আগে কখনও বাংলাদেশ চতুর্থ উনিংসে ২১৫ রানের বেশী করে জয়ের রেকর্ড ছিলো না। অন্য সব দিনের চেয়ে এদিন বাংলাদেশের রেকর্ড রান চেইজ করে জয় দেখতে স্টেডিয়াম ভর্তি দর্শক ছিলো। তবে দর্শকদেরকে হতাশ করে বাংলাশের ব্যাটিং। বাংলাদেশ যখন অল আউট হয়ে যায় তখন ও অনেক দর্শক স্টেডিয়ামে অসছিলো বাংলাদেশর খেলা দেখতে।তবে তার আগেই যে বাংলাদেশ পরাজয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে।
৩২১ রানের জয়ের টার্গেট যেখানে সেখানে বাংলাদেশ তাদের দুই ইনিংস মিলিয়ে ও ৩১২ রানের বেশী করতে পারেনি। ওয়ানডে সিরিজ জিম্বাবুয়েকে ৩-০ তে হারানো বাংলাদেশ টেস্ট ম্যাচটি হেরে যায় ১৫১ রানের বড় ব্যবধানে। মূলত বাংলাদেশ তাদের ব্যাটিং ব্যর্থতার জন্য মাত্র সাড়ে তিন দিনে ম্যাচ হেরে যায় । এই ম্যাচ জয়ের মধ্য দিয়ে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে গেলো জিম্বাবুয়ে।
২০১৩ সালের নিজেদের দেশের মাঠিতে পাকিস্তনকে হারানোর পর এটি তাদের প্রথম টেস্ট জয়। অন্য দিকে বিদেশের মাঠিতে তাদের জয়টি দীর্ঘ ১৭ বছর পর । ২০০১ সালে সর্বশেষ তারা বাংলাদেশের মাঠিতে কোন টেস্ট ম্যাচ জিতেছিলো।
গতকাল সোমবার বিনা উইকেটে ২৬ রান তুলে তৃতীয় দিন শেষ করেছিল বাংলাদেশ। আজ চতুর্থ দিনের শুরু থেকে বাংলাদেশ দেখে শুনে খেলতে থাকে। প্রথম এক ঘন্টা বাংলাদেশ কোন উইকেট না হারিয়ে ভালো ব্যাটিং করতে থাকে । তাদের ব্যাটিং ধেখে মনে হয়েছিলো ৩২১ রান বাংলাদেশ নভর্াির ভাবে অতিক্রম করে নিভে। তবে প্রথম ঘন্টার পর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে বাংলাদেশ । যেটি কিনা শুরু করেন ওয়ানডে সিরিজে ছন্দে থাকা লিটন কুমার দাস। সিকান্দার রাজার স্পিনে এলবিডব্লিউ হওয়ার আগে করনে মাত্র ২৩ রান। ভাঙে ৫৬ রানের ওপেনিং জুটি। তিন নম্বরে নামা মুমিনুল হক দ্বিতীয় ইনিংসেও ব্যর্থ। মাত্র ৯ রান করে জার্ভিসের বলে বোল্ড হয়ে যান ‘টেস্ট স্পেশালিস্ট’ খ্যাত এই ব্যাটসম্যান।
একপ্রান্ত আগলে ভালোই খেলছিলেন ইমরুল কায়েস। কিন্তু ব্যক্তিগত ৪৩ রানে তিনি সেই সিকান্দার রাজার বলে বোল্ড হয়ে যান। ৮৩ রানে শীর্ষ তিন ব্যাটসম্যান হারিয়ে বিপাকে পড়ে বাংলাদেশ। অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ (১৬) দলীয় ১০২ রানে সিকান্দার রাজার দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হলে আবারও ব্যাটিং বিপর্যয়ের শংকা জাগে বাংলাদেশের। লাঞ্চ বিরতির ঠিক আগেই মাভুতার বলে সিকান্দার রাজার হাতে ক্যাচ দিয়ে বাংলাদেশকে গভীর সংকটে ফেলে দেন নাজমুল শান্ত (১৩)। শান্ত ১৩ রানকে যেন অনুস্বরণ করতে মুশফিকও ১৩ রান করে ফিরলে বাংলাদেশের হার যেন সময়ের ব্যাপার হয়ে যায়। প্রথম ইনিংসের মতো ¯্রােতের বিপরীত প্রান্তে দাড়িয়ে খেলতে থাকেন আরিফুল হক (৩৮)। তবে ইনিংস বিল্ড আপ করার জন্য তিনি যোগ্য কোন সঙ্গি খুঁজে পাননি।তাই শুরু থেকে তিনি চালিয়ে খেলতে থাকেন। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে তার উইকেটটি পতনের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ ১৬৯ রানে অলআউট হলে জয়ের উল্লাগে উড়তে থাকে সফরকারী জিম্বাবুয়ে।
এর আগে গত সোমবার বিনা উইকেটে ২৬ রান তুলে তৃতীয় দিন শেষ করেছিল বাংলাদেশ। তাইজুল-মিরাজ-অপুদের ঘূর্ণিতে ১৮১ রানে জিম্বাবুয়ের দ্বিতীয় ইনিংস শেষ হয়। সর্বোচ্চ ৪৮ রান করেন অধিনায়ক মাসাকাদজা। ম্যাচে দ্বিতীয়বারের মতো পাঁচ উইকেট নেন তাইজুল। এতে বাংলাদেশের চতুর্থ বোলার হিসেবে টেস্টে নূন্যতম ১০ উইকেট পাওয়া হয়ে যায় তার। ৩ উইকেট নেন মিরাজ এবং দুটি নেন নাজমুল অপু। বাংলাদেশের সামনে টার্গেট দাঁড়ায় ৩২১ রানের।
এর আগে প্রথম ইনিংসে ২৮২ রানে অল-আউট হয় জিম্বাবুয়ে। বাংলাদেশের হয়ে ৬ উইকেট নেন তাইজুল। কিন্ত নিজেদের প্রথম ইনিংসে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দেয় স্বাগতিক ব্যাটসম্যানরা। দ্বিতীয় দিনে দেড় সেশনেই অল-আউট হয় মাত্র ১৪৩ রানে। অভিষিক্ত আরিফুল হক ৭ নম্বরে নেমে সর্বোচ্চ ৪১* রান করেন। ১৩৯ রানের লিড নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে জিম্বাবুয়ে।
বাংলাদেশ একাদশ: মাহমুদউল্লাহ (অধিনায়ক), ইমরুল কায়েস, লিটন দাস, মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলাম, আবু জায়েদ চৌধুরী, আরিফুল হক, নাজমুল হোসেন শান্ত, নাজমুল ইসলাম অপু।
জিম্বাবুয়ে একাদশ : হ্যামিল্টন মাসাকাদজা (অধিনায়ক), ব্রায়ান চেরি, ব্রেন্ডন টেইলর, শন উইলিয়ামস, সিকান্দার রাজা, পিটার মুর, রেগিস চাকাভা, কাইল জার্ভিস, ব্রেন্ডন মাভুতা, ওয়েলিংটন মাসাকাদজা, তেন্দাই চাতারা।
সম্পাদক : জে.এ কাজল খান
স্বত্ত্ব: দৈনিক বিজয়ের কণ্ঠ (প্রিন্ট ভার্সন)
০১৭১৮৩২৩২৩৯
Design and developed by syltech