সাতছড়িতে কঠোর গোপনীয়তায় র‌্যাবের অভিযান

প্রকাশিত: ১২:০৯ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৩, ২০১৯

সাতছড়িতে কঠোর গোপনীয়তায় র‌্যাবের অভিযান

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি : হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) একটি দলকে অত্যন্ত গোপনে অভিযান চালাতে দেখা গেছে। গত দুদিন ধরে উদ্যানটিতে র‌্যাব সদস্যদের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর র‌্যাব-৯ এর একটি দল ২ টি হাইয়েজ গাড়িতে করে এসে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের ট্রেইল দিয়ে বনে প্রবেশ করতে দেখতে পায় স্থানীয়রা। তবে রাতে তারা কখন বন থেকে বেরিয়ে গেছেন কেউ জানতে পারেনি। শুক্রবার সকালে পুনরায় তারা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে গোপনীয় ভাবে সাতছড়ি বনে প্রবেশ করেন। এ সময় সাতছড়ি পার্কে থাকা কয়েকজন পর্যটক তাদের সাথে দুজন লোককে দেখেছেন, যাদের হাতে হাতকড়া পরানো ছিল বলেও তারা জানায়।

পার্কের একজন কর্মচারি জানান, শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে ২টি হাইয়েজ গাড়িতে করে প্রায় ২৫/৩০ জন সদস্য একসাথে বনে প্রবেশ করেন। এ সময় তারা পার্কে আসা কয়েকজন পর্যটককে পার্কের ট্রেইল দিয়ে প্রবেশ করতে নিষেধ দেন।

পার্কের অ্যাকাউন্টস অফিসার জসিম উদ্দিন জানান, সকালে বেশ কয়েকজন র‌্যাব সদস্যদেরকে তিনি পার্কের ট্রেইলের দিকে প্রবেশ করতে দেখেছেন। তবে তারা কি উদ্দেশে বা কোন অবস্থানে গেছেন তিনি তা বলতে পারেননি। গতকাল দুপুরে পার্কে গিয়ে দেখা যায়, একেবারে নিরব। হাতে গোনা কিছু পর্যটক এসেছেন ঘুরতে।

এ বিষয়ে র‌্যাব-৯ এর শ্রীমঙ্গল কার্যালয়ে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, এ ব্যাপারে পরবর্তিতে জানানো হবে। এ ব্যাপারে র‌্যাব ৯ সিলেটের মিডিয়া অফিসার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মনিরুজ্জামান এর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

চুনারুঘাট থানার ওসি শেখ নাজমুল হক জানান, বিষয়টি আমি অবগত নই। তবে র‌্যাবের অভিযানের খবর আমি শুনতে পেরেছি। আমার লোক সেখানে প্রেরণ করব।

এ ব্যাপারে সাতছড়ি বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা মাহমুদ হোসেন জানান, শুক্রবার সকালে দুটি গাড়িতে করে র‌্যাব সদস্যরা বনে প্রবেশ করেন। র‌্যাব আমাদেরকে জানায়, তারা অভিযানের জন্য বনে প্রবেশ করেছে। এর বেশি তিনি কিছু বলতে পারেননি।

প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে সাতছড়িতে চার দফা অভিযানে ছয় বার অস্ত্র ও গোলাবারুদ পায় র‌্যাব। ১ জুন থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩ দফায় ৩৩৪টি কামান বিধ্বংসী রকেট, ২৯৬টি রকেট চার্জার, একটি রকেট লঞ্চার, ১৬টি মেশিনগান, একটি বেটাগান, ৬টি এসএলআর, একটি অটো রাইফেল, পাঁচটি মেশিনগানের অতিরিক্ত খালি ব্যারেল, প্রায় ১৬ হাজার রাউন্ড বুলেটসহ বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ উদ্ধার করে র‌্যাব। ১৬ অক্টোবর থেকে ৪র্থ দফার ১ম পর্যায়ে উদ্যানের গহীনের অরণ্যে মাটি খুড়ে ৪র্থ দফায় ৩টি মেশিন গান, ৪টি ব্যারেল, ৮টি ম্যাগজিন, ২৫০ গুলির ধারণক্ষমতা সম্পন্ন ৮টি বেল্ট ও উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন একটি রেডিও উদ্ধার করা হয়। ওই বছরের ১৭ অক্টোবর দুপুরে এসএমজি ও এলএমজি’র ৮ হাজার ৩৬০ রাউন্ড, ত্রি নট ত্রি রাইফেলের ১৫২ রাউন্ড, পিস্তলের ৫১৭ রাউন্ড, মেশিনগানের ৪২৫ রাউন্ডসহ মোট ৯ হাজার ৪৫৪ রাউন্ড বুলেট উদ্ধার করা হয়। এছাড়া এসএমজি’র ২০টি, এলএমজি’র ৫টি, এসএলআর-এর ৬টি, ত্রি নট ত্রি’র ৪টি, এমএমজি ২টি, পিস্তলের ২৯টি ও জি থ্রি’র ১২টিসহ মোট ৮০টি ম্যাগজিন, ৫টি ওয়াকিটকি ও উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন একটি রেডিও সেট উদ্ধার করা হয়। পরবর্তিতে ২০১৮ সালের ২ ফ্রেব্রুয়ারিতে আবার সেখানে অভিযান পরিচালনা করে ১০টি হাই এক্সক্লুসিভ ৪০ এমএম অ্যান্টি-ট্যাংক রকেট উদ্ধার করে র‌্যাব।

সর্বশেষ ২৪ খবর