সুনামগঞ্জের যাদুকাটা নদীতে জল-মেঘের খেলা

প্রকাশিত: ২:১৪ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১৮, ২০১৮

সুনামগঞ্জের যাদুকাটা নদীতে জল-মেঘের খেলা

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
বিপুল সম্ভাবনা আর প্রাকৃতিক সৌর্ন্দযের ডালা সাজিয়ে আছে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব দিগন্তে অবস্থিত ভাটির জনপদ সুনামগঞ্জ জেলার অন্যতম উপজেলা তাহিরপুর । দেশের এই প্রান্তিক জনপদে বিধাতা যেন নিপুন হাতে বিলিয়ে দিয়েছে অফুরন্ত সম্পদ, সম্ভাবনা আর অপরূপ নৈসর্গিক সৌন্দর্য্য।ে নীল আকাশে সাদা মেঘের খেলা। কখনো জমাট আবার কখনো হালকা বাতাশে দলছুট হয়ে পাগলা ঘোড়ার মত উত্তরে দাঁড়ানো আকাশে ছোঁয়া বিশাল মেঘালয়ের খাসিয়া পাহাড়ে গিয়ে আছঁড়ে পড়ছে। আর তারই নয়াভিরাম দৃশ্য তাহিরপুর উপজেলার সীমান্ত যাদুকাটা নদীর প্রান্তে ফোটে উঠে। যাদুকাটা নদীর জলে ভেসে মেঘের ছায়া। সীমান্ত নদী যাদুকাটার যেন কোন রূপের শেষ নেই। এই রূপে মুগ্ধ হচ্ছেন প্রতিনিয়ত হাজার হাজার দর্শনাথী ও পর্যটকগন। দিন যতই যাচ্ছে বাড়ছে যাদুকাটা নদীর প্রতি সৌন্দর্য্য পিপাসু পর্যটকের সংখ্যা।
জানাযায়, তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট ও উত্তর বড়দল ২টি ইউনিয়নের মধ্যে এই যাদুকাটা নদী প্রবাহিত। ভারতীয় মেঘালয়ের বুক চিড়ে বয়ে আসা এই পাহাড়ী নদী সংলগ্ন রয়েছে শাহ আরেফিন আউলীয়ার আস্তানা, হিন্দু সম্প্রদায়ের পনাতীর্থ ও ৭শত ফুট উচচতা সম্পন্ন বারেকটিলার নৈসর্গিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য ও শিমুল বাগানসহ অসংখ্য স্থান। এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিন দেশের সীমানা পেরিয়ে বিদেশ থেকেও এসে ভিড় করছেন শত শত সৌন্দর্য্য পিপাসু পর্যটক। যাদুকাটা রূপের নদী, সম্পদের নদী, শ্রমের ও সমৃদ্ধির নদী কত নামে ডাবেন স্থানীয়রা। সৌন্দর্য্যের ১৬ কলাই পরিপূর্ণ এক লীলাভূমি যাদুকাটা। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের খাসিয়া পাহাড়ের বুক চিড়ে পাহাড়ী ঝর্ণার পানি মিলিত হয়েছে সীমান্ত নদী যাদুকাটায়। এই যাদুকাটা নদী ২৩ কিলোমিটার দৈঘ্য হওয়ায় এটি উপজেলার সব চেয়ে বড় নদী। এ নদীতে সকাল থেকেই শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত বছরের ১২ মাসেই ২০ হাজারের বেশী বারকি শ্রমিক পরিবার জীবিকার তাগিদে নদী থেকে বালু, পাথর, নুড়ি পাথর আরোহন করছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ডাঃ গোল আহমদ, সেলিম হায়দার, মাসুক মিয়াসহ স্থানীয়রা জানান,এই নদী থেকে আরোহিত বালু, পাথর ও নুড়ি পাথর দেশের বিভিন্ন স্থানের প্রয়োজনীয় উপকরণ যোগায়। বর্ষায় পাহাড়ি নদী যাদুকাটার বুকে জলের ¯্রােত ধারা আর হেমন্তে শুকিয়ে যাওয়ায় যাদুকাটার বুকে দেখা যায় দু-দু বালুচর। এ যেন আরবের কোন এক মরুভূমি। ভারতের সারি সারি উঁচু নিচু মেঘালয় রাজ্যের খাসিয়া পাহাড় ও বারেক টিলার বুকে ঘন সবুজের সমারোহ যাদুকাটায় বেড়াতে আসা পযটকদের আরো আকর্ষণ বাড়িয়ে দেয়। পাহাড়ে বসবাস কারী গারো সম্প্রদায়দের আধো আধো বাংলা কথা বলার চেষ্টা বেশ আনন্দ পায় বেড়াতে আসা পর্যটক ও দর্শনার্থীরা। যাদুকাটা নদীর বুকে তারা কখনো ইঞ্জিন চালিত নৌকা ও ডিঙ্গি নৌকা, কখনো তীর ঘের্ষা রাস্তা দিয়ে পায়ে হেঁটে যাদুকাটার সৌর্ন্দয উপভোগ করে।
যাদুকাট নদী ও বারেক টিলায় বেড়াতে আসা শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান জনমেজর, রাহাদ হায়দার সহ তার বন্ধুরা জানান-এই অপরূপ সৌন্দর্যের রুপের রানী যাদুকাটার তুলনা হয় না। এত সুন্দর পাহাড়ী নদীর সম্মিলন খুব একটা দেখা যায় না। হেমন্তে গায়ের বধুরা বালুচড় পাড়ি দিয়ে যাদুকাটার সচ্ছ পানিতে গোসল করে ফেরার পথে বেঁজা গায়ে কলসি কাঁকে বাড়ি ফিরার সময় রেখে যায় তাদের ভেঁজা পায়ের পদ চিহ্ন। এ যেন কবি মাইকেল মদূসধন দত্তের কপোতাক্ষ নদ। তবে যোগাযোগ ব্যবস্থা, থাকা, খাওয়ার ভাল ব্যবস্থা না থাকার কারণে বেড়াতে আসা লোকজনের কষ্ট হচ্ছে।
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল জানান-টাংগুয়ার হাওর, টেকেরঘাট, বারেকটিলা ও যাদুকাটা নদীতে দেশ-বিদেশের পর্যটক সারা বছরেই বেড়াতে আসেন। প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিলে দেশের অন্যান্য পর্যটন স্পট গুলোকেও হার মানাবে। এখানে একটি সরকারী বা বেসরকারী উদ্যোগে ইকোটুরিজম স্থাপন করা হলে সরকারের যেমন রাজ্যস্ব আয় হবে তেমনি এই এলাকার স্থানীয় বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
কিভাবে যাবেন : ঢাকা থেকে সরাসরি সুনামগঞ্জ যাওয়ার জন্য বিভিন্ন বাস সার্ভিস রয়েছে। এছাড়াও ঢাকা থেকে সিলেট হয়ে সুনামগঞ্জ বাস্ট্যান্ড যাওয়া যায়। সুনামগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড থেকে সিএনজি অথবা মটরসাইকেল অথবা লাইটেস দিয়ে লাউড়েরগড়-যাদুকাটা নদী।
ভাড়া : সুনামগঞ্জ থেকে মটরসাইকেল জন প্রতি ১শত টাকা দু জনে ২শত টাকা। সিএনজি জন প্রতি ১শত টাকা ৫ জনে ৫শত টাকা।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বশেষ ২৪ খবর