ঢাকা ১৫ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১লা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৩:০৮ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১৮, ২০১৮
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর সীমান্তের টেকেরঘাটে অবস্থিত চুনাপাথর খনিজ প্রকল্পের কোটি কোটি টাকা সরকারি যন্ত্রপাতি খোলা আকাশের নিচে থেকে মরিচা পড়ে নষ্ট হচ্ছে। কিন্তু দেখার কেউ নেই। প্রায় দুই যুগের বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে প্রকল্পের যাবতীয় কার্যক্রম। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে খনিজ প্রকল্পের পতিত ভূমি ও বাসা-বাড়ি দখল করে নিয়েছে প্রভাবশালীরা। ইতিমধ্যে খনিজ প্রকল্পের প্রায় ২০ কোটি টাকার যন্ত্রাংশ গায়েব হয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। তারা বলেন, স্থানীয় ভাঙাড়ী ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে চোরাই পথে প্রতিদিন এসব যন্ত্রপাতি ভারতে পাচার করা হচ্ছে। এতসবের পরও নিবর রয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। সরকারি সম্পত্তি রক্ষার্থে তাদের কোনরূপ দায়বদ্ধতা নেই বলে মনে হচ্ছে।
খনিজ প্রকল্প ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ২০০৭ সালের ২ অক্টোবর ৩১ জন কর্মকর্তা কর্মচারীকে ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরীতে বদলীর মধ্য দিয়ে বেজে ওঠেছিল প্রকল্পটির বিদায় ঘণ্টা। এরপর খনিজ প্রকল্প এলাকা রণাবেণের ১ জন কর্মকর্তা, ১ জন এপিসি, ১জন পিসি ও ১৮ জন আনসার সদস্য নিয়োগ করা হয়। তারা স্থানীয় প্রভাবশালীদের সাথে মিলে খনিজ প্রকল্পের রাস্তাঘাট অবৈধভাবে লিজ দেওয়া থেকে শুরু করে পাহাড়ী টিলা কেটে কয়লার ডিপু নির্মাণ, পতিত জায়গা দখলসহ খনিজ প্রকল্পে ১৭টির বেশী চুরির ঘটনা ঘটিয়েছে। সরকারের কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি আত্মসাৎ করে অনেকেই হয়েছেন আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ। এছাড়া রোদ-বৃষ্টিতে ভিজে খোলা আকাশের নীচে থেকে মরিচা পড়ে নষ্ট হচ্ছে আরো কোটি কোটি টাকার সম্পদ।
সরজমিন প্রকল্প এলাকা ঘুরে জানা যায়, দেশের সিমেন্টের চাহিদা পূরণ করতে ১৯৪০ সালে ছাতকে সুরমা নদীর তীরে আসাম বেঙ্গল সিমেন্ট ফ্যাক্টরী স্থাপন করা হয়। যা বর্তমানে ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরী নামে পরিচিত। তখন ভারত থেকে চুনাপাথর আমদানী করে সিমেন্ট উৎপাদনের কাঁচা মালের চাহিদা পূরণ করা হত। এরপর ১৯৬১ সালে ভূ-তত্ত্ব জরিপ চালিয়ে তাহিরপুর সীমান্তের ভাঙ্গারঘাট ও টেকেরঘাটে ৫টি কুপখনিতে প্রায় ১৩ কোটি ২৫ লাখ ৫৬ হাজার ৫ শত ৩৪ মেঃ টন চুনাপাথর মজুদ থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। এরপরে ১৯৬৫ সালে টেকেরঘাট খনিজ প্রকল্পের ৩শত ২৭একর জায়গার মধ্যে চুনাপাথর খনিজ প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করে ২টি কোয়ারী থেকে চুনাপাথার উত্তোলন করা হয়। কিন্তু অপরিকল্পিতভাবে চুনাপাথর উত্তোলন করার কারণে কোয়ারীতে গভীরতা বেশী হওয়ায় মাত্র ১৬ লাখ ৬৩ হাজার ৭ শত ৮৩ মেঃটন পাথর উত্তোলন করে লোকসানের অজুহাত দেখিয়ে বিসিআইসি চুনাপাথর উত্তোলন বন্ধ করে দেয়। সেই সাথে ভারতীয় সীমান্তে বাঁধার মুখে ভাঙ্গারঘাট-লামাকাটা কোয়ারীর উৎপাদনও বন্ধ হয়ে যায়।
তারপর ১৯৮৪সালে বিসিআইসির বোর্ড সভায় টেকেরঘাট চুনাপাথর খনিজ প্রকল্পটি ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরীর অর্ন্তভূক্ত প্রতিষ্ঠান হিসাবে চালু রাখার সিদ্বান্ত নেয়। ১৯৮৬সাল পর্যন্ত ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত রেখার ৩০ফুটের ভিতর থেকে চুনাপাথর উত্তোলনের চুক্তির পর ১৯৮৭সালে ভারতীয় বিএসএফ একশ’ ৫০ গজ দুর থেকে পাথর উত্তোলন করার চাপ প্রয়োগ করে। ফলে ওই কোয়ারীগুলো আবারও বন্ধ হয়ে যায়। চুনাপাথর উত্তোলনের কাচাঁমাল ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশের মধ্যে রয়েছে-৩টি ক্রেইন, ৩কলোমিটার ন্যারোগ্যাজ রেল লাইন, ২০লাখ টাকার সিøপারিং, ৫ কোটি টাকার মূল্যের ২টি জেনেরেটর, ২কোটি টাকা মূল্যের লোকাল ট্রলি ইঞ্জিন, ৫টি টিপিং টাব, বেকু হেলি, লোডার,ওয়ার্কসপ,ওয়েব্রিজসহ বিভিন্ন মূল্যবান যন্ত্রপাতি ও স্থাপনা।
ব্যবসায়ী সুমন দাস ও শংকরসহ অনেকেই জানায়, এই উপজেলার ৩টি শুল্ক ষ্টেশন র্দীঘ দিন ধরে ভারতীয় পরিবেশবাদী সংগঠনের দায়েরকৃত মামলার কারণে বার বার বন্ধ হয়। আবার কিছু দিন খোলা থাকার পর আবারও বন্ধ থাকে। এ কারণে প্রচুর চাহিদা থাকা ভারতীয় কয়লা আমদানী করতে না পারার ব্যবসায়ীরা মারাত্মকভাবে তির শিকার হচ্ছেন। আর বেকার হয়ে পড়েছে এর সাথে জড়িত হাজার হাজার দিনমজুর। চুনাপাথর খনিজ প্রকল্পটি চালু হলে বেকার সমস্যার কিছুটা হলেও সমাধান হত। এছাড়ার পর্যটন সমৃদ্ধ এই উপজেলার সর্বস্তরের সচেতন জনসাধারণের মাঝে তাহিরপুর উপজেলার এক সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পূর্বের ঘোষিত প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়নের বিষয়ে কার্যকর পদপে নেওয়ার দাবী জানান সবাই।
সাদেক আলী, সবুজ মিয়া, সুমনসহ স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু সম্প্রতি তাহিরপুর উপজেলা ট্যাকেরঘাটে ৮ই সেপ্টেম্ভর শনিবার এসেছিলেন। র্দীঘ দিন ধরে বন্ধ চুনাপাথর খনিজ প্রকল্পটি স্ব-চে দেখেছেন। কিন্তু আশানুরুপ কোন আশার বানী শুনতে পারি নি। এই বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলে গুরুত্ব দিয়ে এর সমাধান করলে ও র্দীঘ দিন ধরে বন্ধ থাকা চুনাপাথর খনিজ প্রকল্পটি চালুর বিষয়ে ব্যবস্থা নিলে হাজার শ্রমিক কাজের সুযোগ হবে।
অবৈধভাবে যন্ত্রপাতি বিক্রি, মরিচা পড়ে নষ্ট ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ছত্রছায়ায় কিছু সংখ্যাক লোক খনি প্রকল্পের সম্পত্তি অবৈধভাবে দখল করে আছে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরির ম্যানেজিং ডিরেক্টর (এমডি) শ্যামলেন্দু দত্ত বলেন, এই বিষয়ে আপনার যা প্রশ্ন তার উত্তর দেব। আপনি সরাসরি আমাদের অফিসে আসেন তার পর কথা বলেন। ফোনে বললে কি সমস্যা জানতে চাইলে তিনি ফোনে কথা বলতে পারব না বলে ফোন রেখে দেন।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক আব্দুল আহাদ বলেন, খনি প্রকল্পের পতিত জায়গা-জমি ও অব্যবহৃত যন্ত্রাংশ কিভাবে রা করা যায় সেবিষয়ে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা নেয়া হবে। খনিজ প্রকল্পের প্রায় ৩শত একর জায়গা আছে, এই এলাকায় আমাদের একটি মাস্টার প্ল্যান রয়েছে, সে আনুযায়ী কার্যকর পদপে নেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, শিল্পকারখানা তৈরী না করে জীববৈচিত্র ও টাঙ্গুয়ার হাওরসহ এই এলাকার পর্যটনশিল্পের সম্ভবনাকে সামনে ধরে তা রার পাশা পাশি পর্যটন বান্ধব শিল্প পার্ক ও পরিবেশ তৈরী করা যায় কি না (যা কক্সবাজারে তৈরী করা হয়েছে) সে আলোকে প্রস্তাবনা তৈরী করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। এতে করে এখানে সবার কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরী হবে।
সম্পাদক : জে.এ কাজল খান
স্বত্ত্ব: দৈনিক বিজয়ের কণ্ঠ (প্রিন্ট ভার্সন)
০১৭১৮৩২৩২৩৯
Design and developed by syltech