ঢাকা ১৬ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২রা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৭:৩০ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৯
নবীগঞ্জ সংবাদদাতা :::
নবীগঞ্জে দুই পুলিশ কর্মকর্তার উপর ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলাকারী শাহ সোহানুর রহমান মুসা। এলাকায় একাধাওে খুনী সন্ত্রাসী মাদক ব্যবসায়ী ও ছাত্রলীগ নেতা। নবীগঞ্জ পৌর এলাকার শহরতলী সালামতপুর গ্রামের খুর্শেদ মিয়ার ছেলে সে।
শাহ সোহানুর রহমান মুসা ছোট বেলায় মা-বাবার সাথে থেকে সৎভাইকে হত্যার মাধ্যমে অল্প বয়সেই অপরাধ জগতে প্রবেশ তার । পরে নবীগঞ্জের জনপ্রিয় ছাত্রলীগ নেতা হেভেন হত্যার সাথেও জড়িত হয় মুসা। মুসা সৎ ভাইকে হত্যা দায়ে জেল কেটে জামিনে বেরিয়ে এসেই এলাকায় সম্পূর্ন বেপরোয়া হয়ে উঠে। তাই সোহানুর রহমান মুসা নামটি শুনলেই যেন সাধারণ মানুষ আঁতকে উঠেন। প্রতিনিয়তই শহর এবং বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের ঘটনা সাথে জড়িত হয়ে সে। আর এসব অপরাধ অপকর্মের শেল্টার গেতে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত হয়।
গত ২০১৪ সালে নবীগঞ্জে আধিপত্য বিস্তার করতে গিয়ে উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা হেভেন চৌধুরীকে দিবালোকে হত্যা করে। আর এ হত্যাকান্ডের মাধ্যমে আবারো শহরসহ হবিগঞ্জ জেলাজুড়ে আলোচনা চলে আসে সে। মুসা নবীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক কমিটির সহ-সভাপতি দায়িত্ব পালন করছিল বলে দাবি করে। কিন্তু দলের নেতৃবৃন্দ নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মুসা কোন সময়ই দল করত না। সাবেক এক ছাত্রলীগ নেতার আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে সে সাবেক কমিটির সহ-সভাপতি পদ পেলেও তৎকালীন সেই কমিটি জেলা কমিটির অনুমোদন পায়নি। সে আগে এবং পওে কোন সময়ই রাজনীতির সাথে জড়িত নয় এবং ছিল না। একজন সন্ত্রাসী, মোটরসাইকেল চোর, চাঁদাবাজ, ডাকাত এবং মাদক ব্যবসায়ী বলেই সবাই তাকে চিনে। নবীগঞ্জে দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী মুসা নামেই পরিচিতি তার।
আলোচিত এই মুসার বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা মামলাসহ বহু মামলা রয়েছে। সে চোরাই মোটর সাইকেল এবং গাড়ী বিক্রির সিন্ডিকেটের সাথেও জড়িত। বিভিন্ন গুরুতর অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি পুলিশ ও র্যাবের যৌথবাহিনী সন্ত্রাসী মুছার পুরো বাড়ি ঘেরাও করে। রাত প্রায় সাড়ে ১২ টা থেকে পৌনে ২ টা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় যৌথ বাহিনী। এ সময় মুছার স্বীকারোক্তিতে ৫৬৭ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়।
এক বছর পূর্বে মুসা দিন দুপুরে নবীগঞ্জ শহরের ওসমানী রোডের হীরা মিয়া গার্লস স্কুলের সামনে অস্ত্র দেখিয়ে ৩টি দোকানে হামলা, ভাংচুর, লুটপাটসহ ৩টি মোটর সাইকেলসহ ৭ লাখ টাকা মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। এ ঘটনার কয়েক দিন আগে গত ১২ ডিসেম্বর বিকালে মুসা তার গ্রামের শ্রমিক নেতা হেলাল আহমদের বাড়ির চলাচলের সীমানায় বেড়া দিয়ে ওই পরিবারের চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে দেয়।
এ বিষয়ে অভিযোগের প্রেক্ষিতে এসআই সুজিত চক্রবর্তীর নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে অভিযোগের তদন্ত করতে গিয়ে মুসা ও তার পরিবারের সদস্যদের রোষানলে পড়ে। এক পর্যায়ে মুছাকে গ্রেফতারের চেষ্টা করলেও তার হুমকি ধমকিতে ফিরে আসতে বাধ্য হয় পুলিশ।
মুছার সাম্প্রতিক সময়ের এসব সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে নবীগঞ্জ শহরে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। স্থানীয় লোকজন জানান, মুছা এখন শহরের একটি আতঙ্কের নাম। অভিযোগ রয়েছে, মুছা তার চাচা নিজাম উদ্দিনের বাড়িঘর জোরপূর্বক দখল, ফিশারির মাছ লুট, কয়েক লক্ষাধিক টাকার গাছ জোরপূর্বক কেটে বিক্রি করে। এর প্রতিবাদ করায় ধারালো ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে তার চাচাদের হুমকি দেয়। প্রাণের ভয়ে তারা বাড়িঘর ছাড়া রয়েছেন। গত বছর ইয়াবাসহ শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশ তাকে আটক করে।
সবশেষ গত ১২ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যায় তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী মুসাকে ধরতে শহরের সালামতপুর এলাকায় ব্র্যাক অফিসের কাছে তার দোকান যান নবীগঞ্জ থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) উত্তম কুমার ও এসআই ফখরুজ্জামান। এ সময় মুসা দোকান থেকে বেরিয়ে সে ও তার স্বজন এবং সহযোগীরা দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা আহত দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে উদ্ধার করে নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। গুরুতর অবস্থায় ইন্সপেক্টও (তদন্ত) উত্তম কুমারকে সিলেটে পাঠানো হয়।
এ ঘটনায় পুলিশ বৃস্পতিবার রাতেই মুসার মা এবং ৩ বোনকে আটক করে। আটককৃতরা হলেন, মুসার মা সামছুন্নাহার (৫০), বোন মৌসুমী আক্তার (২৬), শাম্মী আক্তার (২২) ও তন্নী আক্তার (১৯)। এ সময় মুসার বাড়ী থেকে একটি গাড়ী ও একটি মোটর সাইকেল জব্দ করা হয়।
পরে শুক্রবার দুপুরে এই ঘটনায় এসআই ফিরুজ বাদী হয়ে নবীগঞ্জ থানায় ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও ৭/৮জনকে আসামী করে পুলিশ এ্যাসল্ট মামলা করেন। মামলাটি রেকর্ড হওয়ার পর মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব প্রদান করা হয় এসআই সামছুল ইসলামকে।
মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেন নবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইকবাল হোসেন। ওসি ইকবাল হোসেন জানান, দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে কুপিয়ে আহতের ঘটনায় জড়িত থাকায় বৃহস্পতিবার রাতেই তাদেরকে আটকের পর রাতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। শীর্ষ সন্ত্রাসী মুসাকে গ্রেফতারে রাতভর চিরুনি অভিযান পরিচালনা করে পুলিশ। মুসাকে ধরতে এই অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।
তিনি আরও জানান, সন্ত্রাসী মুসা ও তার স্বজনদের আক্রমণে পুলিশের দুই কর্মকর্তা আহত হওয়ার ঘটনা জানতে পেরে হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্লা বৃহস্পতিবার রাতে নবীগঞ্জে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। আহত এসআই ফখরুজ্জামানের অবস্থা উন্নতি হলেও এখনো ইন্সপেক্টর(তদন্ত) উত্তম কুমার সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তারও অবস্থার উন্নতি হচ্ছে বলে জানান তিনি।
সম্পাদক : জে.এ কাজল খান
স্বত্ত্ব: দৈনিক বিজয়ের কণ্ঠ (প্রিন্ট ভার্সন)
০১৭১৮৩২৩২৩৯
Design and developed by syltech