খুলেনি শ্রমবাজার : প্রতারণা আর ধরপাকড় ছিল আলোচনায়

প্রকাশিত: ১২:১০ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১, ২০২০

খুলেনি শ্রমবাজার : প্রতারণা আর ধরপাকড় ছিল আলোচনায়

ডেস্ক প্রতিবেদন : মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেওয়ার ঘোষণা কয়েকবার দেওয়া হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। দীর্ঘ এক বছরের বেশি সময় ধরে গুরুত্বপূর্ণ এই শ্রমবাজারে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নিতে নিষেধাজ্ঞা এখনও বহাল আছে। মূলত অতিরিক্ত অভিবাসন ব্যয়, নামমাত্র কোম্পানিতে চাকরির নামে প্রতারণার কারণেই সে দেশের সরকার বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেওয়া।

দালালদের কারণে একজনকে মালয়েশিয়ায় আসতে গুনতে হয় সাড়ে তিন থেকে চার লাখ টাকা। মূলত অতিরিক্ত অভিবাসন ব্যয় ঠেকাতে সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করে বাংলাদেশকে একটি বার্তা দিয়েছে সে দেশের সরকার। মালয়শিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী বারবার বলেছেন, বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নিতে আমাদের কোনো সমস্যা নেই বরং আমরা বাংলাদেশিদের কঠোর পরিশ্রমের সাফল্য কামনা করি। আরও জানানো হয়, বাংলাদেশিদের একশ্রেণির অভিবাসন প্রত্যাশী মালয়েশিয়ায় আসতে তাদের সহায় সম্বল বিক্রি করতে হয় এবং সুদে টাকা নিয়ে মালয়েশিয়ায় আগমন করে। দালালদের ‘চমকপ্রদ’ বেতনের আশ্বাসের কারণেই এমনটি ঘটে।
মালয়েশিয়ার নামবিহীন কোম্পানিতে শত শত বাংলাদেশি এনে বেকার অবস্থা এবং মানবিক সঙ্কটের কারণে আলোচনায় ছিল মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার। শুধু নতুন শ্রমিক রফতানিতেই ছিল না দুর্নীতি, বরং সে দেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের ২০০৬ সালে মালয়েশিয়া সরকারের বৈধ প্রকল্পে (রিহায়ারিং) প্রোগ্রামে অংশ নিয়ে বৈধতা না পেয়ে অবৈধ হয়ে পড়ে প্রায় তিন লাখ বাংলাদেশি। বৈধতা না পাওয়া বাংলাদেশিদের জনপ্রতি খরচ হয়ে যায় এক থেকে দেড় লাখ টাকা। বৈধতা তো দূরের কথা নিঃস্ব হয়ে মালয়েশিয়া সরকারের সাধারণ ক্ষমায় দেশে ফিরেছে তারা। এ ছাড়াও মালয়েশিয়ার অভিবাসন বিভাগের কাছে আটক হয় প্রায় অর্ধ লাখ বাংলাদেশি। অনেকে দেশে ফিরে গেলেও এখনও একটি টিকিটের অপেক্ষায় ডিটেনশন ক্যাম্পে হাজারখানেক বাংলাদেশি অপেক্ষা করছেন। এ ছাড়াও ছিনতাই কিডন্যাপের অভিযোগে গ্রেফতার এবং পুলিশের হাতে নিহত হয়েছেন কয়েক বাংলাদেশি।
সর্বশেষ সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও শেষ মুহূর্তে মালেশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফরের কথা থাকলেও বাতিল করে ভারত সফরে যায়। সেই থেকে শ্রমবাজার উন্মুক্ত নিয়ে আর কোনো কথা বলেনি মালয়েশিয়া।
প্রসঙ্গত, ২০১২ সালে জিটুজি (গভর্নমেন্ট টু গভর্নমেন্ট) পদ্ধতিতে কর্মী পাঠাতে চুক্তি করে মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশ। ওই প্রক্রিয়া সফল না হওয়ায় ২০১৬ সালে পাঁচটি খাতে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের সমন্বয়ে ‘জিটুজি প্লাস’ পদ্ধতিতে কর্মী নিতে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে দুদেশ। পাঁচ বছর মেয়াদি এই চুক্তির আওতায় লোক পাঠানোর অনুমতি দেওয়া হয় ১০টি জনশক্তি রফতানিকারক এজেন্সিকে। কিন্তু একটি সংঘবদ্ধ চক্রের অনৈতিক ব্যবসা পরিচালনার কারণে বাংলাদেশের জন্য মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার ২০১৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে বন্ধ করে দেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ।
বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য বন্ধ থাকা মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার পুনরায় উন্মুক্ত করতে দেশটির সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যেতে থাকে সরকার। তারই অংশ হিসেবে গত ৬ নভেম্বর সরকারি সফরে মালয়েশিয়া যান প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমদ।
বিদেশে বাংলাদেশি প্রতি চারজনের তিনজন কাজ করছেন মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, কাতার ও মালয়েশিয়ায়।
মালয়েশিয়ায় বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি কর্মী কাজ করছেন। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর ২০১৩ সালে দু’দেশের সরকারি পর্যায়ে অর্থাৎ জিটুজি পদ্ধতিতে বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি নিতে শুরু করে মালয়েশিয়া। মূলত ১০ রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে জিটুজি পদ্ধতিতে মালয়েশিয়ায় লোক নেওয়া শুরু হলেও শুধু প্লান্টেশন প্রজেক্টে কাজ করতে আগ্রহ কম থাকায় জনশক্তি রফতানির হার ছিল কম। পরে মালয়েশিয়া জনশক্তির জন্য বাংলাদেশকে তাদের ‘সোর্স কান্ট্রি’র তালিকাভুক্ত করে। ফলে সেবা, উৎপাদন, নির্মাণসহ অন্যান্য খাতেও বাংলাদেশি কর্মী নেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়।
এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের শ্রমশক্তি রফতানির সঙ্গে যুক্ত কিছু সুযোগ সন্ধানী এজেন্সি মালয়েশিয়ার উচ্চ পর্যায়ের সহযোগিতায় নিয়মবহির্ভূতভাবে বাড়তি অর্থ আদায় করে কর্মী পাঠানো শুরু করে।
ক্ষমতাচ্যুত সাবেক সরকারের সময় বাংলাদেশ সরকারের তরফে সকল এজেন্সিকে লোক প্রেরণের ক্ষেত্রে সুযোগ দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হলেও কোনো প্রকার ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উল্টো ১০ কোম্পানির সুযোগ-সুবিধাকে বেশি করে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। ফলে ৪০ হাজার টাকার স্থলে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত আদায় করে ভাগবাটোয়ারা করা হয়েছে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বশেষ ২৪ খবর