সুনামগঞ্জে বাঁধ ভেঙে হাওরে পানি : কাটা ধান নিয়ে দুশ্চিন্তায় দুই উপজেলার কৃষি পরিবার

প্রকাশিত: ৫:১০ অপরাহ্ণ, মে ৫, ২০১৯

সুনামগঞ্জে বাঁধ ভেঙে হাওরে পানি : কাটা ধান নিয়ে দুশ্চিন্তায় দুই উপজেলার কৃষি পরিবার

সুনামগঞ্জ সংবাদদাতা
ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’র প্রভাবে অতিবৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের কয়েকটি ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করছে। প্লাবিত হচ্ছে হালির হাওর, খরচার হাওর, লালু গোয়ালা, গোরমা, মাটিয়ান হাওর, বেহেলি, শনির হাওরসহ কয়েকটি হাওর। এতে কাটা ধান গোলায় তুলতে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন দুই উপজেলার কয়েক হাজার কৃষি পরিবার।

স্থানীয় কৃষকগণ জানান, শনিবার রাত ১২টায় জামালগঞ্জ উপজেলার বেহেলী ও রহমতপুর এলাকা দিয়ে শনির হাওরে এবং বদরপুর ও নিতাইপুর এলাকা দিয়ে হালির হাওরে পানি প্রবেশ করার ফলে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিতের আশঙ্কা রয়েছে। তারা অভিযোগ করে বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি ও স্থানীয় ইউপি সদস্য মনছার নেতৃত্বে বাঁধটি মজবুত করে তৈরি না করে শুধুমাত্র বালু দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। যার ফলে বাঁধটি পানির চাপে সহজ ভেঙে গেছে।

রোববার সকালে প্লাবিত এলাকা পরিদর্শনে আসেন জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রিয়াংকা পাল। এ সময় তিনি বলেন, বাঁধ নির্মাণে কোন গাফিলতি হয়েছে প্রমাণ পাওয়া গেলে কোন ছাড় দেওয়া হবে না। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সবার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি হুশিয়ারি উচ্ছারণ করেন।

হালির হাওরের পিআইসি কমিটির সভাপতি মনেছা জানান, আমি সঠিকভাবে কাজ করেছি। দুই থেকে তিন ঘণ্টার মধ্যে বৌলাই নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গিয়ে বাঁধ ভেঙে গেছে।

হাওরপারের বাসিন্দারা জানান, ঘূর্ণিঝড় ফুীর প্রভাবে সীমান্তের ওপারে ও সুনামগঞ্জে ভারী বর্ষণ হয়। এ কারণে মেঘালয় পাহাড় থেকে পাহাড়ি ঢল যাদুকাটা, সুরমা নদী দিয়ে নেমে এসে বৌলাই, রক্তি, পাটলাইসহ কয়েকটি নদী দিয়ে পানি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায় এবং উজান থেকে নেমে আসা পানি ভাটির দিকে প্রবল বেগে ধাবিত হতে থাকে। এতেই হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের ডিজাইন লেভেল অতিক্রম করে পানি কয়েকটি হাওরে প্রবেশ করে। আও কয়েকটি বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশে করে। খবর পেয়ে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে ছুটে যাই। গিয়ে দেখি নদীর পানি ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে ও উপচে হাওরে প্রবেশ করছে। এতো বেশি পরিমাণ জায়গা দিয়ে পানি ঢুকছে যে, তা কোনোভাবেই আটকানো সম্ভব নয়। হাওর তলিয়ে যেতে ৫-৭ দিন সময় লাগবে। হঠাৎ করে বাঁধ উপচে পানি ঢোকায় এই অঞ্চলের কৃষকরা অনেকটা বিপদে পড়েছেন।

কৃষকরা জানান, হাওরে পানি প্রবেশ করায় এখনও খলায় ধান রয়েছে। সেই সাথে রয়েছে খড়ও। ধান ও খড়গুলোর আর শুকানো সম্ভব হবে না। এতে ধান ও খড় দুটুই পঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কাটা ধান গোলায় তুলতে বেশ চিন্তায় রয়েছেন বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।

বেহেলী ইউপি চেয়ারম্যান অসীম তালুকদার ও সদস্য খোকন মিয়া বলেন, কয়েকদিনের বৃষ্টির কারণে মানুষ ধান খড় কোনোটাই শুকাতে পারেন নি। সেগুলো শুকানো ও মাড়াইয়ের কাজসহ খড় শুকানো নিয়ে চিন্তা করছেন কৃষকগণ। এখন পানি হাওরে প্রবেশ করায় তাদের শঙ্কাটা আরও বেড়ে গেলো। বিশেষ করে ধান ও খড় বেশিদিন ভেজা থাকলে সেগুলো পঁচে যাওয়া নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তারা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপপরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল মন্নাফ বলেন, তাহিরপুর, ধর্মপাশা, শাল্লা, দিরাই, জগন্নাথপুর, জামাগলঞ্জ এসব এলাকার হাওরের শতভাগ জমির ধান কাটা হয়ে গেছে। তাহিরপুর ও জামালগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা তাকে জানিয়েছেন, হালির হাওর ও শনির হাওরের শতভাগ জমির ধান কাটা হয়ে গেছে। এখন কিছু জমি রয়েছে যেগুলো অবস্থান বেশ উচু এলাকায়। হাওরে পানি প্রবেশ করায় ধানের কোনও ক্ষতি হবে না। দেরিতে রোপণ করায় পাকতে দেরি হচ্ছে বলে কিছু ধান কাটা বাকি রয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, চলতি বোরো মওসুমে জামালগঞ্জ উপজেলায় ২৪ হাজার ৬৬০ হেক্টর ও তাহিরপুর উপজেলায় ১৮ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে ধান চাষ করা হয়। হালির হাওর ও শনির হাওরের ২০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষ করা হয়েছিল। বেশী ভাগ ধান কাটা হয়েছে। এ পর্যন্ত হাওর এলাকায় মোট এক লাখ ৭২ হাজার হেক্টর জমির মধ্যে এক লাখ ৬১হাজার হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে। আর হাওর ছাড়া মোট ৫২ হাজার হেক্টর জমির মধ্যে কাটা হয়েছে ২৬ হাজার হেক্টর জমির ধান।

সর্বশেষ ২৪ খবর